আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরুজীবন-১: কাতার

দ্য কাপালিক ইজ ব্যাক

কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের খুব ছোট্ট একটা দেশ। মাত্র ১১,০০০ বর্গ কি.মি. আয়তন। লম্বা-লম্বি এ-মাথা ও-মাথা পাড়ি দিতে বড়জোড় ২ ঘণ্টার মামলা। রাজধানী "দোহা"।

মুদ্রার নাম "রিয়াল"। বাংলাদেশের প্রায় ১৯ টাকার সমান। দেশটার তিন দিকেই সাগড়। প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বর্ডার সৌদি আরবের সাথে। আর আছে আরব-আমিরাত।

দুই দেশের সাথেই স্থলপথে সংযোগ আছে। হজ্জ্বের সময় সবাই এদশে থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে সৌদি চলে যায়। উত্তর দিকে সাগড় পাড়ি দিয়ে ৪/৫ কি.মি. গেলে বাহরাইনের ছোট্ট একটা দ্বীপ। এরপর বাহরাইন মেইনল্যান্ড। কাতারের নিজস্ব জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখের মতো।

এক সময় এদের প্রধান জীবিকা ছিল সাগড়ে মাছ ধরা। এর পর মুক্তার চাষ। তেল আবিস্কারের পর এরা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোর একটি। নির্মান শিল্পের মহা স্ফিতীর কারণে সারা দুনিয়ার লোক এসে হাজির হয়েছে এখানে জীবিকার তাগিদে। এখন এদেশে নিজস্ব জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশী বিদেশী।

সবচেয়ে বেশী লোক ভারতীয় উপমহাদেশের। তাই আরবীর পরেই এদেশে হিন্দির স্থান। মধ্যপ্রাচ্য মানেই মরুভূমি। এদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়। পুরো দেশটাই স্রেফ মরুভূমি।

এরই মধ্যে তৈরী হয়েছে ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট। গাছপালা যে একদম নেই তা নয়। প্রচুর পরিমানে আছে খেঁজুর আর বড়ই গাছ। এদেশের বড়ই খুবই মজার। ধরেও প্রচুর পরিমানে।

বেশীর ভাগ বাড়ীর সামনেই একটা-দুটা বড়ই গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু এরা নিজেরা এ বড়ই ছুঁয়েও দেখে না। বিদেশীরাই ইচ্ছেমতো নিয়ে খায়। কেউ কিছু বলে না। খেঁজুরের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

সব রাস্তার পাশে খালি খেঁজুর গাছ। এছাড়া আর যেসব গাছ জন্মে সবই ঝোপ ধরনের। শক্ত কান্ডওয়ালা উঁচু গাছ চোখে পড়ে না খুব একটা। আবহাওয়া খুবই রুক্ষ। শীতের সময় প্রচন্ড ঠান্ডা, আর গরমের সময় স্রেফ নরক।

মরুভূমির দেশে এত ঠান্ডা পড়ে তাই জানতাম না। তাই আসার আগে শীতের কাপড় তেমন একটা নিয়ে আসিনি। এসে দেখি প্রায় বরফ পড়ার কাছাকাছি ঠান্ডা। এখানে শীত নামায় বাতাস। কোথাও কিছু নেই - একদম স্বাভাবিক আবহাওয়া - হঠাৎ শুরু হয় বাতাস।

প্রচন্ড বাতাস। এত বাতাস যে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। আর প্রচন্ড ধূলা। সূর্যের মুখ দেখা যায় না। এ অবস্থা একটানা চলে কয়েকদিন।

মজার ব্যাপার হলো এখানে শীতকালে বৃষ্টি হয়। সর্বোচ্চ পরিমান ঠান্ডা পড়ে বৃষ্টির সময়। একবার শুরু হলে সর্বনিম্ন এক সপ্তাহ। শহরে ড্রেনেজ সিস্টেম নেই বললেই চলে। বৃষ্টির সময় রাস্তায় কোমড় সমান পানি জমে যায়।

শ'য়ে শ'য়ে গাড়ি অচল হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। ট্যাঙ্কারে করে রাস্তার জমা পানি নিষ্কাশনের জন্য নিয়ে যায়। ইদানিং এরা পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় পাইপ বসানো শুরু করেছে। সব জায়গায় রাস্তার পাশে খোঁড়াখোঁড়ি শুরু করেছে। বৃষ্টির পর দেখা যায় আরবরা বড় রাস্তার পাশে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে লাফ-ঝাপ করছে।

তখন এরা মহা খুশি। আর গরমের সময় অবস্থাটা স্রেফ নরক। সবচেয়ে বেশী গরম জুন-জুলাই-আগস্টে। এ যে কি গরম - কেউ নিজে না দেখলে কল্পনাও করতে পারবে না। প্রথমত রোদের প্রচন্ড তাপ।

দ্বিতীয়ত প্রচন্ড গরম বাতাস। মনে হয় বাতাস চামড়া ভেদ করে চলে যাবে। সব সময় ফুল হাতা শার্ট পড়তে হয়। টুপি এবং চশমা মাস্ট। বড় রুমাল দিয়ে মাথা-ঘাড় সব ঢেকে রাখতে হয়।

সারাক্ষণ গলা শুকিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর পর কুলারের ঠান্ডা পানি খেতে হয়। এদেশের প্রতিটা মসজিদে এবং অনেক বাড়ীর সামনের দেয়ালে রাস্তার পাশে কুলার বসানো থাকে, যেখানে বরফ শীতল পানি পাওয়া যায়। নির্মান শিল্পে লেবার ভিসায় যেসব শ্রমীক এখানে আসে, এরা যে কি অমানবিক কষ্ট করে টাকা রোজগাড় করে দেশে পাঠায়, দেশে বসে তা কল্পনা করা সত্যিই অসম্ভব! (চলবে..তবে কত দিন জানি না !)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।