অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/
এক বেড়াল, এক শালিক আর এক হলদে-ঝুঁটি মোরোগটি। ছিল তারা একই বনে, একই কুঁড়েয়। বেড়াল আর শালিক গভীর বনে যায় কাঠ আনতে, মোরগ বাড়ীতে থাকে একা।
বেরোবার আগে ওরা মোরোগকে সাবধান করে দ্যায়:
"আমরা দূরে চলে যাচ্ছি। তুই ঘর-দোর দেখিস।
কিন্তু সাবধান, টুঁ শব্দটি করবি না। আর শেয়াল এলে জানলা দিয়ে আবার মাথা বের করিস না। "
শেয়াল যেই দেখে বেড়াল আর শালিক বেরিয়ে গেছে, অমনি জানলার নীচে গিয়ে গান জোড়ে:
"হলদে ঝুঁটি, হলদে ঝুঁটি,
বাহারে মোর মোরোগটি,
তেল-চক-চক তোমার গা,
রেশমী তোমার দাড়ীটা,
জানলা দিয়ে মুখ বাড়াও,
মটরশুঁটি নিয়ে নাও। "
গান শুনে মোরগ যেই মুখ বের করেছে, অমনি শেয়াল খ্যাঁক করে ধরে নিয়ে চলল নিজের গর্তে।
ছোট্ট মোরগ চীৎকার করে কাঁদতে লাগল:
"শেয়ালে নিল ধ-রে,
গহন বন পা-রে,
খর নদীর ধা-রে,
খাড়া পাহাড় ঘু-রে,
ও শালিক, ও বেড়াল রে,
আয় না বাঁচা মো-রে!"
মোরগের কান্না কানে যেতেই বেড়াল আর শালিক শেয়ালের পাছনে ছুটলো।
মোরগকে ছিনিয়ে আনল শেয়ালের হাত থেকে।
আবার বেড়াল আর শালিক কাঠ কাটতে গেল। আবার মোরগকে সাবধান করল:
"দেখ বাপু মুরগীর পো, আজ আবার মুখ বের করিস না। আজ আমরা আরো দূরে যাব, হয়ত তোর ডাক শুনতেই পাব না। "
বেড়াল আর শালিক বাড়ী থেকে বেরিয়েছে, অমনি শেয়াল বাড়ীর কাছে গিয়ে গান ধরল:
"হলদে ঝুঁটি, হলদে ঝুঁটি,
বাহারে মোর মোরোগটি,
তেল-চক-চক তোমার গা,
রেশমী তোমার দাড়ীটা,
জানলা দিয়ে মুখ বাড়াও,
মটরশুঁটি নিয়ে নাও।
"
মোরগ কিন্তু চুপটি করেই বসে রইল। তাই শেয়াল ফের গান ধরে:
"ছেলেমেয়েরা এ পথ দিয়ে দৌড়ে গিয়েছে,
দৌড়ে যেতে গম গুলো সব ছড়িয়ে পড়েছে।
মুরগীর দল খুঁটেখুঁটে খেতে লেগেছে,
মুরগীর দল মোরোগদের বাদ দিয়েছে..."
মোরগ জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলল:
"কক কক কক! বাদ দেবে কেন?"
অমনি শেয়াল ওকে খ্যাঁক করে ধরে নিয়ে চলল নিজের গর্তে। মোরগ চীৎকার করে কান্না জুড়ল:
"শেয়ালে নিল ধ-রে,
গহন বন পা-রে,
খর নদীর ধা-রে,
খাড়া পাহাড় ঘু-রে,
ও শালিক, ও বেড়াল রে,
আয় না বাঁচা মো-রে!"
মোরগের কান্না কানে পৌঁছতেই শালিক আর বেড়াল শেয়ালের পেছনে ছুটল। বেড়াল মাটিতে ছোটে, শালিক আকাশে ওড়ে... শেয়ালকে ধরে বেড়াল আঁচড়ায়, শালিক ঠোকরায়, কেড়ে নিল মোরগকে।
দিন যায়, ফের আবার শালিক আর বেড়াল গভীর বনে কাঠ কাটতে যাবার জন্য তৈরী হল। যাবার আগে মোরগকে ওরা অনেক সাবধান করে দিল:
"শেয়ালের কথা শুনিস না, মুখ বের করিস না। আজ আমরা আরো দূরে যাব। চেঁচালে শুনতেও পাব না। "
এই বলে শালিক আর বেড়াল বনে কাঠ কাটতে চলে গেল অনেক দূর।
এদিকে
শেয়ালও এসে জানলার নীচে গান ধরলে:
"হলদে ঝুঁটি, হলদে ঝুঁটি,
বাহারে মোর মোরোগটি,
তেল-চক-চক তোমার গা,
রেশমী তোমার দাড়ীটা,
জানলা দিয়ে মুখ বাড়াও,
মটরশুঁটি নিয়ে নাও। "
মোরগ তবু চুপ করে বসে রইল। তাই শেয়াল আরেকটা গান ধরল:
"ছেলেমেয়েরা এ পথ দিয়ে দৌড়ে গিয়েছে,
দৌড়ে যেতে গম গুলো সব ছড়িয়ে পড়েছে।
মুরগীর দল খুঁটেখুঁটে খেতে লেগেছে,
মুরগীর দল মোরোগদের বাদ দিয়েছে..."
তবু চুপটি করে বসে রইল মোরগটি। শেয়াল তাই ফের গান ধরে:
"লোকজনেরা এপথ দিয়ে চলে গিয়েছে,
যেতে যেতে বাদামগুলো ছড়িয়ে পড়েছে।
মুরগীরদল খুঁটেখুঁটে খেতে লেগেছে,
মুরগীরদল মোরোগদের বাদ দিয়েছে..."
মোরগ তখন জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলল:
"কক কক কক! বাদ দেবে কেন?"
ব্যাস! অমনি শেয়াল খ্যাঁক করে ধরে গহন বন পারে, খর নদীর ধারে, খাড়া পাহাড় ঘুরে নিজের গর্তে নিয়ে গেল ওকে...
মোরগ যত ডাকে, যত চেঁচায়, শালিক আর বেড়াল কিন্তু কিছু শুনতে পায় না। যখন বাড়ী ফিরল তখন দেখে মোরগ নেই।
শালিক আর বেড়াল তখন চলল শেয়ালের পায়ের দাগ ধরে ধরে। বেড়াল মাটিতে ছোটে, শালিক আকাশে ওড়ে... শেষকালে তো শেয়ালের গর্তে পৌঁছল ওরা। বেড়াল বাজনা বাজিয়ে গান ধরল:
"ত্রিম ব্রিম বাজনদার,
বোল তুলেছে সোনার তার...
শায়াল-বোন কি আছে ঘরে?
গুটি শুটি কোটর জুড়ে?"
গান শুনে শেয়াল ভাবল, "কে রে এত ভালো বাজনা বাজায়, এমন মিদ্টি করে গায়! দেখি তো!"
হর্ট ছেড়ে বাইরে এল শেয়াল।
অমনি শালিক আর বেড়াল শেয়ালকে ধরে একেবারে মারন আর ঠোকন। শেয়ালও ভোঁ ভাঁ দৌড়।
শালিক আরবেড়াল তখন মোরগকে চুপড়ির মধ্যে বসিয়ে নিয়ে এল বাড়ীতে।
তারপর থেকে তারা সুখে-স্বচ্ছন্দে বাস করতে লাগল, এখনো করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।