ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
দুদিন যাবৎ মনটা খুব খারাপ। ঢাকা থেকে আমার মা ফোন করে বললেন, ৭১ সালে পাকিস্তানি আর রাজাকারদের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়েছে।
জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে বুঝলে? তিনি বললেন, এইযে মাথামোটা লোকজন কোনো পরিকল্পনা ছাড়া দেশ চালাচ্ছে। শুধু বিদ্যুতের লোড শেডিং দেখলেই বোঝা যায়। দেশের মেধাবী মানুষগুলো বেঁচে থাকলে দেশের অবস্থা কখনোই এমন হতোনা.....
বার্মিংহামে আমার বাসায় কয়দিন আগে সন্ধ্যার সময় দেখি কারেন্ট নাই।
আমরা কয়জন তো খুবই অবাক। বৃটেনে লোড শেডিং...। কিছুক্ষণ হাসাহাসি করলাম। হাসাহাসি করলেও আমরা কিন্তু জানতাম এটা সম্ভব না। এখানে লোড শেডিং হয়না।
আমাদের বাসারই কোনো টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য লাইট জ্বলছে না। পরে সমস্যাটা পাওয়া গেল। ফিউজ কেটে গিয়েছিল।
আমাদের দেশের মাথামোটা আমলা আর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করার জন্য কোনো চিন্তাই করেনি। নেই কোনো পরিকল্পনা।
অন্তত দশ বছর আগে যে পরিকল্পনা করার কথা ছিল। তা এখনও করা হচ্ছেনা।
ভবিষ্যতের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য সম্প্রতি বৃটেন নতুন নিউক্লিয়ার পাওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। যদিও এ মুহূর্তে তাদের কোনো সঙ্কট নাই। নতুন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগবে।
নতুন প্রজন্মের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন উপলক্ষে সরকার জানিয়েছে এগুলো বৃটেনের দুটো চ্যালেঞ্জকে মিটাবে। এক. এগুলো বৃটেনের ভবিষ্যৎ জ্বালানী চাহিদা মিটাবে, দুই. এগুলো জলবায়ু পরিবর্তন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। কারণ তারা বলছেন, নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আগের তুলনায় পরিবেশের ক্ষতি কম করে। এ পরিকল্পনায় আরো রয়েছে, বিদ্যুৎ কম্পানিগুলোর উৎপাদনের ২০% নবায়নযোগ্য বা রিনিউয়েবল জ্বালানীর উৎস ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা(বর্তমানে এটা ১৫%)।
নতুন প্রজন্মের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটির পিছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড।
অবশ্য বৃটিশ সরকার এগুলোর পেছনে কোনো খরচ করছে না। প্রাইভেট কম্পানিগুলিই এ খরচ যোগাচ্ছে। এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর স্থানে। বৃটেনের বিজনেস সেক্রেটারি বা বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি ২০২০ সালের আগেই এ ধরনের প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়ে যাবে।
প্রায় ছয় কোটি জনসংখ্যার দেশ বৃটেনে ১৮১ টি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে।
দেশটির সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৬৩ গিগাওয়াট যার বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে প্রায় ৭৭ গিগাওয়াট। বর্তমানে বৃটেনের মোট বিদ্যুত চাহিদার মধ্যে গ্যাস দিয়ে পূরণ হচ্ছে ৪০%, কয়লা দিয়ে ৩৩%, পারমাণবিক উৎস থেকে ১৯%, নবায়নযোগ্য উৎস বা রিনিউয়েবল থেকে ৪%, আমদানি করা হয় ২%, জলবিদ্যুৎ থেকে ১% এবং তেল থেকে ১% পূরণ হয়। ২০১০ সালের মধ্যে অবশ্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০% হবে বলে সরকার আশা করছে।
সম্প্রতি জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কারণে বৃটেনের মন্ত্রীরা বিদেশ থেকে জ্বালানী আমদানি কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নিভর্রশীলতা কমানোর ওপর ব্যাপক জোর দেয়া হচ্ছে।
এ কারণেই নতুন এনার্জি বিল তাড়াতাড়ি পাস করানো হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। সরকার অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর হবে সম্পূর্ণ প্রাইভেট মালিকানাধীন এবং এগুলোকে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে কোনো সাবসিডি দেয়া হবে না। উপরন্তু প্রাইভেট কম্পানিগুলি পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পুনর্বাসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সব খরচ বহন করবে। মি. হাট্টন আরো বলেন, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভবিষ্যতে বৃটেনকে পরিবেশ সম্মত, নিরাপদ এবং সুলভ জ্বালানী সরবরাহ করবে। প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বেশ জোরের সঙ্গেই বলেন, এটা বৃটেনের ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও সঠিক সিদ্ধান্ত।
বৃটেনের ইন্ডাস্ট্রি সেক্রেটারি বা শিল্প মন্ত্রী অ্যালিস্টার ডার্লিং বলেন, জ্বালানীর সরবরাহের বহুমুখীতা নিশ্চিত করার জন্য আগামী ৪০ বছর আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুত দরকার। গ্রীন পার্টির প্রধান মুখপাত্র কেইথ টেইলর বলেন, অ্যালিয়েস্টার ডার্লিং বৃটেনকে নতুন ধারার ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক নোংরা ও বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন।
বৃটেনের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং কনজারভেটিভ পার্টির লোকজন এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন পিস জানিয়েছে, নতুন প্রজন্মের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে আগের তুলনায় ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন সামান্যই কমবে; যদিও এ কারণে খরচ অনেক বাড়বে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, আমরা যদি শুধু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকি তাহলে কোনো কারণে গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে সমস্যা হবে।
ছবি- মোবাইল ক্যামেরায় তোলা বৃটেনের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।