আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি রণজিৎ দাশের সঙ্গে আড্ডা



`শিল্পের মজাই হচ্ছে সে কখনো মেসেজ দেয় না' পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, বাংলাদেশের তরুণ কবিদের কাছেও দারুণ জনপ্রিয় সত্তরের দশকের কবি রণজিৎ দাশ। এ বছরই ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ৪ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে কবিতাবিষয়ক এক আড্ডায় অংশ নেই আমরা কয়েকজন- আমি ফেরদৌস মাহমুদ, সফেদ ফরাজী, মাহমুদ শাওন ও জুয়েল মোস্তাফিজ । : প্রায় বিশ বছর পর বাংলাদেশে এলেন। দুই দশক পর বাংলাদেশে এসে কোনো পরিবর্তন কি আপনার চোখে পড়েছে? রণজিৎ দাশ : এর আগেরবার ঢাকাতে আমি সাতদিনের জন্য এসেছিলাম, এবারও কুড়ি বছর পর ছয়-সাতদিনের জন্যই এসেছি।

দুবারই বলা চলে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে আসা। কাজেই এতে আর একটা দেশ কতটুকু আর চোখে পড়ে ! তবু বলব, খুবই লক্ষণীয় পবিরবর্তন চোখে পড়েছে। আমি বলব, তফাতটা হচ্ছে কুড়ি বছর আগের দেখা ঢাকার সঙ্গে আজকের ঢাকা শহরের তফাত। ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের যে চাকচিক্য বেড়েছে তা অভাবনীয়। এখানে এত ইমারত গড়ে উঠেছে, এত আধুনিক পাশ্চাত্যশৈলীর সুন্দর সুন্দর বাড়ি, বহুতল দালান ও চমৎকার রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে যে ঢাকাকে আমার খুব আধুনিক শহর মনে হয়েছে।

কুড়ি বছর আগে ঢাকাকে আমার এত আধুনিক শহর মনে হয়নি। আশার কথা হলো ঢাকার উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্র্রেণী অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে যে অনেকখানি এগিয়ে গেছে, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ঘুরতে গিয়ে, কবিতা উৎসবে গিয়ে এবং এখানকার অনেকের সঙ্গে মিশতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে। এটাও কিন্তু লক্ষণীয় ফ্যাক্টর- যা অস্বীকার করলে চলবে না। তারপরও আমি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সাধারণত যে কথাটি বলে থাকি, এ ক্ষেত্রেও তাই-ই বলব, প্রত্যেকটি দেশের মধ্যেই সাধারণত দুটি দেশ থাকে; বিশেষ করে যদি সেটা উন্নয়নশীল বিশ্বের কোনো দেশ হয়। সেটা হলো একটা গরিবের দেশ আর অপরটা বড়লোকের দেশ।

এই ব্যাপারটা ভারতবর্ষেও আছে, বাংলাদেশেও আছে। আমি যেটুকু দেখলাম, তাতে বড়লোকের দেশের চাকচিক্যের পরিবর্তনটা দেখলাম এবং তাই-ই বললাম। কিন্তু গরিবের দেশের কী পরিবর্তন ঘটল, সেটা তলিয়ে গেছে নাকি উপরে উঠেছে সেটা কিন্তু বলতে পারব না। আমার পক্ষে বলাও সম্ভব না। সেটাই হয়তো আসল কথা, যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ ওই গরিব দেশেরই অধিবাসী।

: মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটি আসলে কোনদিক থেকে বোঝাতে চাইছেন? রণজিৎ দাশ : বর্তমানে বাংলাদেশ সব বাধা-বিপত্তি, উত্থান-পতন সত্ত্বেও প্রগতির দিকে এগিয়ে চলেছে সাংস্কৃতিক অর্থে, অর্থনৈতিক অর্থে। প্রগতি কিন্তু খুব দুরূহ জিনিস। এটা পেতে খুব কষ্ট হয়। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আমি বলব, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশ কোনো কোনোভাবে প্রগতির দিকেই এগিয়ে গেছে। প্রগতির গোটা ছাপটা খুবই আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে।

