আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয় নেদারল্যান্ডস্, জয় নুতন দিনের

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। আমার আবার বদস্বভাব আছে। খেলা দেখার সময় তালি দিয়ে হাত লাল করে ফেলি। ৯২ মিনিটের গোলের তালিতে এখনও হাত জ্বলছে। একটাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে - জয় নেদারল্যান্ডস্, জয় নুতন দিনের।

যারা খেলা খুব একটা দেখেন না, তাদের জন্য বলছি, নেদারল্যান্ডস্ বনাম ফ্রান্সের খেলার ফলাফল ৪ - ১। জয়ী দল কে, সেটা আসা করছি অনুমান করে নিয়েছেন এতক্ষনে। গত খেলায় ইটালীকে উড়িয়ে দিয়ে প্রত্যাশার পারদ যেখানে তুলে দিয়েছিল ডাচরা, আজকের খেলায় যেন সুচনাটাই হয়েছিল সেখান থেকে। প্রায় দশ মিনিটের মাথায় লিডটা নিয়ে যে খেলায় প্রাধান্য বিস্তার শুরু করলো, সেটা বজায় থাকলো ৯২ মিনিটে করা শেষ গোলেও। মাঝে ফ্রান্স চেষ্টা করলো অনেক, তবে গোলের খেলা ফুটবল; যতক্ষন সেটার দেখা পাচ্ছ না, সব চেষ্টাই বৃথা।

একবার ভেবেছিলাম ফ্রান্সের দূর্ভাগ্য (খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে), তবে এখন মনে হচ্ছে, এটা কি আসলে দূর্ভাগ্য? ৪ -১ গোলে হারা দলকে আর যাই হোক দূর্ভাগ্যে তাড়া করতে পারে না। খেলার একটা পর্যায়ে দেখলাম ফরাসী কোচ এ্যালেনকাকে ওয়ার্ম আপ করাচ্ছেন, বদলি হিসেবে নামানোর জন্য (পরে নামানোও হয়েছে)। মনে মনে হেসেছিলাম আর বলেছিলাম, এই তোমার তুরুপের তাস, তাহলেই হয়েছে। এ্যালেনকাকে দেখলেই আমার মনে হয় পৃথিবীর চরম অত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগা একজন খেলোয়াড়। গত মাসে নিঃশ্বাস বন্ধ করে যখন চ্যাম্পিয়ান্স-লীগের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম চেলসির মধ্যকার ফাইনাল খেলা দেখছিলাম এবং যখন ম্যান-ইউ প্রায় হেরেই গিয়েছিল, তখন এ্যালেনকা আসলো টাইব্রেকারের শর্ট নিতে চেলসির পক্ষে।

হঠাৎ করে আমি খুব রিলাক্সড অনুভব করলাম। ওর চেহারা দেখেই মনে হচ্ছিল এতো মিস করবেই এবং পরের গল্প সম্ভবত সবার জানা; এ্যালেনকার টাইব্রেকার মিস এবং প্রায় হারা ম্যাচ জিতে ম্যান-ইউ এর চ্যাম্পিয়ান্স-লীগ বিজয়। আজও এ্যালেনকা একটা বল নিয়ে ঢুকে গিয়েছিল ছোট বক্সের ভেতরে। সেদিনও সামনে ছিল ভ্যান ডার সার (ডাচ এবং ম্যান ইউ গোলকিপার), আজও। এ্যালেনকার শর্ট কোথায় গেল সেটা সেও দেখেনি সম্ভবত, আছাড় খাওয়ার ভঙ্গি দেখে অনুমান করছি! অরির করা ফ্রান্সের পক্ষের একমাত্র গোলটা কতটা অরির ছিল আর কতটা বলের নিজের ছিল, সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

কারন রিপ্লেতে যা দেখা গেলো তাতে মনে হলো বলে পা অরি লাগায়নি, বল নিজে অরির পায়ে এসে বাড়ি লেগে গোলে ঢুকেছে। তবুও অরি যে দৌড়টা দিল বল বুকে নিয়ে, দেখে মনে হলো আগামী পাঁচ মিনিটে আরও দুটো গোল করে খেলায় লিড তারাই নিতে যাচ্ছে। পরের মিনিটেই হতাচ্ছড়া (ফ্রান্সের সমর্থকরা মনে করছে) রবিনের করা গোলটা সব আসায় জল ঢেলে দিল ফ্রান্সের। নিস্টলরয়ের দেই দেই করেও দেয়া গোলটা যখন জালে গেলো না মনে হাচ্ছিল খেলা বুঝি ৩ - ১ ই থাকবে। তবে সেটা যে ইটালীর জন্য অবিচার হয়ে যায়, কারন তারাতো হেরেছে তিন গোলের ব্যবধানে।

সম্ভবত ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতেই ফ্রান্সের ৯২ মিনিটে আরেকটি গোল হজম করা! খেলা শেষে অরিকে দেখা গেলো হাসতে। সে হাসি কতটা সত্যি আর কতটা প্রফেশনাল সেটা বোঝা যাবে আগামী খেলায়, ইটালী বনাম ফ্রান্সের মাঝে। আজ রাতটা এসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। আজকের রাতে সুইজারল্যান্ডের কোন এক নাইট ক্লাবে ডাচ খেলোয়াড়দের আনন্দ নৃত্য দেখা যাবার সম্ভাবনা ষোল আনা। অন্তত বাস্তেন এতটা নিশ্ঠুর হবে না হয়তো যে পর পর দুই খেলায় দুই জায়ান্টকে শুধু অন্তর্বাসে ছেড়ে দিয়ে আসা দলকে একটু অনন্দ করতে দিবে না।

আসুন আমরাও ওদের অনন্দে গলা মিলিয়ে চিৎকার করি - জয় নেদারল্যান্ডস্, জয় নুতন দিনের। ১৩ জুন ২০০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।