বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
প্রায় বছর আটেক আগের কথা। সেদিন ছিল শুক্রবার। তখন শুক্রবারেও আমাকে অফিস করতে হতো, তবে হাফ। একটু দেরী হওয়াতে জুম্মার নামাজটা বাসায় এসে ধরতে পারলাম না।
আমি রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলাম। সব মসজিদেই তখন নামাজ হচ্ছে। রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা। যখন আমার রিক্সা প্রায় বাসা থেকে এক কিলোমিটার দুরে। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন ডাক দিলো।
আমি একটু পিছনে ফিরে তাকালাম। একজন আমাকে সালাম দেয়ার ভঙ্গিতে মাথার উপর হাত তুলে সম্ভাসন জানালো। আর বলল, "বস আছেন কেমন?" আমি রিক্সা ওয়ালার পিঠে হাত দিয়ে থামতে বললাম। আর এটাই হলো আমার প্রথম ভুল। দেখলাম লোকটি আমার দিকে মোটামুটি দৌড়ে আসলো।
কেমন আছেন? অনেক দিন পরে দেখা? ভালো আছেন তো? হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল। সে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো এবং হাত ধরেই রইল। আমি হাসি হাসি মুখে তার সাথে কথা বলছি আর মনে করার চেষ্টা করছি, লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছি?
সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর আমি রিক্সার উপরে বসে আছি। রিক্সাওয়ালা পিছন ফিরে আমাদের কথা শুনছে।
সে বেশ হাসছে আর বলছে, আপনার মাথায় আসলে কিচ্ছু নেই, এই তো সেদিনে কথা ভুলে গেলেন? মনে করার চেষ্টা করেন তো দেখি পারেন কিনা?
আমি বেশ দোটানায় পড়ে গেলাম, আমিও সৌজন্যবোধক হাসি হেসে বললাম, না তো ভাই মনে করতে পারছিনা।
সে বলল, আচ্ছা বাদ দেন, এখন বাসা কোথায় নিয়েছেন? বাসার সবাই ভাল আছে তো? আচ্ছা আপনার ঐ খালাতো ভায়ের খবর কি?
আমি তখন আমার বাসার জায়গার নাম বললাম। আরো চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম যে আমার খালাত ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে। নিজেই নিজেকে মনে মনে দোষ দিতে লাগলাম যে এতটাই মনভুলো হয়ে গিয়েছি আমি? এভাবে আরো অনেক কথা হলো কিন্তু সে কিন্তু আমার হাত ছাড়ছে না। মাঝে মাঝে একটু চাপ দিচ্ছে।
সে বলল, সেদিন তো বাবুর চোখ তুলে দিলাম।
এই মুহুর্তে কথার হঠাৎ মোড় অন্যদিকে নিলো, আমি একটু হতচকিত হয়ে গেলাম, ভ্রু কুঁচকে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, কার চোখ তুললেন?
ও বলল, আরে বাবুরে চিনেন না, আরে ঐ যে আওয়ামীলীগের ক্যাডার। ঐ যে মোড়ের দোকানে আড্ডা দেয়।
আমি চিন্তা করলাম, আওয়ামীলীগের ক্যাডারের চোখ তুলে নিয়েছে, না জানি এই লোক কত বড় ক্যাডার (তখন ছিল আওয়ামীলীগের আমল)। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু সে হেসে হেসেই কথা বলছে।
রাস্তায় চলাচলকারী কেউ বুঝবে না যে, আমাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। দেখলাম, রিক্সাওয়ালাও একটু নড়েচড়ে বসলো।
সে বলল, আমার রিভলবারের একটা গুলি কেনা লাগবে কিছু টাকা দেন তো, আজকে বিকালে একটারে ফালানো লাগবে।
আমি কি বলবো, ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম, ভাই আমার কাছে তেমন কিছু নাই।
দুই আড়াইশ হবে। ওটা নিয়ে যান।
লোকটি বলল, আরে মিয়া দেখেন, ভয় পাইছে। দুর মিয়া ফাইজলামি করতেছি। দেন দেন কিছু টাকা দেন তো।
আমার কোমরের রিভলভারে এখন একটা গুলিই আছে আরেকটা লাগবে তো তাই চাচ্ছি।
সত্যি কথা বলতে কি? আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ সে প্রথম থেকেই আমাকে সাইকোলজিক্যালি উইক করে ফেলেছে। আমি তাকে দিয়ে দিলাম দুইশত টাকা। আর ভাগ্য ভাল আমি রিক্সায় বসে থাকার জন্য আমার বুক পকেটে রাখা মোবাইলটিও দেখেনি।
তাহলে তো ওটাও যেত।
ও বলল, ঠিক আছে ভাইজান আজকে আর না অন্যদিন আবারো কথা হবে, খোদা হাফেজ। দেখলাম সে চলে গেল এবং দ্রুত একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো।
খুব অল্প সময়ের ঘটনা এটি। আমি রিক্সাওয়ালাকে বললাম, ভাই চলেন।
আর কি? খাইলাম পুরা ধরা। আমাকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।