: এবার বাংলাদেশে এসে এ দেশের অনেক তরুণ কবির সঙ্গে মেশার একটা সুযোগ আপনার হয়েছে। আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন এখানকার তরুণদের মধ্যে আপনার কবিতার প্রতি এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন। রণজিৎ দাশ : হ্যাঁ, এখানে এসে জানলাম বাংলাদেশের তরুণরা আমার কবিতা ভালোবাসে। আমার কবিজীবন চল্লিশ বছরের প্রায়।

আসামের শিলচর শহর থেকে আমার কবিজীবনের শুরু। আর এ পর্যন্ত লেখকজীবন প্রায় চল্লিশ বছরের। ফলে দীর্ঘ প্রচেষ্টা-প্রয়াসের, পরিশ্রমের যে ইতিহাস অনেকের আছে, আমারও তাই-ই। কিন্তু তোমাদের কাছে এসে, তোমাদের সঙ্গে মিশে, ঢাকার তরুণ কবিদের কাছে আমার কবিতার সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য শুনে একটা নতুন প্রেরণা পেলাম। মনে হলো, আমার কবিজীবন একটা তাৎপর্যে এবং একটা মাত্রায় ম-িত হয়েছে।

কলকাতাতেও আমি এটা টের পাই- যা না বললে মিথ্যা বলা হবে। কলকাতার তরুণ কবিরাও আমার সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। তারাও আমার কবিতা খুব ভালোবাসে। তবে সেটা তো আমার প্রায় নিজের শহরের ব্যাপার। কারণ আমি কলকাতারই মানুষ।

কিন্তু এখানে, এত দূরবর্তী বাংলাদেশে ঢাকার তরুণদের মধ্যে যে আমার কবিতার প্রতি আগ্রহ রয়েছে তা আমাকে অদ্ভুত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করেছে। `তরুণ রচনার অগ্নিশক্তি' যাকে বলতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সেই তরুণ রচনার অগ্নিই যেন আমি পেলাম তোমদের সঙ্গে মিশে, তোমাদের কারও কারও বইপত্র পড়ে। : আপনার শৈশব তথা আসামের জীবন সম্পর্কে বলুন। রণজিৎ দাশ : আমার পূর্বপুরুষ কিন্তু ঢাকার। আমার পিতৃভূমি ঢাকার বিক্রমপুর।

তবে আমার জন্ম বাংলাদেশে নয়। আসামের শিলচরে আমার জন্ম। এ ক্ষেত্রে আমার শুরুর দিনগুলোর কথা বলতে বললে আমি বলব, শিলচর একটা জমজমাট মফস্বল শহর। আসামের একটা অন্যতম প্রধান শহর। অত্যন্ত আধুনিক শহর।

বলা যায় শহরটা বাংলাদেশেরই একটা স¤প্রসারণ। শ্রীহট্ট জেলা। ওখানকার নব্বইভাগ মানুষ হচ্ছে সিলেটি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি থেকেই আমি কলকাতাতে গিয়েছি। কারণ আমি ফুয়েন্টলি সিলেটি বলতে পারি।

এখনো অনেকে আমাকে সিলেটি বলে মনে করে। কারণ আমি জন্ম থেকে সিলেটিদের মধ্যে বড় হয়েছি। যদিও আমার বেড়ে ওঠার চতুর্দিকের পরিবেশ ছিল শ্রীহট্টের; আমি গভর্নমেন্ট স্কুলে পড়েছি শিলচরে। শিলচরের একটা সমৃদ্ধ নাগরিক সংস্কৃতি থেকে আমি গিয়েছিলাম কলকাতাতে। তার মানে বাংলাদেশের একটা সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি আমি।

এই বাংলাদেশ কিন্তু ছড়িয়ে আছে সব জায়গাতে। : আপনার বাবা ভারতে চলে গিয়েছিলেন কখন? রণজিৎ দাশ : ১৯৪৮ সালে। তার আগ পর্যন্ত তো আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের ঢাকার মানুষ। এখানেই বারবার বর্ডার ভুলে যাওয়ার জায়গায় আসতে হবে আমাদের। আমি মনে করি সার্কের যেসব দেশ আছে তার ভিসা প্রথাই উঠে যাওয়া উচিত।

