আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যদি কন্ঠ দাও , আমি তোমার গাহি গান (উৎসর্গ - ব্লগার রাশেদ)

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

গান নিয়ে লেখা পড়া ? নারে ভাই । এত সৌভাগ্য নিয়ে তো জন্মাইনি ! পেটের ভাত যোগাড়ের প্রতিযোগীতায় এই স্বপ্নটা আর কোন দিনই পূরণের নয় । কিন্তু কেমন কেমন করে জানি পারিবারিক আবহের ভিতরেই শিল্প এবং সাহিত্যের একটা দুষ্টু জিন ঢুকে পড়েছিলো । কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নানু বাড়ির সকলে এবং দাদু বাড়ির দিক থেকে আব্বু -- প্রত্যেকেই খুব ভালো লিখতে জানেন । নানু প্রাচ্যের শুদ্ধ সঙ্গীতের ভক্ত।

তৎকালীন জনপ্রিয় বিভিন্ন গান শুনতেন । মামণিরা যেতেন রেডিওতে ভারতীয় শিল্পী কিংবা গ্রামোফোনের গান শুনতে । বই পড়তে সকলেই খুব ভালোবাসতেন । ভালোবাসতেন কবিতা লিখতে । ব্যাপারটা এমন যে কেউ যদি কবিতা না লিখতে পারে , আমাদের পরিবারে জেনেটিক টেস্ট করতে পাঠানো হয় যে জন্মের সময় বাচ্চা বদল হয়ে গেছে কি না ।

শ্বাস নেওয়ার মত, দাঁত মাজার মত কিংবা আহার -নিদ্রার মত এই পরিবারের সন্তানেরা গান - কবিতা "করে -টরে" । মামণিরা ছিলেন ১৩ ভাই বোন । স্কুলশিক্ষক নানাভাই আহার , পরিধেয় এর বাইরে সন্তানদের খুব কম শখই পূরণ করতে পারতেন । মা সেই ভাবে গান শেখার সুযোগ নাই। মামাকে গান শেখাতে এলে মামনি রান্না ঘরে কান খাড়া করে শুনতেন।

কপাল ভালো থাকলে , বাচ্চা ভাই বোনদের দেখা , কাপড় ধোয়া কিংবা কোটা বাছার ফাঁকে হারমোনিয়ামের পাশে বসার দুর্লভ একটা- আধাটা সুযোগ মিলে যেতো । বিয়ের পরে আব্বু মাকে ছায়ানটে ভর্তি করে দেন । অকল্পনীয় সুন্দর তাঁর গানের গলা । আর গাওয়ার মুন্সিয়ানায় তাক লাগিয়ে দিতেন সবাইকে । দুই পৃষ্ঠা ব্যপি তান গাইতেন একটাও ভুল না করে ।

শান্তি নিকেতন থেকে মার নামে স্কলারশীপ এসেছিলো । আফসোস ! ভারতে যেতে পারেন নাই বা যান নাই শুধুমাত্র "আমাদের মানে পিচকি পিচকি দুই বাচ্চার" কারনে । সংসারের কারনে শান্তি নিকেতনে যান নাই মামণি । সন্তানই তাঁর সবচেয়ে প্রিয় প্রেমের বস্তু , একান্ত সম্পদ । কিন্তু গান তাঁর জীবনে কতটা ভালোবাসার ছিলো তা বুঝি কারন এর পরে তিনি আর কোন দিনই পারিবারিক বলয়ের বাইরে গান করেন নাই ।

অভিমান ? শান্তি নিকেতনে স্কলারশীপ পেয়েও না যেতে পারাটা তার অন্তরে অপূরনীয় কোন ক্ষত তৈরী করেছিলো হয়ত । আমার গানের হাতে খড়ি আমার মামনির কাছে । হাঁটতে কিংবা খেলতে শিখার আগেই বোধ হয় আমি হাত , পা , পারলে মাথা দেয়ালে ঠুকে তাল দিতাম । রক্তের ভিতর অক্সিজেন আর ছন্দ - একই সাথে প্রান যুগিয়েছে । গান গাইতে পারা ছেলেটাকে ভালো লেগে যেতো কৈশোরে ।

অজয় চক্রবর্তীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম গান শুনে । সহপাঠীরা যখন মুভি স্টারদের পোস্টারে ঘর ভরে রাখে , আমি দেয়ালে দেয়ালে তানপুরা , বাঁশি আর ঢোলের ছবি আটকাই। স্বপ্ন দেখি , চশমা পরা , খুব সাধারন চেহারার কোন যুবক সেন্ট মার্টিন্সের সৈকতে দাঁড়িয়ে দরদ দিয়ে গাইছে , " খুদা কা জিকির করে , ইয়া তুমহারি বাত করে, হামে তো ইশক সে মতলব , কিসিসে পেয়ার করে । " আমি একটা আকাশী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় বেলী ফুল গুঁজে বসে বসে শুনছি । স্বপ্নটা খুব অযৌক্তিক বা অসম্ভব লাগে না , কারন সবচেয়ে প্রিয় এই গানটা আমার মামার বন্ধু চন্দন দাসের গাওয়া ( বর্তমানে ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী) ।

মামা গাইতে পারলে , মামার ভাগনে একটাও কি পাওয়া যাবে না , যে এই গানটা শুধু আমার জন্যই গাইবে ? আমি নিজেও শান্তি নিকেতনে যেতে চেয়েছিলাম । কিন্তু , ঐ যে , মধ্যবিত্তের পিন্ডি যোগাড়ের দায় ! মামণি তার প্রাণ ঢেলে যতটুকু আমাকে শিখিয়েছিলেন , তারই ছিটে ফোটা বলি মাঝে মাঝে । নইলে ছেঁড়া কাঁথার রাগুদের "রাগ ইমন " নাম ধারন করে একটা "সোনার হরিণ স্বপ্নকে " অন্তর্জালে যাপন করা ছাড়া কিই বা করার থাকে ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।