আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক কলেজ টিচার এর শাস্তি দেওয়া......

-তুমি কোথা থেকে? -স্যার বাসা থেকে। -বাসা থেকে মানে? এতদিন ছিলে কোথায়? -স্যার বাড়িতে ছিলাম -তো বাড়িতে থাকতে। এখন এসেছ কেন? -স্যার আপনার ক্লাস করার জন্য। স্যার আর কিছু বললেন না। তিনি জানেন আমার এই সহজ সরল উত্তর এর সাথে তিনি পেরে উঠবেন না।

আমার কলেজের ম্যাথ টিচার লিঠন স্যার। টিচার যে একজন অভিভাবক হতে পারে স্যার তার প্রমান। এক সপ্তাহ কলেজে যাইনি তাতে তার এত কৈফিয়ত। শুধু কৈফিয়ত নয় আমরা কোন সূত্র ভুলে গেলে বা ক্যালকুলাস এ ভুল করলে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতেন, নিজের গালে নিজেকে থাপ্পড় দিতে বলতেন। বাহির থেকে অন্য ক্লাসের ছেলেরা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকত।

তাদের চোখে বিস্ময় থাকত যে কলেজে কোন স্যার শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তার কাছে ছেলে মেয়ে আলাদা ছিলনা। সবাইকে একই রকম শাস্তি দিতেন। আমরাও সেই শাস্তি মাথা পেতে নিতাম। তার চাওয়া সব কৈফিয়ত এর উত্তর ‍দিতাম।

কারন আমরা জানতাম এই যে এত শাস্তি বা এত কৈফিয়ত তার কোন ক্ষতিকর এফেক্ট নেই। বুধবার আমাদের সাথে স্যারের কোন ক্লাস থাকত না। স্যারও সেদিন কলেজে আসতেন না। কিন্তু যেদিন থেকে বুধবার আমাদের মাঝখানের একটি ঘন্টা ফাঁকা হয়ে গেল। সেদিন থেকে স্যার এর কলেজে কোন ক্লাস না থাকা সত্বেও স্যারও এতদুর থেকে এসে আমাদের ওই ফাঁকা ঘন্টায় ক্লাস করিয়ে যেতেন।

এই একটা এক্সট্রা ক্লাসের জন্য কলেজ থেকে স্যার কোন টাকা পেতেন না। স্যারের এত পরিশ্রম শুধু আমাদের সাফল্যর জন্য। আমাদের কলেজে কোন ইউনিফরম ছিলনা। যার যেমন ইচ্ছে পোশাক পড়ে আসত। একদিন কলেজে নিয়ম হল সবাইকে ইউনিফরম পড়ে আসতে হবে।

কিন্তু কোন ছাত্র-ছাত্রী তা মান্য করছিল না। স্যার আমাদের সবাইকে বললেন- “তোমরা সায়েন্সের ছাএ। কলেজের গৌরব। কলেজের নিয়ম মেনে ইউনিফরম পড়ে সেই গৌরব ধরে রাখ। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিফরম পড়ে কলেজে আসা শুরু করলাম।

দুই একজন ছাড়া কলেজের সবাই ইউনিফরম ছাড়া আসত। কিন্তু সায়েন্সের ছেলেরা ইউনিফরম পড়ে আসত। আমাদের প্রিন্সিপাল তখন কোন ছেলেকে ইউনিফরম ছাড়া দেখলেই বলতেন- “ without uniform campus out” একদিন আমি শুধু আমার প্রাইভেট পড়ার জন্য কলেজে গেলাম ইউনিফরম ছাড়া। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে দেখলেন। দেখেই খেঁকিয়ে উঠলেন- - এই ছেলে তোমার ড্রেস কোথায়? আমি আমার সবুজ গেন্জি দেখিয়ে বললাম- স্যার এইতো ড্রেস।

-এটা ড্রেস মানে? ওইটা কোথায়? -কোনটা স্যার? ইউনিফরম? -হ্যা। -ওটাতো বাসায় স্যার। -তো আমাকে গেন্জি দেখিয়ে ড্রেস বললে কেন? -স্যার আপনি তো ড্রেস কোথায় জানতে চেয়েছিলেন। এটাও তো ড্রেস। ইউনিফরম বললে বুঝতে পারতাম স্যার।

স্যার আর কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। আমাদের ক্যালকুলেশান দেখে কোন অংক বুঝতে না পারলে স্যারকে বলতাম। স্যার আমাদের বিভিন্ন উদাহরন আর সূ্ত্র দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আমরাও এত জটিল অংক এত সহজে বুঝে সারপ্রাইজড হতাম। নিজের উপর বিরক্ত হতাম কেন এত সহজ অংকটা পারলাম না।

স্যার সবার অভিভাবকের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখতেন। কোন কারনে দুইদিন কলেজে না আসলেই ফোন করতেন। না আসার কারন জানতে চাইতেন। একবার আমি কলেজের নাম করে হায়ার এ ক্রিকেট খেলতে গেলাম পরপর দুইদিন। স্যার আমার আম্মুকে ফোন করলেন।

সব শুনে আম্মু স্যারকে অনুরোধ করলেন পিটিয়ে আমার চামড়া উঠিয়ে শুধু হাড় গুলো রাখার জন্য। তিনি সেই হাড় দিয়ে মুরালী বাঁশি বাজাবেন। আজ সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। লিঠন স্যারের শাস্তি গুলো খুব মিস করছি। স্যার আপনাকে সালাম।

আমি এখন প্রবাসী। আমার বড় ইচ্ছে আপনার পা ছুঁয়ে একদিন সালাম করব। সেই একদিন এর অপেক্ষায় রইলাম স্যার..................। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।