ভারতবর্ষের অনেকে জানেই না বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মানসিকতাটা। লক্ষ্য রাখতে হবে এপার বাংলা ওপার বাংলার ভিন্ন মাইন্ডসেট যেন তৈরি না হয়। এই মাইন্ডসেটটাই ভাঙতে হবে। যত সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটবে, যত মেধার বিনিময় ঘটবে, তত আমাদের সংস্কৃতির উন্নতি ঘটবে বলেই আমার বিশ্বাস। : শৈশবের সেই দিনগুলো কেমন ছিল? শৈশব আপনার কবিতায় কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে? রণজিৎ দাশ : যেকোনো লেখক বা কবির জীবনে শৈশব তো অবশ্যই অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ।

যেকোনো মানুষের জীবনে শৈশবের ভূমিকা অনেক। আমার বাল্যকাল একটা অপূর্ব সুন্দর, স্বাধীন এবং বাঁধনহারা বাল্যকাল। এটাই আমার শক্তি। আমার বাবা উদ্বাস্তু, নিঃস্ব অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন ওপারে, আসামে। তারপর তার ছটি সন্তান হয়েছে।

তার মধ্যে জ্যেষ্ঠ আমি। সম্ভবত আমি যখন আমার মায়ের গর্ভে তখন তাদের এই উদ্বাস্তু যাত্রা হয়। আমার `ইতিহাস' কবিতায় আছে এই প্রসঙ্গটা। বলেছি না- `মেঘ দেখে মনে পড়ে ওই পিছিয়ে পড়া কান্ত মেয়েটি আমার মা। ' আমি একটা মোটামুটি হিসেব করে দেখেছি, আমার মা তখন আর্লি গর্ভধারিণী।

যা হোক, ওই যে ছটি সন্তান মানুষ হলাম, বাবা কত পরিশ্রম করলেন, সব মহাকাব্যিক ব্যাপার। আমার বাবাও খুব মেধাবী মানুষ ছিলেন। কিন্তু পার্টিসনের কারণে তিনি তো মেট্রিক পাসও করতে পারেননি। রাত হলে আমার মা-বাবা গুনে দেখতেন পাতা বিছানায় ছটি মাথা ঠিকমতো আছে কি না। একটা দূরন্ত দুঃসাহসিক বাল্যকাল আমি কাটিয়েছি।

আজকের যে আধুনিক সমাজকে আমরা দেখি তা মেকি মনে হয়, স্বার্থপর, কৃত্রিম মনে হয়। আমার শৈশব তেমন ছিল না। এখন তো উন্মুক্ত খেলার মাঠ নেই। সবকিছু ফাটবন্দি হয়ে গেছে। ফলে বলা যেতে পারে একটা ভীষণ ভালো বাল্যকাল আমি কাটিয়েছি।

: আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভেতর থেকে আপনি যে অনুষঙ্গগুলো নেন তা এতটা জীবন্ত, মায়াময় হয়ে ওঠে কীভাবে? যেমন আপনি `ইতিহাস' কবিতাটির কথা বললেন, এই যে পর্যবেক্ষণীয় দৃষ্টি- এটা আয়ত্ত করলেন কীভাবে? রণজিৎ দাশ : দেখার চোখ সম্পর্কে বা পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বলব, এই কবির চোখটা ডেভলপ করতে হয়। এটা একটা সচেতন মানসিক প্রশিক্ষণের ব্যাপার, এবং মানসিক প্রবণতারও ব্যাপার। দুটি জিনিস আছে : একটি প্রবণতা, অপরটি প্রশিক্ষণ। কবিকে সারক্ষণ আত্মসমীক্ষা করতে হয়। তাতে করে দুটি জিনিস বোঝা যায় যে, কবি হিসেবে আমার প্রবণতা কী সেটা শনাক্ত করতে হবে এবং নিজের প্রবণতার বিরুদ্ধে যেতে হবে।

বহু ধরনের কবি হন। কবিতার বা শিল্পের মজাই হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তি অত্যন্ত স্বতন্ত্র। ফলে কাউকে কখনো নকল করতে নেই। তাহলে কী করতে হয়? আগে নিজের প্রবণতাকে চিনতে হয়। সেই প্রবণতারও অনেক চ্যানেল আছে।

সেই প্রবণতায়ও অসংখ্য কবি আছে। হয়তো তুমি বুঝলে আমার প্রবণতা এই, আমি খুব একটা মগ্নচৈতন্যের কবিতা চর্চাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেই কবিতাতেই দেখা যায় আমি সার্থক। তুমি একটু ভেবে দেখলে। তখন তুমি সেই প্রবণতা অনুযায়ী নিজেকে প্রশিক্ষিত করবে।

