আমার স্নেহের কবিতাগুলো
পিঁপড়া
.............................
পিঁপড়ার অহংকার থাকে না
হাতির অহংকারও ভালো নয়
কারণ পিঁপড়ে চড়ে বসতে পারে হাতির কাঁধে
হাতি তা পারে না।
..................................................................................................
................চার পাঁচ হাজার পিঁপড়ার দুঃখ (এর সফট কপি)
.................প্রথম প্রকাশ ২০০৫
.................প্রচ্ছদ রাজিব রায়
....................নামলিপি আনওয়ার ফারুক
.......................আলোকচিত্র নাসির আলী মামুন
প্রকাশক
মঙ্গলসন্ধ্যা
...................................................................................................
প্রতিবার আত্মহত্যার পর
.......................................
প্রতিবার আত্মহত্যার পর আমার মন খুব খারাপ থাকে।
বড় বুড়ো হয়ে যাই
দাঁত নড়ে, চুল পাকে
চোখে দেখতে পাইনা...
আত্মহত্যা করে ঘরে ফিরে আসলে, মনে হয়
কান্না করছে নাগাসাকি, আনবিক ঘাসগুলো নাড়ছে অনিচ্ছুক মাথা
সন্তর্পণে একাধিক রাত
দীর্ঘশ্বাস ফেলে-ফেলে
ভরে ফেলে
বীজগণিতের খাতা।
ভালো বা ভালো নয়
..........................
কাটা, ছেঁড়া আর অচল টাকার মতো জীবন ভালো নয়।
ভালো হচ্ছে নিবেদিত থাকা বিনিদ্র যুদ্ধে।
ট্রেনফেল করেই ঘরে ছুটে আসে যারা,
তাদের কাছ থেকে একট্রাক দূরে থাকা ভালো, এরই নাম দ্বিধা
যেমন নিজের শরীরের মাপ জানা থাকলে ভালো, দর্জির সুবিধা
শরীরের ছায়া থেকে বেশি দূরে যাওয়া ভালো নয়।
ছায়াকে বেশি কাছে ঘেষতে দেওয়াটাও ভালো নয়।
কেউ কি কখনো মরে যায় বা গেছে
.................................................
রান্নাঘরে এতো মৌনতা কেন? আমি কাতর হয়ে উঠি।
যতবার ভাবি নিবিয়ে দেবো বাল্ব ঘুমাতে যাবো
রিমোটকন্ট্রোলের ডাকে ছুটে যাই
ফিরে আসি নিজের ছায়া হাতে। রাত্রিকে দেখি এক গালে হাসে।
ছায়া শুয়ে থাকে বুড়ো কুকুরের মতো ঘরবারান্দায়
পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসে কিছু নিরন্ন কান্নার শব্দ
কেউ কি কখনো মরে যায় বা গেছে!
আর পালিয়ে গেছে কুকুর তার ছায়া নিয়ে?
পাখিদের বাইপাস স্বপ্ন আছে
......................................
কঠিন দুঃখেও পাখিরা হাসে
পাখির হাসি আমরা দেখি না।
কাকের জগত পুরোটা কালো নয়
যেমন নির্দোষ রাতে কিছুটা জুয়া
অবৈধ নয়
অপারেশন টেবিলে শুয়েও
মানুষ ভুলে যায় না সঙ্গমের স্মৃতি
তারা দেখে পরকাল কিন্তু পাখির মতো হাসে না
ডেটলের গন্ধে কেবল মৃতদের ঘুম আসে না।
পাখিদের কোনো হৃদরোগ নেই
বাইপাস স্বপ্ন আছে।
গাছ কোনো কাকের জন্য অপেক্ষা করে না
....................................................
