প্রবাসী
টোরোন্টোতে বাংলাদেশীদের নিজস্ব ক্লাব হল “ক্রিসেন্ট টাউন” ক্লাব। মাসে একবার কখনো সখনো দুইবার লাঞ্চের আয়োজন করে থাকেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। গত ১ মাসে এই রকম দুটো লাঞ্চ এ উপস্থিত ছিলাম। লাঞ্চের আগে এবং পরে বাঙ্গালীর অতিপ্রিয় জিনিস - আড্ডা। আর আড্ডা মানেই রাজনীতি।
প্রথম লাঞ্চ – স্থান- গাওয়ার স্ট্রীট। লাঞ্চের আগে তাস খেলা চলছিল আর যথারীতি বাজছিল দেশাত্ববোধক গান “ পূর্ব দিগন্তে.........। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই গান গুলো আমাদের কি অসাধারন অনুপ্রেরনা যুগিয়েছিল তা উল্লেখ করে বললাম “ সেই সময়ে মুস্টিমেয় রাজাকার আলবদর ছাড়া সমস্ত জাতি ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তি সংগ্রামে অথচ সেই সময়ের স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারেও আজ কত বাধা। তাদের উপযক্ত শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। পাসে বসা ভদ্রলোক বিরোধিতা করে বলে উঠলেন “আপনি কেন এমন বলছেন? রাজাকারদের কূকীর্তির ফিরিস্তি দিতেই তার দাবি হল “ এখন কূকীর্তি আরো বেশী হচ্ছে যদি সাইদীর ফাসী হয় তাহলে হাসিনার দুইবার ফাসি হওয়া উচিত।
এখন দেশে কি হচ্ছে জিজ্ঞেস করাতে উনি দাবী করলেন এখন অনেক ৭১ এর চেয়ে বেশী খুন হচ্ছে যেমন বিশ্বজিত।
ভদ্রলোকের বয়স ৬০ এর উপরেই হবে তার মানে মুক্তিযুদ্ধ তিনি সজ্ঞানে দেখেছেন। পোষাকে আশাকে কথা বার্তায় ধার্মিক। দাড়ী টুপি পাজামা পাজাবী পরা দু এক টা কথার পরই ইনশাল্লাহ বলে নিজের মতামতকে পাকা পোক্ত করছেন। বছর বিশেক আছেন কানাডাতে।
উনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, রাজাকারদের বর্বরতা দেখেছেন। এখন দেশে কি হচ্ছে তা শুধু খবরের কাগজে বা দেশের লোকদের মাধ্যমে জানেন। স্বচক্ষে দেখা রাজাকারদের অপরাধ তার কাছে মনে হল তুচ্ছ, আর না দেখা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা অনেক বেশী বড় অপরাধ? বেশ কিছুদিন হল আমিও বিদেশে। দেশে কি সত্যি সত্যি ৭১ এর চেয়ে বেশী অপরাধ হচ্ছে?
দ্বিতীয় লাঞ্চ- স্থান রিজেন্ট পার্ক। অল্প কয়েকজন বাঙ্গালী মিলে সেদিন রিজেন্ট পার্কে লাঞ্চের আয়োজন।
মোট জনা বিশেক। গাওয়ার স্ট্রীটে যেমন একটা সার্বজনীন ভাব থাকে তেমন কিছুই নয়। যদিও কমুনিটি হল তবুও অনেকটা পারিবারিক লাঞ্চের মতই।
খাওয়া দাওয়া শেষে আড্ডা। সেদিনকার আড্ডার রাজনীতির সুচনা যেভাবে হল তাই একটু বলি ।
ভদ্রলোকের সাথে একসময়ের কংগ্রেস সভাপতি এবং স্বাধীণ ভারতের শিক্ষামন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের চেহারার মিল চোখে পড়ায় তাকে সে কথা স্মরন করিয়ে দিলাম” আবুল কালাম আজাদের চেহারার সাথে আপনার চেহারার অদ্ভুত মিল। তিনি জবাব দিলেন “ সেই ভয়ে তো পালিয়ে এসেছি” আমি মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। আবুল কালাম আজাদের সাথে চেহারার মিল থাকলে তিনি কেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে আসবেন? একটু থেমে ভদ্রলোক আবার বললেন “আজাদ মনে হয় তুরস্কে বা ইরানে যাওয়ার চেস্টা করছে” এতক্ষনে বুঝলাম তার কাছে আজাদ মানে হল বাচ্চু রাজাকার। বাচ্চু রাজাকারের যথাশীঘ্র ফাসি কার্যকর হোক এমন মত প্রকাশ করাতেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। সাইদীর মত বিখ্যাত আলেম, নিজামীর মত পরহেজগার মানুষ ইত্যাদি কথার তুবড়ি ছুটালেন।
এবং শেষ মেষ যখন দাবী করলেন মুক্তি যোদ্ধারা ৫০ লক্ষ বাঙ্গালী নারী ধর্ষন করেছে তা তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন তখন আর ধৈর্য্য রাখতে পারলাম না। বাংলা ছেড়ে ইংরাজীতে বললাম “ You are a liar “
পাশের আপার কাছ থেকে ভদ্রলোকের নাম জানলাম দলিরুদ্দিন। বাংলাদেশে বাড়ী ছিল নোয়াখালীতে। পাকিস্তানের নেভীতে লেফটেন্যান্ট ছিলেন। তার দাবী ছিল তিনি মুক্তি যুদ্ধ করেননি ঠিকই তবে পাকিস্তানীদের ও সহায়তা করেন নি।
এমন মানুষদের দেখে নিজেও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছি, সত্যিই কি ভদ্রলোক দুজনে ঠিক এবং আমি নিজেই যা দেখেছিলাম বা জেনেছিলাম তা ভুল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।