এভাবেও তোমার প্রশিক্ষণ। প্রবণতা এবং প্রশিক্ষণ। প্রবণতা শনাক্ত করা এবং প্রবণতা অনুযায়ী নিজেকে প্রশিক্ষিত করা- সব নিজেকেই করতে হয়। শিল্পের আঙিনা অসম্ভব নিঃসঙ্গ। যতই আমরা বন্ধুতে বন্ধুতে মিশে থাকি না কেন কোনো লাভ নেই, একটুও এগোতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের লেখার টেবিলে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে একা বসছি।

এটা না হলে এক ইঞ্চিও এগুনো সম্ভব না। : অনেক ক্ষেত্রেই বলা হয়ে থাকে, অমুক কবিতায় কোনো মেসেজ নেই, তমুক কবিতায় আছে ইত্যাদি। আপনি আপনার কবিতায় কোনো মেসেজ দিতে চান কি না? রণজিৎ দাশ : না, আমি কোনো মেসেজ দিতে চাই না। মেসেজ শব্দটা শিল্পে ব্যবহার করাই খুব বিপজ্জনক। শিল্পের মজাই হচ্ছে, শিল্প কখনো মেসেজ দেয় না।

মেসেজের একটাই অর্থ, সেটা হচ্ছে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অর্থ। শিল্পের জায়গাটাই হচ্ছে, সে কখনো মেসেজ দেবে না। মেসেজের জন্য অন্য অনেক জায়গা রয়েছে, সারা দুনিয়া মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। তার একটা প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নীতিশাস্ত্র। শিল্প হচ্ছে সেই মেসেজকে অস্বীকার করে মানুষকে যে জায়গাটা দেয়, সেজন্য মানুষ শিল্পের কাছে আসে।

মেসেজ মানে জ্ঞান। শিল্প কখনো জ্ঞান দেয় না। : তাহলে কবিতায় কোনো মেসেজ থাকবে না? রণজিৎ দাশ : মেসেজ যদি তোমার কবিতা দেয় তাহলে খুব অসুবিধায় পড়বে। শিল্পের মূল বিষয় হচ্ছে, কিটস যেটা বলে গেছেন, সবাই যেটা সারাক্ষণ ব্যবহার করে, তা হচ্ছে- একসেপ্টেন্স অব অল ডাউটস আনসার্টেনটিস। এটাই কবি কিটসের নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটির তত্ত্ব।

প্রত্যেক কবির জানার ও বোঝার মতো একটি ছোট তত্ত্ব। ওই নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটি অবশ্যই একজন কবিকে জানতে হবে। আমার যে কবিতার প্রকরণ কৌশল তার মূল হচ্ছে নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটি। আমি কোনো সিদ্ধান্তে যাব না। আমার শিল্প কোনো সিদ্ধান্তে যাবে না।

ওই নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটি, অর্থাৎ নেতিবাচক সক্ষমতা অদ্ভুত প্যারাডক্স। অন্যেরা যেমন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বিজ্ঞান সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, দর্শন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, ধর্ম সিদ্ধান্তে পৌঁছায় কিন্তু আমি শিল্পী কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পথেই যাব না। আমি যাব নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটিতে। নেতিবাচক সক্ষমতায়। সব ডাউট, সব ভ্যাবলা ভাব- এটাই হচ্ছে আমার পথ।

: আপনি লিখেছেন, যে কোনো গরীব দেশে ভিখারিরা সুগায়ক হয়। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ তথা নিম্নবর্গীয় মানুষের যে কোনো ব্যথা সুর হয়ে প্রকাশ পায় কেন? রণজিৎ দাশ : কবিতা তো অত ভেবেচিন্তে লেখা হয় না। কবিতার প্রকাশ তো আসলে আকস্মিক। তবু বিজ্ঞানের যৌক্তিকতা আমার বিভিন্ন কবিতায় হয়তো আছে। যে কবিতাটার কথা বলা হলো, ওটা আসলে খুব কাছ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে এসেছে।

বরাবরই আমি লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতাম। সেখানে দেখেছি অন্ধ গায়ক বা ভিক্ষুক গায়ক। সেটাই হয়তো উঠে এসেছে আমার কবিতায়। এটা ঠিক যে আমার সমাজচিন্তা সচেতনভাবেই এসেছে। সেটা না হলে আমি ওই লাইন লিখতেই পারতাম না।