প্রেতের সাথে প্রণয় হলে কপালে দুঃখ আছে।
অসমর্থ নদীর মাঝেও ভেসে ওঠে চর
ডুবে যাওয়া মানুষ ভুলে যায় ঠিকানা
জলের গন্ধ শুঁকে যারা বলে দিতে পারে গন্তব্যের স্বভাব
তারাই তো আসল লোক
কিছু নদীর ঢেউ মিলিয়ে যেতেই পছন্দ করে
গাছ কোনো কাকের জন্য অপেক্ষা করে না।
চার পাঁচ হাজার পিঁপড়ার দুঃখ
চার পাঁচ হাজার পিঁপড়ার দুঃখ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে পারি
বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্ত রাখতে পারি না মানুষের নাম
ছেঁড়া মুণ্ডু পড়ে থাকে প্রার্থনার পথে
অনিচ্ছুক পিঁপড়া নিতান্ত ক্ষুধায় প্রবেশ করে কবরে
তাদেরকে কি মানুষ নামে ডাক দেয়া যায়, যারা পিপীলিকা নয় ?
দীর্ঘশ্বাসের গন্ধে ঘুম ভেঙে যায়।
সামনে শেতাঙ্গ নদী
যার জলে মুখ ধুতে গিয়ে কিনে এনেছি হাজার মনের অসুখ
সেসব রোদেরা কোথাও নেই, যারা মেখে দিয়েছিল
রাত্রির গায়ে বিবাহিত প্রণাম !
ট্রেনের জানালায় বসে আছি আমি, মুখ কালো
ব্যক্তিগত দুঃখগুলো দৌড়াচ্ছে পাল্লা দিয়ে ইলেকট্রিকের থাম
সামনে আছে বিরল দুর্ঘটনা এ কথাও হয়তো জানতাম
ভাগ্য নিতান্ত খারাপ, আমি পরিতাপের রং মুখস্ত রাখিনি
হাতের অতি কাছে পেয়েও মৃতসূর্য নিশ্বাসে মাখিনি
জানি, পাথর ও পাথরের মাঝে দূরত্ব থাকাটাই ভালো।
প্রতিটি পবিত্র অর পিঁপড়া হয়ে যায়
......................................
তৃতীয় শত্রু পথ দেখায়
চতুর্থ হামলা করে
শত্রু মহাসমাবেশ থেকে পতাকা নাড়ায়
স্বল্পমাত্রার মানুষ
সাদাকালো পিপীলিকা
চেনে রাখে পরিখা
গোপন বর্ষায়
মারা যায় পিঁপড়া
শোক করে দ্বিগুণ
শ্মশানবিচ্যুত আগুন
চার পাঁচ হাজার পিঁপড়ার দুঃখে
পুড়ে যায় গ্রন্থসাহেব
প্রতিটি পবিত্র অক্ষর পিঁপড়া হয়ে যায়।
কেউ যদি খুঁজে পান ঘোড়াটিকে
...........................................
আমি দেখেছি লুকিয়ে থাকা আলোর দুঃখগুলোকে
বলিনি কোনো কথা
নিজের যে কথা ভাসতে থাকুক নির্জন জলে।
যে কথা বলা হয়ে যায় তার সত্যি মানে থাকেনা
যে জলে ধোওয়া যায় মুখ সেই তো বন্ধু
গভীর আরো আরো গভীর যে কুয়ো
তার তলদেশে বাস করে প্রমত্ত কুমির
যার সাথে জীবনে একদিন দেখা হয়ে যায়।
চোখে মানবিক জল ভরে
একটি ঘোড়া দাঁড়িয়ে কাঁদে
কেউ যদি খুঁজে পান ঘোড়াটিকে
মনিবের ঘরে পৌঁছে দেবেন দয়া করে।
পাথর বানাতে পারলে ভালো
............................................
