রুমি, সিমি ও স্বপ্না যে পথে হেটেছিল ঠিক সেই পথে পা বাড়িয়েছে মুনমুন ও নাজমুন। এই সুন্দর পৃথিবী থেকে তাদের চলে যাওয়ার একমাত্র কারণ বখাটেদের হত্যা, এসিড নিপে ও ধর্ষণের হুমকি। এসবের শিকার হয়ে সমাজে যেন বেঁেচ থাকতে না হয় সেজন্য নিজেই নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়েছে তারা। এই পৃথিবীর আলো বাতাস তারা এখন না নিলেও নিচ্ছে ঐ বখাটেরা।
মেধাবী ছাত্রী নাজমুননাহার (১৮) আশা ছিল উচ্চ শিায় শিতি হয়ে পরিবারের দরিদ্রতা ঘোচাবে।
মঙ্গলবার এইচএসসি পরীার ফরম পূরণ করে যথারীতি। কিন্তু সব আশা তার পরাভূত হল এলাকার বখাটেদের উৎপীড়নে। বখাটেদের উৎপাত এতটাই চরমে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত পরিবার পরিজন আর সহপাঠীদের কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আÍহননের পথ বেছে নেয় সে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোলা গ্রামের মাহবুবুর রহমানের কন্যা নাজমুন। স্থানীয় নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী সে।
এবার এইচএসসি পরীা দেয়ার কথা ছিল তার। বড় ভাই ভ্যানচালক কামালের অভিযোগ, কলেজে ভর্তির পর থেকেই একই গ্রামের সোহরাব মাস্টারের বখাটে ছেলে সাজ্জাদ ওরফে কালা কলেজে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে তাকে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সঙ্গীদের নিয়ে তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে এসিড মারা এমনকি তুলে নেয়ারও হুমকি দেয় সাজ্জাদ ওরফে কালা। ভয়ে অনিয়মিত হয়ে যায় নাজমুনের কলেজে যাওয়া।
মাসখানেক আগে দিনদুপুরে নিজ বাড়িতে নাজমুন যখন পড়ালেখা করছিল স্থানীয় তাবুর, জুনু, রুনুসহ ৬/৭ সন্ত্রাসীকে নিয়ে কালা নাজমুনের পড়ার ঘরে ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে অপহরণের চেষ্টা করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
বখাটেরা প্রভাবশালী হওয়ায় সালিশ-দরবার বসানো হলেও এ ঘটনার কোন বিচার হয়নি। এ ঘটনায় প্তি হয়ে ওই সন্ত্রাসীরা এর দু’দিন পর আবারও নাজমুনকে অপহরণের চেষ্টা করে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নাজমুন বড় বোন মনিরার সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় টিউবওয়েলে পানি আনতে গেলে ওঁৎ পেতে থাকা এসব সন্ত্রাসী নাজমুনকে আবারও অপহরণের চেষ্টা করলে দু’বোনের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
লাঞ্ছনা, অপমান আর উৎপীড়নে দিশেহারা নাজমুন নিজের এবং তার পরিবারের ইজ্জত রার আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে আÍহননের পথ বেছে নেয়। ২৩ জানুয়ারী ভোরে হতভাগী নাজমুন কীটনাশক পান করে আতœহত্যা করে।
মেধাবী স্কুল ছাত্রী মুনমুন এবার অষ্টম শ্রেনী থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে নবম শ্রেণীতে উঠেছে। অনেক আশা করে জুনিয়র বৃত্তি পরীাও দিয়েছিল অথচ সে পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেতে পারল না। বখাটেরা উত্ত্যক্ত করায় জয়পুর হাটের আক্কেল পুর সোনামুখি গ্রামের স্কুলছাত্রী মাহফুজা আখতার মুনমুন (১৪) আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
গত ১৮ জানুয়ারী ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। মুনমুন জয়পুর হাটের আক্কেলপুরের সোনমুখী পাইলট হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই পার্শ্ববর্তী শান্তা গ্রামের বিপ্লব দেলোয়ার ও ডলার প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতে। কিছুদিন পুর্বে একটি মোবইল ফোন উপহার দেয়। বিপ্লবের দেয়া মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিলে প্তি হয়ে উঠে সে।
এবং প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করার কারণে এসিড নিক্ষেপের হুমকি দেয় বখাটেরা। আর তাই নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভিয়ে দেয় মুনমুন।
রুমি,সিমি, স্বপ্না, মুনমুন ও নাজমুন যে পথে হেটেছে সে পথে কি আরও হাটবে অনেক! একটা প্রশ্ন থেকে যেথেই পারে। কারণ বখাটেদের বখাটে পনা তো থেমে নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।