আবার এটাকে যদি কেউ সামাজিক ভাবনার স্তর থেকে দার্শনিক ভাবনার জগতে নিয়ে যায়, তাহলে দেখা যাবে সব মানবজাতির সমস্ত ব্যথার প্রকাশই সুরে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো দেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীটাই তৃতীয় বিশ্ব, এভাবেও দেখা যায়। কারণ মানবজাতি জানে না ঈশ্বর আছে কি নেই। মানবজাতি জানে না তার এই জীবনের অসংখ্য দুঃখ-কষ্টের কোনো সমাধান আছে কি নেই। একজন ধনী লোকও কিন্তু সমানভাবে অসুখী।

ফলে এটা সেই তাৎপর্যও। একজন কবিকে সব সময় তার কবিতার দার্শনিক তাৎপর্যটাও শুনতে হবে। দার্শনিক তাৎপর্য না থাকলে একজন কবি হয়তো কোনো ভাষার প্রধান কবিদের একজন হয়ে থাকতে পারবেন কিন্তু কখনো মহৎ কবি হতে পারবেন না। এবার রবীন্দ্রনাথের গানে চলে আসি। রবীন্দ্রনাথের আনন্দের গান শুনলেও আমার চোখে জল আসে।

আমি রবীন্দ্রনাথের গানও লোকের সামনে শুনতে পারি না। আমার চোখে জল এসে পড়ে। এর কারণ রবীন্দ্রনাথ গানে মানুষের চিরন্তন অনুভূতিকে ছুঁতে পেরেছিলেন। এভাবে প্রতিটি কবিতাকেও কোনো না কোনোভাবে মহত্তম চিরন্তন জায়গাটাকে ধরতে হয় যেটা দেশ-কালের ঊর্ধ্বে। : আপনার কবিতাতে আছে, কলম ও সঙ্গমের ফলে একটা ঘড়ির জন্ম হয়।

কিংবা আপনার প্রতীক্ষা কবিতাটির কথা বলা যায়, একই সঙ্গে বিজ্ঞানের যৌক্তিকতা ও দার্শনিক স্তর থেকে উঠে আসা বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ একটি চমৎকার কবিতা। রণজিৎ দাশ : আগেই বলেছি কবিতার প্রসেসটা তো আসলে আকস্মিক। এ ক্ষেত্রে অবচেতনের এবং চেতনের সংযোগস্থলে সব কারবারটা ঘটে। এটাকে সচেতন মন দিয়ে বা মেধা দিয়ে বোঝা যাবে না। সেই জায়গাটা মনে হয় অজ্ঞাত রাখাই ভালো।

এটা নিয়ে প-িতি কচকচি করে লাভ নেই। এটা যখন আসে উদ্ভাসের মতো আসে। কারণ কী, প্রত্যেক কবির মতোই আমার একটা এন্টিনা খাড়া আছে। আমি চাচ্ছি মহাশূন্য থেকে রেডিও সংকেত, সেখানে প্রাণ আছে কি নেই। ওই কবির যে এন্টিনা তৈরি করা আছে, ওটাই আসলে সব সংকেতকে ধরে।

ওটাই তার সেই হৃদয়ের এন্টিনা। কিন্তু তার যে পুরো কারিগরিটা তা হচ্ছে মেধার। এন্টিনার কারিগরিটা মেধার কিন্তু মেটিরিয়ালটা হৃদয়ের। আমি তো একটা জিনিসই বুঝতে চাই, তা হলো মানব জীবনের অন্তহীন বেদনা। এর অর্থই-বা কী, এর উপশমই-বা কী? এই যে বুঝতে চাওয়া এটা তো বিজ্ঞানীরই কাজ।

এখানে তো আমি একজন বিজ্ঞানী। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, যে যখনই কিছু বুঝতে চাইবে তখনই তার মধ্যে একটা বিজ্ঞানী চলে আসবে। এখানেই হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর। আমার কবিতার সঙ্গে অন্যের একটা বিশাল তফাত এই যে, আমি সব সময়ই নিজেকে বুঝতে চাই। আমার ব্যক্তিগত দুঃখ বা জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে আমি সম্ভবত খুব কম কবিতা লিখেছি।