‘সারা’ কে
ঘাসের ভেতর বিচরণশীল পিঁপড়ের মতো নীরবে চলাচল করি
তবু দুএকটা ধুলার কণা এসে চোখে জ্বালা ধরায়
প্রয়োজনীয় জলের খোঁজে গেলে বৃষ্টির মরে যাওয়া দেখি
তখন সাদা রঙকে মনে হয় যথেষ্ট কালো।
রক্তের ভেতরে চারপাঁচ বছরের শিশুদের মতো খেলা করে বিদ্রোহ
তৃণজীবী ব্রাহ্মণের মতো মন
প্রয়োজনে সংসারে কিছু পরাজয়ও খুঁজি।
নিজেকে পাথর বানাতে পারলে নিশ্চয় ভালো হতো
তাহলে কিছু কাঠ-হৃদয়ের কয়লা হতে পারতাম।
রাগে তোমার বাড়ি
..............................................
এই যুদ্ধ আমার একার পক্ষে বহন করা বেশ কষ্টের
ধার করতে চাই একটি শক্তিশালী হৃদপিণ্ড
যে পাম্প করতে জানে, থামতে জানে না।
ইরাকে রক্তপাতের পরও জাপানের সূর্য
উদিত হতে লজ্জা পায়না
আমার মন
মসলার মতো পিষে যাচ্ছে বন্ধুগণ
রাগে তোমার বাড়ি গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করে ও আমার শ্বেতাঙ্গিনী বন্ধু
লাদেনের মতো নিষ্ঠুর হতে আমার আর বাকি নেই।
সম্ভ্রান্ত ইঁদুর
..........................
ঘাস জানে মাটির মাতৃ পরিচয়। ঘাসের মধ্যে হৃদয় ইচ্ছা করলে লুকিয়ে
রাখা যায় ।
যে সবুজকে পথে ঘাটে দেখা যায় আসলে সবই গুপ্তচর
আকাশকে আঙুল দিয়ে মুছে দেবে কার বাবার সাধ্য?
জল যেন কি কাজে লাগে! আর বাতাস, এবং কাঁচাপাকা অগ্নি?
মৃতরা জানে ভালো জীবিতরা বেঁচে থাকতে বাধ্য।
ইচ্ছা করলে চিরকাল বেঁচে থাকা যায়
তবে তার জন্য কিছুকাল ঘাসের ভেতর লুকিয়ে থাকতে হয়
অথবা ছোট গর্তে স্বল্পকাল হতে হয় সম্ভ্রান্ত ইঁদুর ।
লাল পিঁপড়ের সুখ
...................................
বন্ধু তোমার বাড়ি যাবো।
ধান খেতে ডিমচাঁদ, কিছু সংখ্যক সনাতন গাছ, আকাশ বৃষ্টিরত
সন্তাপ ধুয়ে দেবে দ ধোপার মতো ।
বন্ধু ফেরত ট্রেনে ফিরবো ঢাকায় ।
ট্রেনের চাকার তলে রেখে আসবো নাম না জানা অনুতাপগুলোকে।
বন্ধু লাল পিঁপড়েগুলোকে খেতে দিও মানুষের পরিত্যক্ত সুখ।
ট্রাফিক ও শ্রীমতি রাধা
...............................................
চম্পকনগরে ফেলে এসেছি বামন পাহাড়
গাছে বসে গাইছিলো গান
কয়েকটি প্লাস্টিকের পাখি
দেখা হলে কথা বলে মানুষ, মনে হয় ধাঁ ধাঁ
গভীর হলে রাত, ঘুম থেকে জেগে ওঠে ডাইনোসর-চাঁদ
বাঁশি হাতে হেঁটে যায় ট্রাফিক, পথে
হৃষ্টপুষ্ট এক টয়োটার পায়ের তলে পড়ে
মারা যায় শ্রীমতী রাধা
ছিন্নভিন্ন তারাগুলো যেন আকাশের গায়ে জখমি দাদ।
স্নান করে দেখি
.....................................
