আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুব সাতর ১: জন্মস্থান (পাঠকদের ভালো না লাগলে এটাই ১ম এবং শেষ পোষ্ট)

কাজ নেই, খাওয়া নেই।
করিম আলি চা খাবার কথা বলে, এল এমন একটা সময়ে, যখন দুপুরের খাবার না সাধলেই নয়। বললাম বসে পড়। ও বিনয়ের সাথে আমার আহ্বানে সাড়া দিল। আমি খেতে খেতে কথা শুনা খুব পছন্দ করি, করিম সেটারই যোগান দিচ্ছিল, শুরু থেকেই।

চমৎকার কথা। অতি সাধারণ বিষয় কিন্তু অসাধারণ তার উপস্থাপন । আমি সব সময়ই তার আন্তরিক সঙ্গ, আলাপ চারিতা উপভোগ করি বেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হলনা। নিঃসন্দেহে।

করিম একটা বই নিয়ে এসেছিল আমার অনুরুধে। বইটির নাম A dictionary of Muslim Names by Salahuddin Ahmed সুন্দর মলাটের বই। UK থেকে প্রকাশিত, প্রকাশ কাল ১৯৯৯। আমার এক বন্ধু ‘বাবা’ হবে কিছুদিনের মধ্যেই তার জন্যই এই ধার। অভ্যাসমত লেখকের পরিচিতিটা পড়া শুরু করলাম প্রথমে।

অনেক গুনের অধিকারী লেখক ভদ্রলোক। বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে প্রচুর বই তার। লেখক পরিচয়ের শেষ প্যারাটা পড়ে চোখ কপালে উঠল। এও কি সম্ভব? ১৯৯৯ সালে এসে লিখছে - লেখকের জন্ম পূর্ব পাকিস্থানে (বর্তমান বাংলাদেশ)! হায় খোদা, আমার জন্মওতো পূর্ব পাকিস্থানে! Excitement টা হজম করলাম মনে মনে। করিম, বাংলাদেশীদের পাকিস্থান প্রীতি একদম সহ্য করতে পারেনা।

বললাম, ভাল বই করিম, কোথায় পেলে এ বই? হা বইটা ভাল, আমার এক Australian সহকর্মী আমাকে উপহার দিয়েছে, গতবছর। দেখেছ? লেখক তার জন্মস্থান লিখেছে পূর্ব পাকিস্থানে! ভাল যে রাজাকারটা বাংলাদেশে থাকে না। হতাশ ভাবে করিম বলে উঠল। এসব রাজাকার আর নব্য রাজাকারে ভরে গেছে বাংলাদেশ এখন! আমি বল্লাম অযথাই মন খারাপ করছ, ভদ্রলোকতো মিথ্যা লিখেনি। এরকম লিখতেই পারে।

তার মত প্রকাশের অধিকার অবশ্যই আছে। আমার কথায় নিঃসন্দেহে দুঃখ পেল করিম। তার হা হয়ে থাকা মুখ দেখেই বুঝলাম। আর যাই হোক আমার মুখ থেকে এ কথা সে আশা করেনি। আমি বল্লাম শোন, মন খারাপ করো না।

গত বছর আমার এক বড় ভাইকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম এদেশীয় ডিনার পার্টিতে। পরিচয় পর্বে উনি বল্লেন ‘আমি বাংলাদেশের’। অনুষ্ঠানে এক অতিথি প্রশ্ন করলেন ‘বাংলাদেশের কোন অংশে আপনার বাড়ি?’ উত্তরে বড়ভাই কি বল্ল জান? বল্ল আসামে। আমিতো অবাক, বেহুশ হবার অবস্থা। আসাম বাংলাদেশের অংশ? আমার এ ছোট্ট জীবনে কখনো এ সংবাদ শুনিনি ।

বড়ভাই বাংলাতে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বল্লেন ‘এ দেশিওরা (সাদারা) ‘আমার বিশেষ অঞ্চলের নাম’ থেকে আসামকেই ভাল করে চিনে’। আমি আমার কাল কঠিন মুখে শুকনো হাসি এনে বল্লাম ‘তাই নাকি? জানতাম নাতো!’ পরে শুনেছি (বিশেষ অঞ্চল বাসীর কাছ থেকেই) বিশেষ অঞ্চলের বসবাস কারীরা আসলেই আসামী, বাঙ্গালী না। এজন্যই হয়তো বেঙ্গলী নামেই অন্য অঞ্চলের লোকজন পরিচিত সেই বিশেষ অঞ্চলে। ব্যাপারটা সত্যি কি অসত্যি? তা আমি জানিনা। যা হোক দুঃখ পাবার কিছু নেই।

যে যে ভাবে পরিচয় দিয়ে ভাল বোধ করে। সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আমার মনে হয় ‘দেশ্বাত্ববোধ’ চাপিয়ে দেবার মত কোন ব্যাপার নয়। এটা সম্পুর্ন বোধের ব্যাপার। ব্যাত্তিগত বোধের ব্যাপার।

আমার কথায় করিম খুশি হল বলে মনে হল না। হয়তোবা তার পেটের ভাতটাকেই চাল হবার ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমি। সে যাই হোক, এ বিষয় নিয়ে আর করিমের সাথে এখন কথা বলা যাবে না। প্রসংগ পালটালাম। বল্লাম এস তোমাকে একটা চমৎকার গান শুনাই।

যাবার আগে গানের সাথে চা-টা যোগ হওয়ায় কিছুটা হাল্কা হল করিম। করিমের দুঃখ, আমি সবকিছুই হাল্কা ভাবে নেই, এমনকি অনেক গুরুতর কঠিন ব্যাপারও। যা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল ও হীন দেশপ্রেমের পরিচয়। আমি নাকি লিখতে পারি, লিখতে চাইনা। বলতে পারি, বলতে চাই না।

আমি নাকি মধ্যভোগী ভদ্রতার লেবাচে, আত্মকেন্দ্রিক সার্থপর হায়নার মত আচরন করি। মন সত্যের চাইতে স্বার্থের দিকেই এগিয়ে যাই বেশী। আমি তার কথা মন দিয়ে শুনি কিন্তু একমত হইনা সবসময়। এই হল করিম আলি। আমার অনেক দিনের বন্ধু।

আমার প্রিয় সমালোচক, আমার প্রিয় বন্ধু। আর হা বলে রাখি, করিম আলির জন্মও কিন্তু পাকিস্থানেই। পূর্ব পাকিস্থানে। এখন কাগজে কলমে সে লেখে বাংলাদেশ। সেটাইতো লিখা উচিৎ।

আপনি কি বলেন? আচ্ছা সত্যি করে বলুনতো, আমি কি এতই নিচ? (চলবে) [এ লেখার করিম, আমি সহ প্রতিটি চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। বর্তমান সময়ের সাথে এর কোন ঘটনা প্রবাহের কোন রকম বা ধরনের কোন মিল নেই। কোন কাকতালিয় মিল খুজে পেলে, ধরে নেবার কোন কারণ নেই যে, ওরা আমার লেখা থেকে উৎসাহ পেয়েছে। ] এ লেখাটি কিছু বছর আগে - অন্য অনলাইন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।