আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প:একটি জবা

বনের ধারে সে অপূর্ব মায়াময় বৈকালগুলি মিছামিছিই নামবে চিরদিন।

১. -অসম্ভব। এসব শুনে আমার হাসি পাচ্ছে। -হেসো না। আমি সত্যি বলছি।

-না তুমি মিথ্যা বলছ। আমি হয়ত কড়াভাবে বলে ফেললাম। কিন্তু আমার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। -আবার হাসছ! আমি কিন্তু সত্যিই .......। -দেখ ফারহান-আমার মনে হয় তুমি নিজেকে ভুল বুঝিয়েছ এবং বুঝাচ্ছ।

-ওসব কথা আমিও প্রচুর ভেবেছি। ওগুলো কোন বিষয় না। শুধু এটাই সত্য যে আমি তোমাকে ভালবাসি। -দেখ .......উফ্। আসলে আমার তো কিছু বলার নেই।

কিন্তু ......না আমার এসব বিশ্বাস হয় না। -কোন ’কিন্তু’ না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি। -এটা আগেই বলেছ। হয়ত আমাকে তোমার ভাল লাগে।

কিন্তু ভাল লাগা আর ভালবাসা এক নয়। একধাপ বাড়ালে বলা যায় তুমি আমাকে পছন্দ কর-ভালবাস না। তবু বলি বড়জোর প্রেমে পড়তে পার ভালবাসতে নয়। আর সর্বোচ্চ ধরলে তুমি আমাকে ভালবাস কিন্তু তার কোন কারণ নেই, ভিত্তি নেই। আর এরকম ভালবাসা খুব ঠুনকো হয়।

এসব ঠুনকো ভালবাসায় আমি বিশ্বাস করি না। এসবে জড়িয়ে ভুলও করতে চাই না। -তুমি কি অংক করছ এখানে-? তুমি যুক্তির সিঁড়ি দাঁড় করিয়েছ বটে কিন্তু একজন মানুষের প্রতিটা কাজ, প্রতিটা ছবি মাসের পর মাস ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মনে হানা দিয়ে গেলে ঐ যুক্তি কোন কাজই দেয় না। -আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম। তুমি অত রেগে যেও না।

তোমার ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। -এগুলো হাসির বিষয় না। -তুমি আমাকে ভাবতে দাও। আমি দুদিন সময় চাই। তোমার সেল নাম্বারটা লিখে দাও।

-তারমানে তুমি আর দেখা করতে চাইছ না। সেল নাম্বারের দরকার কী। -আচ্ছা ঠিক আছে। তবে শর্ত আছে। ভোর সাড়ে সাতটায় ঐ রাস্তায় হাঁটা যাবে না।

আগে না বুঝলেও এখন তোমার উদ্দেশ্যটা বুঝি। এই শর্তটা মানলে আবার সরাসরি কথা হবে। -ও-তারপর দেখা করে না বলে দেওয়া। অবশ্য ঠিক আছে-আমি সিরাজের দোকানের রাস্তা দিয়ে সকালে হাঁটব না। তাহলে আবার দেখা হচ্ছে.... -আশা তো করি।

-ইয়ে মার্জিয়া। -কি বল। -নাম্বারটা রেখে দাও। তুমি তো দুদিন ভাববে। আমি কি করব।

তোমার সাথে কথা বললে কোন সমস্যা আছে? রাখ না। -আচ্ছা দাও। আমারটাতো তুমি জানই। -ওভাবে তাকিয়ে আছ কেন... -এমনি। আচ্ছা আসি তাহলে... -আচ্ছাহ্।

২. -উফ এরকম ভুল কেন করলাম আমি। ওর সুযোগ আরও বাড়িয়ে দিলাম। ও এখন আবার বটতলায় বসে থাকে। এটা তো আরও অসহ্য। ওকে দুই হাতে কিলাতে পারলে ভাল হত।

সারাদিন ও মাথার মধ্যে ঘুরেছে। দেখা দিয়ে সেটা বাড়িয়ে দিল। নাহ্! কাল ওকে আমি কি জবাব দেব। কিছুই তো ভাবিনি। ফোন নাম্বারটার দিকে তাকাল মার্জিয়া।

