আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এখন আমি অনেক বড়, যুদ্ধ বুঝি মৃত্যু বুঝি না

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র

"একাত্তরে তখন আমি অনেক ছোট মৃত্যু বুঝি যুদ্ধ বুঝি না এখন আমি অনেক বড় যুদ্ধ বুঝি মৃত্যু বুঝি না। " আমার অসম্ভব প্রিয় একটি পংক্তি। যদিও নিজ চোখে দেখিনি সেই সুররিয়ালিস্টিক ১৯৭১, আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রাম, স্রোতস্বিনীতে লাশের মিছিল, রক্তবৃষ্টিতে ভেজা প্রিয় মাটি, ঘুমহীন চোখ মেলে খুনের দৃশ্য দ্যাখা-অবোধ শিশু, পাক হানাদারদের তাণ্ডব উল্লাস, হায়েনার হাসি, ব্ল্যাকআউট ষড়যন্ত্র... তাই পংক্তিটা হয়তো আমার মা'র ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শামুকে কাটা পা নিয়ে দৌড়ে চলেছে ছয় বছর বয়সী এক শিশু। শিশুটি আর কেউ নয় আমার স্নেহময়ী, জন্মদাত্রী - মা।

দিন-রাতের হিসাব-নিকাশ ভুলে গেছে সে। ক্রমাগত হেঁটে চলেছে মায়ের সাথে, ছয় ভাই-বোনের সাথে... নিরন্তর পথ-চলা, কখনো কুষ্টিয়ার কুমারখালির চর ডিঙিয়ে আবার কখনো-বা মেহেরপুরের রাস্তা ধরে অবিরাম হাঁটাপথ। কোনো বিশ্রাম নেই। কেবলই অফুরন্ত পরিশ্রম। বাবা (আমার নানা) যুদ্ধে গেছেন সেই কবে... পুলিশ বাহিনীর সাহসী হাবিলদার; যুদ্ধে তিনি যাবেন না-তো কে যাবে ? আশ্চর্যের বিষয় তাঁর বাবা ( আমার নানা) যুদ্ধে যাবার আগে কাউকে বলে যেতে পারেননি।

সেই সময়টুকুই পাননি ! পরিবারের সাত সদস্যের কাউকেই নিরাপদ স্থানে রেখে যাবার ব্যবস্থাও করতে পারেননি। হয়তো পরম করুণাময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন সব। যাঁর রক্তে মিশে আছে দেশের বিশুদ্ধ অক্সিজেন, তাঁর পক্ষেই সম্ভব পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে মৃত্যু যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া... দীর্ঘ নয়মাস তিনি যুদ্ধে ছিলেন। এই সময় কখনো তাঁর পরিবারের কাছে খবর এসেছে - তিনি মারা গেছেন, পাক হানাদাররা অমুক নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে তাকে গুলি করেছে। আবার তাঁর কোনো সহযোদ্ধা এসে খবর দিয়ে গেছেন - তিনি নিখোঁজ।

তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে দেয়া হয়েছে। আরো কত যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা ! নানার মুখ থেকে আজ শুনি মুক্তিযুদ্ধের কথা; চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি জাতির বিপ্লবের স্থিরচিত্র, সেলুলয়েডের ফিতার মতো যুদ্ধের বিভীষিকা ভেসে ওঠে চক্ষু সম্মুখে। নানা বলেন, চোখের পাশ দিয়ে গুলি ছুটে চলেছে, হেলমেটে অনবরত গুলি লাগছে, অনেক সহযোদ্ধা চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কাতরাতে কাতরাতে প্রাণপাত ঘটেছে তাঁদের... কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় - আমার গায়ে একটি গুলিও লাগেনি। কেন লাগেনি কে জানে ? হয়তো আল্লাহপাক সহায় ছিলেন, সে কারণেই মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে নি আমাকে। আমি যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম – স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক সম্পর্কে, এই যে জিয়া আর শেখ মুজিবকে নিয়ে দর কষাকষির মতো রাজনীতি চলছে, তার প্রেক্ষিতে তিনি উত্তর দিলেন : অবশ্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তবে এক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানেরও অবদান আছে। বঙ্গবন্ধু পুরো একটি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর অবদান অনেক। যুদ্ধের অনেক গল্পই শুনেছি নানা-নানী আর মা’র কাছ থেকে। যেহেতু যুদ্ধ দেখা হয়নি, তাই যুদ্ধে গল্প শুনেই হৃদয়ে জেগে ওঠে দুর্বার দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কাঁদায় আমাকে, আমার বিবেককে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।