-
বছরের একটি দিনকে ঘিরে মাতামাতি করার পক্ষে আমি কোন কালেই ছিলাম না। হৃদয়ের কাছের ঘটনা গুলি মনে রাখতে চাই প্রতি ক্ষন প্রতি বেলা। পর মূহূর্তেই নিজেকে শান্তনা দিই এই বলে - যে একটা দিনকে চিহ্নিত করে না রাখলে জীবনের ছুটে চলাতে হারিয়ে যেতে পারে অনেক গভীর অনুভূতির বিষয় গুলি।
...যথেষ্ঠ ভুমিকা হলো।
আজ ১৫ই জুন।
বাবা দিবস।
এই দিনে স্থির করলাম আমার বাবাকে নিয়ে কিছু লিখব।
পৃথিবীতে এমন কলম নেই যা দিয়ে বাবা -মা সম্পর্কে কিছু লিখে শেষ করা যাবে। আর তাই আমি আমার স্মৃতি থেকে আমার বাবা নিয়ে কিছু বলবার বৃথা চেষ্টায় মগ্ন হলাম।
বাবার মুখে আমার সেই ছোট্ট বেলার একটা ঘটনা এত বার শুনেছি যে মনে হয় আমি তা নিজের চোখেই দেখেছি।
বাবা সরকারী চাকুরে ছিলেন। বদলীর চাকরীতে তিনি তখন চট্টগ্রাম থাকতেন। প্রতি পাক্ষিকে তিনি একবার সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকা আসতেন। আমি আর মা আমার নানী বাড়ী এলিফ্যান্ট রোডে আছি। আমার বয়স বুঝি তখন দুই ছুঁই ছুঁই করছে।
এক সাপ্তাহিক ছুটির সকালে মা আমাকে সরিষার তেল মাখিয়ে দিয়েছেন গোসল করাবেন বলে। আমি সে সময় গোসল করার মুডে নাই।
আর তাই সারা বাড়ীময় দৌড়েদৌড়ে মা কে অস্থির করে তুলছি।
এরকম সময়ই হয়তো বাবা বাড়িতে এসে ঢুকেছেন।
মহা আনন্দে আমি বাড়ীর এ ঘর থেকে ও ঘরে ছুটে বেড়াচ্ছি।
আমি জন্মদিনের পোষাকে (!) বীরের মত বাইরের ঘরে ঢুকেই বুঝলাম বাইরে লোক আছে। তাই আবার উল্টা ঘুরে দে দৌড়।
কেননা ১৫ দিন পর পর দেখে দেখে আমি নাকি ঐ বয়সে প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি বাবার চেহারা।
বাবা ক্লান্ত ছিলেন বলেই হয়তো বসার ঘরে বিশ্রামের জন্য বসলেন।
কিছু বাদে আমার ছোট্ট মাথায় যখন এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো - আরে এটা বাবা না ! আমি আবার বসার ঘরের কাছে এসে পর্দার আড়াল থেকে দেখে দেখে নিশ্চিত হলাম যে - হুম্ম ।
যা ভেবেছি তাই ঠিক।
বাবা আড়চোখে দেখছিলেন আমার সেই অবুঝ দুষ্টামি।
আর আমিও যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বেআক্কেল এর মত ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে বা...বা ... বলে চিৎকার করে বসার ঘরে দৌড়ে ঢুকে বাবার কোলে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম।
এই হলো ঘটনা। এখনও এই ঘটনা সুযোগ পেলে বাবা সবাইকে বলে বেড়ান।
আমাকে বলে রেখেছেন - আমার ছেলেকেও নাকি বলবেন !
এরপর দিনে দিনে বড় হয়েছি।
প্রতি ক্ষনে ক্ষনে বাবা-মা’র ভালবাসায় বেড়ে উঠেছি পৃথিবীর আলো বাতাসে।
আজ যা হয়েছি বা আগামীতে যা হবো ... সব কিছুর মূলেই রয়েছেন বাবা মা।
জ্ঞান হবার পর থেকে ভেবেছি বড় হলে আমি বাবার মত হবো।
আমার সৌভাগ্য বাবা যে পেশায় ছিলেন তার দেখানো পথে আজ আমিও সেই পেশায়।
সে জন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া।
এর মধ্যে অনেকে আছেন যারা বাবাকেও দেখেছিলেন - আজ আমাকে দেখছেন। সবাই তো আর সব সময় খুশী থাকেন না। অনেকের অনেক লুকানো ক্ষত থাকে হয়তো। বাকিরা কিন্তু আগ্রহ ভরে আমায় স্নেহ করেন।
পিঠ চাপড়ে বলেন - ‘বাপ কা বেটা’ ।
...এই কটা মাত্র শব্দ।
কিন্তু ,কি ভীষন ভাল লাগে যে আমার ! গর্বে আমার বুকটা ফুলে ফেঁপে শার্ট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায় যেন। চোখের কোনে চিকচিক করে ওঠে কিছু আনন্দ অশ্রু।
মাঝে মধ্যে মিটিং - সিটিং এ হাল্কা অফ টপিক কথাবার্তা হয়।
অনেকে খুঁজে ফেরেন আমার মাঝে বাবার ছায়া।
অসম্ভব ভাল লাগে তখন আমার।
আর বিনীত ভাবে বলি-
‘ আমার মাঝে যতটুকু ভালো আপনারা দেখছেন তা পেয়েছি আমার বাবা থেকে - তা আমার অহংকার। আর যতটুকু কালো আপনারা দেখেছেন বা দেখবেন তা একান্তই আমার। সে জন্য আমি বাবার কাছে ক্ষমা চাইছি।
আমি তার সঠিক দীক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি। বাবা আমাকে মানুষ হতে বলেছেন। মানুষ হওয়ার চেষ্ঠা আমরন করে যাব আমি...। ‘
বাবা, আজ আমি অনেক দূরে।
ফোনে কথা হলো কিছুক্ষন আগে।
ভাগ্যিস তুমি দেখোনি আমার চোখ চিকচিক করছে।
গলাটা ধরে আসতেই তুমি হয়তো ঠাহর করতে পেয়েছো তোমার ছেলের মনের কথা। তাই বলেছো - ‘I am proud of you my son.’
থ্যাংক্স বাবা। আমি তোমায় যেন সত্যিকারের গর্বিত করতে পারি সেই আমি সেই চেষ্টাই করবো আজীবন।
বাবা , আমি মনে প্রানে বাপ কা বেটা হতে চাই...।
তুমি ভাল থেকো। তুমি ... মা ...তোমরা সবাই ভাল থেকো। অনেক ভাল।
বাবা দিবসে বাবা তোমাকে এরকম একটা লেখা না - একটা বিশেষ দিন না.....বরং আমার প্রিয় বাবা- মা তোমাদের দুজনকেই জানাই লক্ষ ...কোটি ফুলের শুভেচ্ছা। আর উৎসর্গ করি -
আমার সব কিছু...
আমার যা যা আছে... আর আমার যা নাই...!
ছবি সুত্রঃ Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।