মনে পড়ল। ব্যাগ কাঁধে হেঁটে যাচ্ছে ও নিজে। আর বটতলায় বসা ফারহান। -গতকালই তো বলল,“ফোন করব?”বললাম-“মিসকল দিলে। ”ভাবল মার্জিয়া।

-ধ্যাৎ। একটু পেপার পড়ি। ওর চিন্তা আমাকে অতিষ্ঠ করে দিল। যা বলার সেটা রাতে ঠিক করব। ছোটদের পাতায় চোখ রাখল ও।

একটা জাপানি মেয়ের কার্টুন-চোখ দুটো বিশাল। আবার ফারহান মার্জিয়ার চিন্তাটা দখল করে নিল। মার্জিয়ার মনে হল চোখ জিনিসটা অদ্ভুত। শুধু অদ্ভুত না ভয়ংকরও। ফারহানের চোখে মানে দৃষ্টিতে কেমন একটা আচ্ছন্ন ভাব; মনে হয় যেন দৃষ্টি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে আবার হাসি হাসি।

দুটোই মনে হয়েছে মার্জিয়ার। “আবার ও হাঁটে ঠিক কিভাবে যেন-ভালই লাগে-একটু নেচে নেচে। ওর আর ভাল লাগে ভুরুটা। আর সবচে’ ভাল লাগে যখন কোন কিছু শুনে ঢোক গিলে তাকায়। উফ্।

এসব কি ভাবছি আমি! এভাবেই চিন্তার সুতা বাড়তে বাড়তে চাদর হয়ে যায়। আর ওতেই মানুষ ভুল করে বসে। একজন ছেলেকে কখন কেমন দেখায় এটা তো আমার চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত না। অসহ্য এসব প্রেম ভালবাসা। ” মনে মনে বলল মার্জিয়া।

-“ওকে কয়েকদিন না দেখলেই হয়ত আমি ভুলে যাব। আর ও আমাকে এক বছর যাবত ভালবাসে! অবশ্য ভালবাসে বললে ভুল হবে। পছন্দ করে বা প্রেমে পড়েছে। নির্ঘাত এটা অনেকে শুনেছে। ” ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে গেল মার্জিয়ার।

ফোন নাম্বারটা দেখে নিয়ে সরাসরি কল করল ও। -হ্যালো। -হ্যালো। -শোনো তুমি কবে থেকে আমার সম্পর্কে এরকম ধারণা পোষণ কর। কবে থেকে ভালবাস-সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারল না মার্জিয়া।

-তুমি তো জানই। -সেগুলো শোনা কথা। -ভাল-গত বছর থেকে। -কেন ভালবাস? বলতে গিয়ে হাসি পেল মার্জিয়ার। তবু কঠোর সুরেই বলল।

-তোমাকে ভাল লাগত তাই। আসলে জানি না কেন। -খুবই ভাল। এই ব্যাপারটা কে কে জানে? -এই পাঁচ সাতজন। -রাখি তাহলে।

-মার্জিয়া শোনো। -বল -সিদ্ধান্ত কোন দিকে যাচ্ছে? -আমি জানি না। সাথে সাথে লাইন কেটে দিল মার্জিয়া। একরাশ বিষণ্ণতা গ্রাস করল ওকে। এত বিষণ্ণ লাগছে কেন বুঝতে পারল না ও।

হয়ত বেশি রাগের পর মনটা ঠাণ্ডা হলে এমনই হয়। সবকিছু অর্থহীন মনে হতে লাগল মার্জিয়ার কাছে। ফারহানের সুন্দর মুখ প্রথম দেখে বারবার মনে পড়া এবং সেটাকে মন থেকে বিদায় করা। তারচেয়েও বেশি অর্থহীন ফারহান ওকে ভালবাসে জানার পর ঐ রাস্তায় ফারহানকে দেখে বুকের মধ্যে ছাঁৎ করে ওঠা। আর বোকামি হল এত আলাপ আলোচনা এবং নিজের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব।