স্নান করে এসে দেখি
সমুদ্র অনেক কিলোমিটার দূরের ব্যাপার
ভিজে গেলেই সাঁতার হয় না।
বেঁচে থাকতে থাকতে ভাবি
জীবন অনেক মাইল দূরের বিষয়
বেঁচে থাকলেই যথেষ্ট বাঁচা হয় না।
শর্ষে ক্ষেতে হলুদ বাস করে সে কেবল চোখের অনুচর
জন্ডিস জীবনে চাঁদেও আগুন ধরে যায়।
বেশকিছু পৃথিবীর প্রয়োজন
..............................................
এখন মোটামুটি শান্তির সময়।
এসেছি লবণ সমীপে
কলহ মিটে গেছে আমার।
প্রেম হতে পারে....
আকাশ বিকিনি পড়ে নেমে পড়েছে মাঝসমুদ্রে।
শান্তির জন্য বেশকিছু পৃথিবীর প্রয়োজন।
বঙ্গোপসাগর সেচে যাই
..........................................
দুটি রেলগাড়ি
মুখোমুখি
সংঘর্ষে
লিপ্ত হয়
আমরা বেঁচে থাকি বেঁচে যাই
আগুনে ঘর আগুনে সংসার
দিন রাত জেগে
আনন্দ সহযোগে
বঙ্গোপসাগর সেচে যাই আর সেচে যাই।
যিশুরা যা যা করে থাকে
....................................
আকাশ ভাঙার শব্দ কানে আসে।
কোথাও হতে পারে
ভেঙে গেছে কারো সাধের বিমান। জ্বলছে।
এ রকম মুহূর্তে কি কাজ বাকি রাখে প্রজ্ঞাবান শিশুরা?
নামতাপাঠ চলছে
......................................
া া া া া া া া া া া া া া া
দলে দলে ফাঁসিকাঠে চড়ে
আনন্দ সহযোগে ঝুলে পড়ছে মহাপুরুষেরা
কঠিন সময়ে যা যা করে থাকে মহামতি যিশুরা।
সাপের সৌজন্য
.............................
আমি শিশুতোষ চোখে দেখে থাকি
সলজ্জ হাঁসের পিছু নিয়েছে যে সরল সাপ
সে কোনো সৌজন্য জানে না ।
হৃদয়ে লেগে আছে হাজার ভোল্টের তার
শরীরে নুন, আহত রাতে
রূপচাঁদার স্বাদ
যেন একশো পাওয়ার বাল্বের আঘাতে
ভেঙে গেছে চাঁদ
নিজেরে বোকা ভেবে ঘনসমুদ্রে দিয়েছি সাতাঁর
হৃদয়ে লেগে আছে দেখি হাজার ভোল্টের তার।
জুতা
..........................
দরজায় জুতা রেখে যেমন প্রবেশ করতে হয় মসজিদে
তেমনি হৃদয় জমা রেখে প্রবেশ করতে হয় সনাতন গুহায়
বহু পদ কান্ত হয়
শেষে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ!
সবুজ ঘাসের বুকে শুয়ে থাকে নিরাশ্রয়ী সাপ,
পর্যটক পা-ই জানে জুতার প্রকৃত মাপ।
ধন্যবাদ ঈশপের কাক
......................................
সেলাম নিরর কাক, যে ছিলে গল্পে, চেষ্টারত;
কলসির মুখে শোষিত জল। পাথরও শিখে গেছে দীর্ঘশ্বাস
রপ্তানি হচ্ছে তোড়াবোড়ার অন্ধকার, শুকিয়ে গেছে রাত
নাকে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমুচ্ছে অন্ধকার
বিশপ বাতাসে দরোজা খুলে যায়, সামনে মরদেহ
কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলে
বিুব্ধ বাতাস ।
আমাদের করণীয় বলে দেন পিতামহগণ যারা দীর্ঘকাল জর্জরিত, কাতর
বসে থেকে কেবল দৃশ্য দেখেন, কপালে মেখে দ্রোহের মলম,
বর্ণনা দেন সহজলভ্য গণিকার।
শিশুর হাসি, বজ্রের শব্দ, বৃষ্টির মদ
আছে মাতাল পরি ঝাঁক
আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে,
আমাদের ইচ্ছা আছে, উপায় হবে।
ধন্যবাদ ঈশপের কাক।
দুঃখটুঃখগুলো যেন রাখালের গরু
................................