দার্শনিকভাবে আমি বুঝতে পেরেছি ব্যক্তিক জ্বালা-যন্ত্রণার যে রোমান্টিক উচ্ছ্বাস এটা কুড়ি-বাইশ বছর পর্যন্ত ঠিক আছে। তারপর এর কোনো বুদ্ধিক ভিত্তিই নেই। এর কোনো ইন্টেলেকচুয়াল ভিত্তিই নেই। আমি অসহায়, পৃথিবীটা কুৎসিত, নিষ্ঠুর- এগুলো খুব কমবয়সী উচ্ছ্বাস। সেটা ওই বয়সে মানা যায় কিন্তু ওই মেনে নেয়াটাকে সব সময় গ্রহণ করা যায় না।

যখন কেউ দর্শন শিখবে, বিজ্ঞান শিখবে এবং নিজের যন্ত্রণাকে দর্শন আর বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করতে শিখবে তখন সে বুঝবে ব্যক্তির এই যন্ত্রণা খুবই পাতি জিনিস। তখনই বুঝতে চাইবে অবজেকটিভিটিটা। লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যক্তিক জ্বালা-যন্ত্রণা তুলে ধরার মতো রোমান্টিসিজমের ব্যাপারটার এখন আর প্রয়োজন নেই। এটা বুঝতে পারলে অনেক কিছুর নিরসন হয়ে যাবে। আর যেই নিরসন হবে, সঙ্গে সঙ্গে একজন কবি জগৎ জীবনকে বিজ্ঞানীর মতো করে বুঝতে পারবে।

তার পর্যবেক্ষণের চোখ খুলে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে এসব জিনিস চটচট করে ধরা পড়বে। : গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) একটি আলোচনা সভায় আপনি বলেছিলেন, নাস্তিক না হলে কেউ আধুনিক মানুষ হতে পারে না। একজন কবির ক্ষেত্রে আস্তিক কিংবা নাস্তিক হওয়াটাকে কীভাবে দেখেন। রণজিৎ দাশ : একজন কবি যেহেতু সামাজিক মানুষ, ফলে জীবনযাপনে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তি থেকে কবিকে কিন্তু একদম আলাদা করা সম্ভব না।

কেননা সমাজেই কবির জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, সবই বর্তমান; সে সব দিয়েই তিনি কবিতা লেখেন। ফলে একজন কবির ও সামাজিক মানুষের মধ্যকার সমন্বয়ের ওই জায়গাটা আমাদের প্রথমেই মিলিয়ে আসতে হবে। চট করে আমি যেটুকু বুঝি তা হলো, একজন মানুষকে আধুনিক হতে হলে তত্ত্বগতভাবে প্রথমেই নাস্তিক হতে হবে। আর নাস্তিক না হলেও একজন মানুষকে অবশ্যই যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, মানবতাবাদী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই কোনো না কোনো পক্ষ অবলম্বন করতে হবে।

হয় সে আস্তিক হবে, না হয় নাস্তিক। তা না হলে একজন আধুনিক মানুষ হওয়াটা আমি মনে করি তত্ত্বগতভাবে ভ্রান্তিপূর্ণ। একজন কবি এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে পারেন। তাহলে কবি নিজেকে একজন আধুনিক মানুষ ভাবেন কি না তা মিলিয়ে আসতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কবিতা লেখার ক্ষেত্রে একজন কবি কিন্তু এই দুয়ের মাঝামাঝি একটা জায়গায় অবস্থান করেন।

এ ক্ষেত্রে কবি একটি ই¯িপ্রচুয়াল পাওয়ার থেকে কবিতা লেখেন। অনেকে এ বিষয়টিকে আধ্যাত্মিকতা বলে। আমি এটাকে আধ্যাত্মিকতা না বলে বলি `আত্মিকতা'। এই আত্মিকতাই আসলে একজন কবিকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়। এটা হচ্ছে নো ম্যানস ল্যান্ডের মতো একটা জায়গা।

এপাশে কাঁটাতার ওপাশে কাঁটাতার, মাঝে একটু জায়গা। এই জায়গাটুকুই আস্তিকতা ও নাস্তিকতার মাঝে আত্মিকতার জায়গা। : আপনার ঈশ্বরের চোখ কবিতার বইটিতে `এক উন্মাদিনীর কথা' শিরোনামে একটা কবিতা রয়েছে। ওই কবিতাতে আমরা এক উন্মাদিনীকে দেখি সারাক্ষণ গ্রামের চর্মকারের জুতো সেলাইয়ের ভঙ্গিতে অঙ্গভঙ্গি করতে। ওই কবিতাটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