অর্থবহ মনে হল পড়াশুনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং জীবনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়া। সামান্য কিছু খেয়ে শুতে গেল মার্জিয়া। শান্তভাবে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল ও। কিন্তু রাত চারটায় ঘুম ভেঙে গেল ওর। মোবাইলে মেসেজ এসেছে-ঘুমাচ্ছো! ঘুমাতে পারছি না।

বিছানায় বসে থাকল ও। কোন চিন্তা করল না। মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। গত দিনগুলো মনের ওপর দিয়ে প্রেসার গেছে খুব । হয়ত সেজন্যই।

৩. কলেজ ড্রেসটা পরে ব্যাগ কাঁধে তুলে নিল মার্জিয়া। পায়ে কেমন যেন অনুভুতি হতে লাগল ওর। টের পেল বুকটা ঢিব ঢিব করছে। ওর মনটা যেন দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। তাদের মধ্যেই কথোপকথন চলল।

-শেষমেষ তাহলে না-ই বলা হবে। বলল পুরোন মন। -অত নিশ্চিত হচ্ছ কেন! হাসল নতুন মন। -না ওর তো ফারহানের প্রতি কোন দুর্বলতা নেই। -কে বলল।

-আছে নাকি!! যদি থাকে তবে সেটা দুদিনে তৈরি হয়েছে। আর ওর জন্মের পর থেকে যে এই ভালবাসায় ওর অবিশ্বাস-সেটা কি এতই দূর্বল। -এসব যুক্তি অর্থহীন। অবশ্যই একজনকে ভালবাসা যায়। এরপর নিজের মনটাকে চুপ করিয়ে দিল মার্জিয়া।

কোন চিন্তা করল না। যা হবার তা হবে। “ফারহান, একটু আসত। ” ডাকল মার্জিয়া। ফারহান বটতলায় বসে ছিল।

মার্জিয়ার আচরণের মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারল না ও। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক কারণ, মার্জিয়া নিজেও জানে না কেন ডেকেছে। তবে ওর মনের অবস্থা আগের পুরো বিপরীত। আগে পুরনো মনটা নতুন মনকে চুপ করিয়ে দিত। এখন কিন্তু নতুন মনটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এদিকে এরকম জায়গা খুব কম। ছোট্ট সবুজ মাঠে একটা মাত্র বেঞ্চি। কিছুদুর হেঁটে বেঞ্চির সামনে এসে দাঁড়ালো মার্জিয়া। বেঞ্চিটার ঠিক মাঝখানে ফারহানকে বসতে বলল ও। হঠাৎ ওর মনে হল ফারহানের একাই থাকা উচিত।

পেছনে ঘুরে হাঁটা দিল মার্জিয়া। চারকদম পরেই চোখ পড়ল টকটকে লাল একটা জবা ফুলের ওপর। মার্জিয়া ডালটা ভেঙে নিল, ফুলসহ। ইচ্ছে হল ফুলটা জুতো দিয়ে মাড়িয়ে দিতে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল ও-বেঞ্চির সামনে হতভম্ব ফারহান দাঁড়িয়ে আছে।

আর অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে ওর ছলছল চোখের দিকে। ফুলসহ হাতটা পেছনে নিয়ে ফারহানের দিকে এগোল ও। বলতে চাইল, ফারহান তুমি বস। আমি আর যাব না। বলতে পারল না।

কান্নায় গলা বুঁজে এল ওর। ফারহান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বসে পড়ল বেঞ্চিতে। মার্জিয়া বেঞ্চিটার সামনে –ঠিক ফারহানের সামনে হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়াল। ফুলটা ফপারহানের হাতে গুঁজে দিয়েউঠে দাঁড়াল ও। কান্নাভেজা হাসি হেসে পেছন ঘুরে কলেজের দিকে হাঁটা দিল মার্জিয়া।

সিগারেট নয় ফুলটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল ফারহান। বাগানে জবা ফুলের গাছ লাগাবে ও। ৪. ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে। জবা গাছটার পাতাগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে। যেন সেই কবেকার মার্জিয়া।

(আমার পিচ্চিকালীন সাহিত্য। আবেগ একটু বেশি। এই নিয়ে এখনও আমার ভাইবোনেরা ঠাট্টা করে। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।