পোর্টেবল জীবন কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াই
হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সবজিগুলোর মুখ ভার
অপারেশন শেষ রোদ পোহাচ্ছে কান্ত ছুরিগুলো
সাদা এপ্রোন পড়ে বিষণœতা
হেঁটে যায় করিডোর ধরে
শত চেষ্টা সত্ত্বেও বিবাহ হচ্ছে না কালোতরুণীর
তাই গভীর রাত্রিতে ওকে øান করাচ্ছে সমকাল
জমেছে খুব মানুষ
চেখে নিচ্ছে বিষাদ।
আমি আছি কাঁচ ঘরে ছুঁড়ছি বসে ঢিল
আমার হৃদয় চুরি করে পালিয়ে গেছে নিবেদিতা চিল।
হঠাৎ লাল রং ফেরত আসে
........................................
সূর্যের এক পৃষ্ঠায় বাস করে গ্রেনেডতাজা রোদ,
আর আছে বিধবা অন্ধকার আরেক পৃষ্ঠায়
অর্কেস্ট্রায় বেজে উঠা সুরেরও আছে লিঙ্গান্তর
শ্মশান পর্যন্ত তাড়া করে আদর্শ ও সমবায় বিকল বোধ।
হাঁসের পেছনে ছুটছে যে কাতর সাপ
অথবা ব্যর্থ স্মৃতিতে ঢালছে সধবা নিরলস অভিশাপ
তাদের কথা মনে হলে বড় কষ্ট লাগে
দুঃখঅনুতাপ সম্ভবত যে কোন সসীমরান্নায় কাজে লাগে।
ভদ্রে, ভেবে শেখো, মৃত্যু বেঁচে আছে শেষনিশ্বাসে
হঠাৎ লাল রং বিকল স্ক্রিনেও ফেরত আসে।
অন্ধকার নতুন জামা পরে হাসছে
...............................................
যে কোনো নিরামিষ আগুনও পুড়িয়ে দিতে পারে
মহাপুরুষের দেহ।
সশ্রম জীবনে দাঁড়াবার স্থান নেই।
যেমন মরা মানুষের পাসপোর্ট থাকে না।
যে বিমানটিতে চড়ে দীর্ঘশ্বাস পাচার হতে চেয়েছিলো
মাঝআকাশে সে বিমান পাখি হয়ে উড়ে গেছে
বিমানবালাদের চাকরি আছে, স্মৃতি নেই।
ভূমধ্যসাগরে রঙধনু শিশুর লাশের মতো ভাসছে
অন্ধকার যেন একটা মরা কাক, নতুন জামা পরে হাসছে।
স মিলে শুয়ে আছি
..............................
মিষ্টি করে হাসছে জীবনের পায়ের তলে
বসে থাকা কফিনটি
মন খারাপ করে রেখেছে একটি অর্ধ-কর্তিত গাছ
স মিলে শুয়ে আছি চোখ মেলে।
মনে হচ্ছে, ঘনসমুদ্রে ডুবে গেছে তরুণ ট্রলার।
যাদের গৃহবধূ হবার সখ ছিলো
.................................................
সদ্যবিবাহিত মৃত্যুকে নিয়ে আমার কোনো নতুন বক্তব্য নেই
এমনও হতে পারে আগামি বর্ষার আগেই সে জন্ম দেবে
বেশকিছু কফিন
আমরা হারাবো কয়েকজন বৃষ্টি-প্রতিবন্ধী
যাদের অন্তত গৃহবধূ হবার সখ ছিলো।
আসলে যে কোনো দিন প্রেমিকের সাথে দেখা
হতে পারে প্রেমিকার
মেছতার দাগের মতো মিলিয়ে যায় অভিমান।
ঘোড়ার ডিমের পৃথিবীতে
...........................................
