আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা" তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

মায়ের মন বোঝা মনে হয় ছেলেদের কাছে খুব সোজা। তারা মায়ের মতিগতি দেখলে বুঝতে পারে মাকে কখন পটাতে হবে আর কখন কোন কথা বল্লে মা অনুমতি দিয়ে দেবে। মায়ের মনটাও যেনো একেবারে নরম। ছেলে মেয়েদের অন্যায় আবদারটাও তারা মেনে নিতে চান মাঝে মাঝে। তখন আমি সবে কলেজে যাই।

নতুন বন্ধু নতুন দুনিয়া। সিগারেট, গাজা, মদ ও নারী সব কিছুই কলেজ লাইফে করেছি। বলতে বাধা নেই নারী বিষয়ক ব্যাপারে একবার হাজতে গিয়েছিলাম। আমার মা আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিলো। সিগারেট ও মদে যখনি আচ্ছন্ন থাকতাম মায়ের চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারতাম না।

আমার মা বুঝতো না ভাবতো ছেলে বুঝি ভদ্রতা করতেছে। যখনি সিগারেট এর কথা জিগ্গাস করতো আমি এক বাক্য না বলতাম, চাইতাম না তিনি কখনো জানুক। মদ খাবার সময় বাড়ীর বাইরের থাকতে হতো তখন মাকে বলতাম বন্ধুর বাড়ীতে পড়তে যাচ্ছি আজ ফিরবো না। তিনি ও কখনো বাধা দিতেন না। কোনো মেয়ের সাথে সর্ম্পক আছে কিনা জিগ্গাস করলে বলতাম " মা কি যে বলো না"।

তিনি ও আমাকে বিশ্বাস করে বলতেন থাক বাবা এই সব সর্ম্পকে যাস নে, তোকে আমি সুন্দর লাল টুকটুকে মেয়ে দেখে বিয়ে দিবো। কিন্তু আমি তখন এক মেয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছি এবং তাকে বিয়ে করবো এই আশ্বাস ও দিয়েছি। এক বার এলাকায় মারামারি করি আমি তাতে অপর পক্ষের বেশ ক্ষতি হয়, কারন আমি তাকে রড় দিয়ে পিটিয়ে তার সারা শরীর থেকে রক্ত বের করে দিয়েছিলাম। পুলিশ কেস হলো তাতে আমি আসামী হলাম। আমার মা সব জানলেন তিনি আমাকে থানা থেকেই ছারিয়ে আনলেন।

অপর পক্ষের সাথে সমঝোতা ও কেস উঠিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের বল্লেন। বাসায় ফিরলাম মা আমাকে জিগ্গেস করলেন পুরা কাহীনি বলতে আমি সব বানিয়ে মিথ্যা বলেছিলাম মাকে। বলেছিলাম সে আমাকে গালি দিয়েছে তাই আমি তাকে মেরেছি, কিন্তু আসলে যে মেয়ের সাথে আমার সর্ম্পক ছিল সেই মেয়েকে ওই ছেলে বিরক্ত করতো। তিনি আমাকে শুধু বলেছিলেন এখন থেকে তোমার রাতে বাইরে যাওয়া বন্ধ। কিন্তু আমি কিছুদিন পরে মাকে পটিয়ে আবারো রাতে বের হতাম।

আমার মা দেশে থাকে। আমি প্রবাসে কি করি তা তিনি জানে না। কিন্তু যখনি জিগ্গাস করে আমি হা বা না তে উওর দেই। কখনি স্বীকার করি না। হয়ত বা আমার কোনো বিপদ বা কোনো বাজে কিছু হবার আশংকা হবার আগেই তিনি কেমন জানি টের পেয়ে যেতেন তিনি আমাকে আগ থেকেই ফোন করে আমাকে সাবধান করে দিতেন।

কিন্তু আমি আমার কাজটা ঠিকই করতাম, সেটা আমার জন্য ভালো বা খারাপ যাই হোক। কিছুদিন আগে আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো ছোট্ট একটি এক্সিডেন্ট এর কারনে, আমার মা এক্সিডেন্ট হবার ঠিক চারঘন্টা পরেই আমার মোবাইলে ফোন করেছিলো, জিগ্গাস করছিলো আমি ঠিক আছি কিনা? আমি ও মিথ্যা বলেছিলাম হ্যা আমি ঠিক আছি কাজ করছি সব ভালো। কিন্তু তিনি মানছে না, পরে তাঁকে বল্লাম যে আমার কাজ থেকে ফোন করছে আমাকে কাজে যেতে হবে তুমি ফোন রাখো আমি পরে কথা বলবো। আসলে মাকে মিথ্যা বলার পর মনে শান্তি পাইনা। কেমন জানি মনে হয় আচ্ছা আমি তো আমার মাকে অনেক মিথ্যা বলি বা তাকে সবসময় আড়ালে রাখি যদি এমন কোনো দিন হয় যে "আমার মা মারা গেলেন, আর বাংলাদেশে ফোন করার পর কেউ আমাকে জানালো না, মায়ের কবর দেওয়া ও শেষ, পরে আমাকে হয়ত জানানো হবে তোমার মা অসুস্থ তুমি দেশে আসো' খুব খারাপ লাগে যখনি মনে হয় এই সব কথা।

কেমন জানি মনে হয় মাকে আর মিথ্যা বলবো না আড়ালে রাখবো না, তাকে আমার মনের সব কথা খুলে বলবো, আমি কি সিগারেট টানি, আমি মদ কেনো খাই, আমার কোন মেয়ের সাখে সর্ম্পক আছে। আমি এই প্রবাসে বন্ধুদের সাখে কেনো প্রতি রাতে জুয়া খেলি আমি কেনো অত্যাধিক রাগে নিজের শরীর নিজে কাটি, আরো অনেক জমানো কথা যা আমার মা কে আমার কাছ থেকে আড়াল করতে বাধ্য করেছে। মা মাগো তোমার কাছে আজ আমি সব বলতে চাই, তোমার কাছে আমি দু হাত জোড় করে আজ ক্ষমা চাই, তুমি আমায় ক্ষমা করো সব ভুলের জন্য আর ক্ষমা করো তোমাকে তোমার অধিকার থেকে সরিয়ে রাখার জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।