রাজা
গেছিলাম খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে! কিন্তু প্রকৃতিও যে আমাদের নিয়ে খেলা করবে তা বুঝতে পারিনি!! গিয়ে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে! আর একই সাথে প্রখর রোদ!!! রিতিমত পানিতে সেদ্ধ করে মারার প্লান করেছে মনে হয় প্রকৃতি আমাদের। সেদ্ধতো হয়েছিই এর সাথে চাপাচাপির যে অবস্থা। তাতে আমি নিজেই মনে হয় আলু ভর্তা হয়ে গেছি। এখন খালি ভাতে মেখে খেয়ে ফেলাটাই বাকি!
এইসবই ভাবছিলাম বুয়েটের মধ্যে হাটতে হাটতে। ঘড়িতে তখন রাত ১০:৩০।
হঠাৎ নেট এর কানেকশনটা গেছে চলে। সেই সুযোগে আমার এই একাকি নৈশ বিহার! তবে প্রকৃতি মনে হয় আমার এই রাগ সহ্য করল না। তাই মান ভাঙ্গাতেই কিনা, অপরুপ একটা দৃশ্য তৈরি করল আমার সামনে। হঠাৎ দেখি পায়ের নিচে অনেক কাঠ গোলাপ! পুর পথটাই কাঠ গোলাপে ঢাকা!! পাশে মাজা সমান উচু সিল্ভিয়া মাথায় লাল ফুলের মঞ্জরী। পাশের জবা গাছটাকেও অপরুপ লাগছে সিকিওরিটি লাইটে! কিন্তু মাথায় ‘ভর্তা খাওয়া’ টাইপের একটা কথা রয়ে গেছে! তাই আমার অসম্পুর্ন একটা এক্সপেরিমেন্ট এর কথা মনে পড়ে গেল।
সময়ও হাতে আছে প্রচুর। এক্সপেরিমেন্টটা কম্পলিট করে ফেললাম!! সেই এক্স পেরিমেন্ট এর রেজাল্টই লিখব এখন...
সিল্ভিয়াঃ-এই ফুলে একধরনে মধু আছে। তিতকুটে টাইপের মিষ্টী স্বাদ! তবে ফুলের পাপড়ী খেতে একটু কর্কশ। জিভে ঘসা লাগে! পাপড়ি স্বাদ হীন। গন্ধও নেই।
কাঠ গোলাপঃ- এই ফুলের গন্ধ অতুলনীয়! পাপড়ি রসাল এবং পুরু। খাওয়ার সময় তেমন কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। তবে গিলে ফেলার পর মনে হয় একটা মাছি চিবিয়ে গিলেফেলেছি! ...ইয়াক!! (কানে কানে বলে রাখি! মাছি চিবিয়ে খেতে কেমন, তা আমার জানা আছে!)
জবাঃ- এই ফুলটা খেতে ভাল। যারা আমার মত ঢেঁড়স পছন্দ করেন। তাদের নিঃসন্দেহে ভাল লাগবে।
গোড়ার দিকটা অনেকটা কাঁচা ঢেঁড়স এর মত!
কৃষ্ণ চূড়াঃ- এই ফুলের জন্য বুয়েটের মেইন ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে হল শেরেবাংলা হলের দিকে। সেই পথটা রীতিমত লাল হয়ে আছে ঝরা কৃষ্ণ চুড়ায়!! সিকিউরিটি লাইটে লাল রংটা কেমন যেন কালচে দেখাছে। রক্তের মত! এই ফুলের স্বাদের কথা বলতে গেলে এর গঠনের কথা বলতে হবে। পাপড়ী পাঁচটা। এদের মধ্যে একজন রাজকন্যা বাকি চার জন সহচরী! আমি একটাকে রাজকন্যা বলি কারন এইটাই সবচেয়ে সুন্দরী(!!!)।
আপনারাও কাছ থেকে দেখলে বুঝতে পারবেন। আমি জিরফের মত লম্বা জানতাম। তবে রীতিমত কৃষ্ণ চুড়ার ছিড়ে ফেলব, তা জানলাম তখন!! সহচরীদের স্বাদ ভালই। লাল শাকের মত। অনেকটা কাঁচা হলুদের গন্ধ আছে তাতে! তবে রাজকন্যা দেখতে ভাল হলে কি হবে, খেতে একে বারে...ইয়াক!! কাঁচা হলুদের সাথে বিটকেলে একটা গন্ধ আছে!!!
রজনীগন্ধাঃ- বিস্বাদ ফুলের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে সবার সেরা হচ্ছে রজনী গন্ধা!! এই একমাত্র ফুলই আমি চিবানোর পর গিলে ফেলতে পারিনি!!! এত সুন্দর গন্ধ! কিন্তু খেতে এত খারাপ! আইরনিক্যাল ব্যাপার।
গোলাপঃ- তবে সবচেয়ে ভাল মনে হয় গোলাপ। পাপড়ীর স্বাদ নেই তেমন! লজ্জার কথা, তাও বলি। আমার এক বন্ধু বলে প্রিয়ার ঠোঁট নাকি গোলাপে পাপড়ীর মত!!! তাই এক্সট্রা আগ্রহ নিয়েই খেলাম এর পাপড়ী গুল। একটু পানসে মিষ্টি মত! তবে এত সুন্দর সেন্ট!! মনে হয় গোলাপ জল। স্বাদের দিকথেকে এটাই সবার সেরা!!! ইম্প্রেসিভ একটা ডেমো পাওয়া গেল আরকি!!!
রেইন্ট্রিঃ- এর ফুল গুল খেতে ভালই!! শন পাপড়ীর মত! তবে মিষ্টি না!
রাধা চূড়াঃ- ফেরার পথে আহসানুল্লা হলের সামনে, ঐযে যেখানে ছাত্রী হলের রাস্তাটা এসে মিশেছে।
সেখানে দেখা হল রাধা চুড়ার সাথে। এই ফুলে আসল নাম জানিনা। আমি এটাকে বলি ‘রাধা চুড়া’। কৃষ্ণ চূড়ার মতই অনেক বড় গাছ। ফুল গুলো একে বারে হলুদ।
কৃষ্ণ চুড়ার মত লালচে কমলা না। তবে এই গাছে কাকদের কলোনী। শয়ে শয়ে কাঁক। তাই এর ফুল খাব কিনা ভাবছিলাম। কিন্তু আজ বৃষ্টি হয়েছেতো! পরিষ্কার হয়ে গেছে মনে হয়।
তাই খেয়ে ফেললাম একটা!! একে বারেই স্বাদ হীন। পাপড়ী গুলা শক্ত টিস্যু পেপারের মত!! না আসলে লাউ এর বীজের বীজ পত্র গুলা আলাদা করএ মাঝখানে একটা পাপড়ীর মত পাতা থাকে। এটা মনে হয় ঐটার মতই স্বাদ!! স্বাদ হীন।
শাপলাঃ- এর ফুল গুলা খেতে পানসে। একটা সেন্ট আছে।
তবে রেধে খাওয়া যেতে পারে।
অবশ্য পেট ভরে যদি ফুল খেতে চান। তাহেলে আমাদের সবার প্রিয় ফুল কপিই ভরসা!!!
বিদায়।
লেখাটি পাওয়া গেছে
লিংক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।