ঘোড়ার ডিমের পৃথিবীতে বসে আছি
মাথায় ব্যাঙের ছাতা
হাতে ভাঙা হারিকেন
ফ্যাশনবশত দুঃখ খুঁজে পাই
দুঃখের ঘটকালি করি।
বাস করি ছাতুর দেশে, যেখায়
সূর্য ডুবতে আন্তরিক ভয় পায়, ছিনতাই হয় রাত্রির বালা
নদীর জল বাষ্প হতে চায় না আপসে, হুমকিসমেত
জোরাজুরি না করলে ভূমিষ্ঠ হয় না শিশু।
বসে ছাতার কথা মুখস্ত করি, কচু হয়, বাজে কাজের সিম্ফনি,
সদাপ্রভুর মাথা নিচে, পা উপরে, করি অকারণ টানাটানি।
মৃদুমৃত্যুর গন্ধ!
...........................
রেক্সিনে মোড়ানো ভোরের সূর্য
পঁচা ট্রাকের মতো কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
নিখোঁজ ঈশ্বরের ছেলেমেয়ে,
মেঘের ভেতর সন্ত্রাসী বিমান
প্রার্থনা ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছে দুঃখ
যেন অনেক অসহায় জুতা
হাসপাতালে মৃদুমৃত্যুর গন্ধ, যেন নীল প্যালেস্টাইন।
অন্ধচশমা মুরগির মতো তা দিচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত চোখ।
রোদের শব্দ
...............................
কচুপাতার উপর টলমল করছে শ্রেণীহীন জল
সশস্ত্র প্রেম খুঁজে পেয়েছে প্রতিবিপ্লবীর জামা
এতিম শিশুর মতো মুখ ভার করে আছে ভোরের সূর্য
অনিচ্ছায় ছড়িয়ে রেখেছে
অপ্রাপ্তবয়স্ক লজ্জার মতো কিছু রোদ
ইতিহাসের আশ্রয় শিবিরে ঝরছে অনাথ বৃষ্টি
বিলীন হবার শব্দে চমকে যাবার প্রয়োজন নেই
ইচ্ছা করলে যে কোনো রোদে মেলে ধরা যায় প্রতিহিংসার বোধ।
আমার বলার পরও অনেক কিছু বলার থাকবে
গৃহিণীরা শর্ষে দিয়ে সহিংস ইলিশ রাঁধবে
মেঘকাতর দুপুরে পোকায় খাওয়া আধাপাকা সূর্যটা
রোদের শব্দে কাঁদবে।
কন্যাদ্বয়কে বলি
..............................
চুপ করে দেখি তের উপর বসে থাকা কান্ত মাছির ঘুম।
নিদ্রার ভেতর দৈত্যের শুভ আগমন
তথায় বিনীত আপ্যায়ন
মৃত্যুর দুই পা ধরে কোনোমতে বেঁচে থাকার সমবেত সঙ্গীত।
বসে বৃষ্টির শব্দ গুনি
দেখি উড়ন্ত মাছের আকাশ ভ্রমণ
বিদ্যুতের খুঁটির নিচে বসে থাকা প্রাণী
আকাশের চামড়া ধরে করছে টানাটানি।
শীতের দিনে জানালা খুলে রেখে শুতে নেই
স্বীয় কন্যাদ্বয়কে কাতর স্বরে বলি
বিদ্যুতের তার ভেজা হাতে ছুঁতে নেই।
ওভারব্রিজ কাঁদে না ভেঙে পড়ে
...............................................