কীভাবে লেখা হয়েছিল ওই কবিতাটি? রণজিৎ দাশ : এই কবিতাটি লিখতে আমার সময় লেগেছিল প্রায় দশ বছর। কবিতাটি প্রথম আমার মাথায় আসে কার্ল ইয়ুঙের একটা প্রবন্ধ পাঠের পর। ওইখানেই আমি এই উন্মাদিনীকে পাই। কবিতাটার প্রথম দিকের প্রায় সবটুকুই বলা চলে ইয়ুঙেরই মনোবিজ্ঞান-বিষয়ক ওই লেখাটার অনুবাদ। আসলে দীর্ঘদিন কবিতাটা লেখার জন্য আমি ভাষা খুঁজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না।

ইয়ুঙের ওই লেখাটা পড়ার পর থেকে বিভিন্ন গলিতে চর্মকার দেখলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম। আর মনে পড়ে যেত সেই উন্মাদিনীর কথা। চর্মকারের পাশেই যেন আমি দেখতে পেতাম কোনো এক প্রেয়সীকে, উন্মাদিনীকে। উন্মাদিনী যে চর্মকারকে ভালোবেসেছিল, সেই চর্মকার তার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই উন্মাদিনী চর্মকারের মতো অঙ্গভঙ্গি করে তার ভালোবাসার মানুষকে স্মরণ করত।

কিসের লাইলী-মজনু, রোমিও-জুলিয়েট; একজন চর্মকারের প্রতি উন্মাদিনীর ভালোবাসার কাছে আর সব ম্লান মনে হয়। এক সময় কবিতাটিকে আমি ওইভাবে লিখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে লিখে ফেললাম। এই কবিতাটাকে নিয়ে কলকাতারই এক তরুণ কবি, অনির্বাণ বসু ফিল্ম তৈরি করতে চেয়েছে। এ নিয়ে ও আমার সঙ্গে অনেক কথাও বলেছে। অনির্বাণ ওই উন্মাদিনী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একজন নায়িকাও নির্বাচন করে নায়িকার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেয়।

নায়িকাটিকে আমি বলেছি, সারক্ষণ মুচির কাজের ভঙ্গিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে ও ঠিকমতো প্রাকটিস করতে। : আর সন্ধ্যার পাগল বইয়ের সন্ধ্যার পাগল কবিতাটি কখন লিখলেন? রণজিৎ দাশ : সন্ধ্যার পাগল কবিতার সেই পাগলটির বাস্তব ভিত্তি আছে। অনেক বছর আগে আমার অফিস যাওয়া-আসার পথে গলির মাথায় পাগলটির সঙ্গে আমার দেখা হতো। সারাক্ষণ মাথা দোলাতো পাগলটি। তার বিরামহীন মাথা দোলানো দেখে আমার মনে হতো এই বিশ্বব্রহ্মা- যেন ভীষণ অস্থিরতায় দুলছে।

প্রতিনিয়ত আমার বুকের ভেতর যে ভয়ঙ্কর অস্থিরতা বিরাজ করছে- যেন তা-ই প্রকাশ পেত তার মাথা দুলুনিতে। প্রায়ই মনে হতো আমি যদি তার অস্থির ঝাঁকুনিরত মাথাটিকে এক মিনিটের জন্য বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখতে পারতাম, তাহলে খুব শান্তি পেতাম। আমার ভেতরের অস্থিরতা কিছুটা কমত। কবিতাটি লেখার কথা অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম। বহুবার চেষ্টাও করেছি কিন্তু লিখতে বসলেই পাগলটির অস্থির মাথা ঝাঁকুনির দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত।