অর্ধ রূপসীরা যেমন ভালোবাসে পার্লারের সাজ
মানুষ তেমনি কেঁদেকেটে
চোখে জলের দাগ এঁকে
ঘরে ফেরে
কান্নাকাটি করা মানুষের এক ঐতিহাসিক কাজ।
শতশত টন পদভার কিংবা যানবাহনের গতি
কাঁধে নিয়েও কাঁদে না কোনো পুরনো সেতু
মাঝে মাঝে দুএকটা ওভারব্রিজ
অভিমান করে টয়োটার ছাদে লাফিয়ে পড়ে
আকাশ কাঁদে, ঘরের ছাদকে কখনো কাঁদতে দেখি না
অনেক কিছু আছে, ঘটে, পেছনে থাকে না কোনো জুতসই হেতু।
কিছু কিছু কাজ করার ইচ্ছা
.........................................
রেঁস্তোরার বিষণ্ন ওয়েটারের টাইয়ের মতো
অপরিহার্য হতে চাই না পৃথিবীতে
কারণ আমার চোখে রোজ ভোরে সূর্য এসে
ডিম পেড়ে যায়।
কিছু কিছু কাজ করার ইচ্ছা জাগে মনে
যেমন আকাশটাকে আর একটু নিচে নামিয়ে আনা
সমুদ্র সেচে কিছু শিশুতোষ মাছ ধরা এবং ছেড়ে দেওয়া
...ইত্যাদি
আশা ও অমাবস্যার মাঝখানে বাস করি
পাহাড়ী ঝর্নার চোখের কোণে জমে থাকা ক্লান্তি হতে
ভালোবাসি।
দুঃখ আমাকে মামা বলে ডাকে
.............................................
বেডরুমের দরজায় লিখে রেখেছি
‘এই ঘরে দুঃখ-কষ্টের প্রবেশ নিষেধ’
দুঃখ কষ্ট হচ্ছে বড় ডাকাত ভেতরে ঢুকে পড়ে
ডাকাতকে কেউ কি অনুমতি নেবার সৌজন্য মনে করিয়ে দেয়?
দুঃখ আমাকে মামা বলে ডাকে
তবে কি অন্ধকার আমাদের প্রয়াত জননী?
বাতি জ্বালালে অন্ধকার পালায়
একথা দুধের শিশুরাও জানে
আমি অন্ধকারে কখনো
সুইচ খুঁজে পাই কখনো পাই না।
চিংড়িমাছের মতো রক্তশূন্য শহর
...............................................
কে তুমি ভাই, দয়াকরে, এসেছিলে আমার ঘরে?
না পেয়ে আমাকে
খুন করে রেখে গেলে আমার ছায়াকে।
আমি বিশ্বস্ত পাগলের মতো মরে পড়ে আছি
চিংড়িমাছের মতো রক্তশূন্য শহরে
অপরিচিত শত্রু আমাকে ফেলে রেখে গেছে
পরাজিত সৈন্যের বহরে।
আমি কোথায়?
শীতে কাঁপছি।
কাতর কুয়াশা, সামনে বরফের সাঁকো
অনুমানই একমাত্র যানবাহন
আমি আন্তরিক আগুনের খোঁজে গেছি
আশেপাশের গ্রামে।
আমি আর গরু মিলে
..........................................
যথাসময়ে মৃত হতে পারতাম।
লাভবান হতো লালপিঁপড়া বা
আন্জুমানে মফিদুল হক
কিন্তু জীবনকে চেখে দেখা আমার আন্তরিক সখ।
মরে যাওয়া হলো না আমার
আমি আর অসংখ্য গরু মিলে
আলো করে আছি নির্দয় খামার।
মশার কয়েলের মতো
গুঁড়ো হয়ে যায় টুইনটাওয়ার
..............................................