অনেক বছর পর অবশেষে কবিতাটি লিখেছি। : আমাদের সবার পছন্দের একটি কবিতা ক্ষত। তবে এই কবিতাটি সম্পর্কে আমাদের প্রশ্ন আছে। এই কবিতাটির বক্তব্য কি স্ববিরোধী নয়? বিশেষ করে আপনি যখন লেখেন, `শিল্পী হওয়ার তাড়নায় উচ্চাকাক্সক্ষী স্বামী-স্ত্রীতে মিলে সংসার ভেঙে দিয়ে, এবং নিজেদের সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে তার গ্রামের মামাবাড়িতে ফেলে রেখে, প্যারিসে এসে রদ্যাঁর শিষ্য বনে যাওয়ার জন্য রিলকের সমস্ত কবিতা আমার কাছে অস্পৃশ্য মনে হয়; অসুস্থ সঙ্গিনী ফ্রাঁসোয়া জিলোর গালে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়ার জন্য পিকাসোর সব ছবি আমি পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিতে পারি। জীবনের অপরাধ ঢাকতে শিল্পের সাফাই হয় না।

...'- ইত্যাদি লেখার পরই আপনি যখন লেখেন, সমস্ত শিল্পের বিরুদ্ধে, সেই ক্ষতটিই ঈশ্বরের বিষণ্ন কবিতা...' - তখন কি স্ববিরোধী বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে না? রণজিৎ দাশ : এই কবিতাটি যখন কলকাতায় প্রথম ছাপা হয় তখন অনেকেই আমাকে এরকম প্রশ্ন করেছিল। এখনো বিভিন্ন জায়গায় এই কবিতাটি সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হয়। কবিতাটি আমি লিখেছি বুকের বহুবেদনার জায়গা থেকে। আমি নিজেও জানি না এর সমাধান। তবে আমার কবিতার ফিলোসফিক্যাল লজিক আছে।

এখানে ঈশ্বর বলতে আমি স্রষ্টাকে বোঝাতে চেয়েছি। আর কবিতাটির শেষ পঙ্ক্তিতে যে `ঈশ্বরের বিষন্ন কবিতা লেখা আছে; আসলে সেটাকে পড়তে হবে `স্রষ্টার বিষন্ন বেদনা' হিসেবে। এটা আমাদের মানবিক সত্যের বিরুদ্ধে, নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে লেখা। আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের বুকে যে আঘাত দেই, ক্ষত সৃষ্টি করি, বেদনা জাগাই তার কোনো শুশ্রুষা হয় না, সেবা হয় না। এটা ঈশ্বরও বোঝেন।

মানুষ তার একান্ত নিষ্ঠুর জায়গটি ঢাকতে চায় কিন্তু ঢাকতে পারে না। একজন কবি, চিত্রকরও তার একান্ত নিষ্ঠুরতা এড়াতে পারে না বলেই শিল্পের মাঝে আশ্রয় খোঁজে। আমি এটাকেই ঈশ্বরের বিষন্ন কবিতা বা ঈশ্বরের বিষন্ন বেদনা হিসেবে বোঝাতে চেয়েছি। : আপনার কবিতাতে মাঝে মধ্যেই বেশ যৌনতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে আপনার সন্ধ্যার পাগল বইটিতে এই বিষয়টা যেন আরও তীব্র।

অনুষঙ্গ হিসেবে যৌনতা আপনার কতটুকু প্রিয়? রণজিৎ দাশ : যৌনতা তো আমার কবিতার বেশ একটা প্রিয় অনুষঙ্গ। সন্ধ্যার পাগলের আগেরও কোনো কোনো বইয়ের কবিতাতে যৌনতা এসেছে। কবিতায় যৌনতার ব্যবহার তো আমার খুবই প্রিয় প্রসঙ্গ। : আপনার তরুণ বয়সের অভিজ্ঞতার আলোকে তরুণ কবিদের প্রতি কিছু বলুন। রণজিৎ দাশ : তরুণ কবিদের প্রতি আমার একটাই কথা, কবিতা নিয়ে এর আগে কে কী বলেছে, এই সব কিছু জেনে তারপর ওইগুলো না মানাই ভালো।

অর্থাৎ অগ্রজ কবিদের কথা শোনো, তারা কে কী বলেছেন সেটা পড়ো এবং জানো; কিন্তু কখনই অনুসরণ করতে যেও না। সাহিত্য হচ্ছে এমন একটা নিষ্ঠুর ক্ষেত্র, যতক্ষণ না কবি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, বোকা ও বধির হয়ে টেবিলে গিয়ে বসছেন, ততক্ষণ কবির জন্য কিছুই অপেক্ষা করবে না। (লেখাটি দৈনিক ডেসটিনির সাহিত্যপাতা `সপ্তসিন্ধুতে' প্রকাশিত হয় ১৫ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।