একটি বেগুনকে কেন্দ্র করে পুড়ে যায় অপরিচিত আগুন ।
আকাশ কাঁপতে থাকে, মাস্তান বিমানের উৎপাত
মরুভূমি ধু ধু
আয়নায় পোষা বানরের ছায়াছবি দেখে
ভয়ে কেঁদে ফেলে গৃহবধূ।
সরল শিশুরা খেলছে মাঠে, এখন টিফিন আওয়ার
দাঁড়াতে দাঁড়াতে একসময় গাছও ঘুমিয়ে যায়
মশার কয়েলের মতো গুঁড়ো হয়ে যায় টুইনটাওয়ার।
পোলট্রি জীবনে প্রধান অতিথি
............................................
ধীবরের হাত থেকেও মাঝে মধ্যে উচ্চাভিলাষী
মাছ পালাতে পারে। আর সঙ্গীসাথীদের
ভালোমতো বোঝাতে পারে জলের স্থবিরতা । ট্রলারে করে
পার হয় যে সকল চোরাকারবারি, তারাই জানে ভালো
সমুদ্রের গভীরতা , আর নীল সংকেতও জ্বালাতে পারে।
আগুন আর আকাশের মাঝে আছে কিছু
দরকারি বিরোধ
একজন পছন্দ করে
পোড়ায় বিধবার শাড়ি
আর জন মেখে দেয় নৃশংস নীলরোদ
জাদুঘরে শুধু শুধু হাঙ্গামা করে টিপু সুলতানের তরবারি।
পোলট্রি জীবনে প্রধান অতিথি আজ ভয়
লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে হিমালয়।
সেনাবাহিনীর পোশাক পরে
.........................................
আমি সেনাবাহিনীর পোশাক পরে লুকিয়ে থাকবো
সে আসবে নার্সের পোশাক ধার করে
একটি বাঘ ও তরুণী হরিণীর প্রেম
জানবে বিশ্বের জ্ঞানী কিশোরেরা
তোমার আমার দূরত্ব
যেন চোখ ও পৃষ্ঠার ফারাক
যে অপহৃত হতে ভালোবাসে
সে ভালোমতেই পথটা হারাক।
আমি ডুবে যেতে ভালোবাসি অপ্রস্তুত জলে।
অন্ধকারের আছে কালো চশমা
.............................................
তারে কোন বাঘে খেল
যে আমার সাথে বনে যেতে চেয়েছিলো?
বহন করে এনেছি দেশলাইয়ের জীবন
ভিজে গেছে অচেনা বৃষ্টিতে।
যে কোন অন্ধকারের আছে কালো চশমা
যে কোন সকাল অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হৃদয় পুড়ে গেলে ধোঁয়া দেখা যায়
.............................................................
ফায়ারবিগ্রেড আসে সাধারণত আগুন নিভে যাবার পর
পুড়ে যায় হৃদয়। পোড়া কাঠ বিশেষ কাজে লাগে না।
চশমার কাঁচে লেগে আছে অসহায় ধুলো
অস্পষ্ট পাহাড়ের পাদদেশে এক তরুণ
হাত নেড়ে তাড়াচ্ছে ভেড়া
আমি সদ্যজাত সূর্যের মাঝে রক্তপাত দেখে
কেদেঁছিলাম।
মন জানে বিদায়ের পরও দায় থাকে।
স্কচটেপ দিয়ে হৃদয়ের মুখ
বন্ধ করা যায় না
......................................
হাত থেকে পড়ে গেছে চায়ের পিরিচ
জীবন পড়ে যায়নি
নাকে পোড়া গন্ধ
সূর্যে কি লেগে গেছে কোন অপরিচিত আগুন?
টেবিলে সাজানো ছিলো নানা পদের জীবন
বেছে নিতে বলা হলে
শেষ পর্যন্ত মৌনই থেকে গেছি
চাবি দিয়ে বন্ধ করা যায় টিপকলের জল
স্কচটেপ দিয়ে হৃদয়ের মুখ বন্ধ করা যায় না।
.........................................................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।