আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটি মোটেও ধর্মবিষয়ক পোষ্ট নয়

http://www.somewhereinblog.net/blog/marufk56

(এটি মোটেও ধর্মবিষয়ক কোন পোষ্ট নয়। কোন বিশেষ গোষ্ঠিকে লক্ষ্য করেও এটি 'পোষ্টিত' নয়। কেউ এর অন্য মানে বের করতে চাইলে দায়-দায়িত্ব লেখকের নয়্) সকালবেলা বাসে উঠেছি রামপুরা টিভি সেন্টার থেকে। দরিদ্র অবস্থা বলে কমদামী বাসেই চড়ার চেষ্টা করি ( বাসের দাম হয়তো অনেক, ভাড়া আরকি তুলনামূলক কম)। চড়েছি তুরাগে।

মাঝামাঝি জায়গায় একটা বসার সীটও পেয়ে গেলাম ভাগ্যক্রমে। নামব বাড্ডা নতুনবাজার মোড়ে। বাসের সীট সব ফিলাপ। তিন-চারজন দাঁড়িয়ে আছে সামনের দিকে। মোটামুটি আটটার আগে রামপুরায় অতো ভীড় হয় না।

মহিলা সীটে ( ড্রাইভারের পাশে বাম পাশে , যেখানে চারজন বসতে পারে ঠাসাঠাসি করে, অলিখিতভাবে ওগুলোই মহিলা সীট) তিনজন, একটা জায়গা খালি। কিছুদূর গিয়ে রামপুরা ব্রীজের সামনে উঠলেন আরো দুজন। এদের একজন 'হুজুর'। মোটামুটি টিপিক্যাল হুজুরই। দেখেই বোঝা যায়, কোন ছোটখাট মসজিদে ইমামতি করেন বা মুয়াজ্জিন- বেশভূষায় সে রকম।

মাথায় টুপি, পাঞ্জাবী গায়ে, রংটা বলতে পারব না- এই রংটার নাম জানি না আমি। নীল নীল স্ট্রাইপের লুঙ্গি, সেটা হাঁটুর কাছাকাছি পর্যন্ত তোলা। তবে হাঁটুর উপর নয়, 'সতর ঢাকা'। মুখে পান বা সুপারি, চিবানোর ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে। তিনি গিয়ে বসলেন ঐ তিন মহিলার পাশে বাসের সামনের কাঁচের কাছে, ৪র্থ মহিলার জন্য আপাতঃ নির্ধারিত স্থানটিতে।

আমি আমার সীটে দুই পা যতটুকু ফাঁক করে বসেছি (আমার পাশে একজন পুরুষই বসা ছিল), 'হুজুর বসেছেন তার দ্বিগুণ ফাঁক করে, আয়েশী ভঙ্গিতেই। কিছুক্ষণ পর রাস্তা থেকে বাসে উঠলেন আরো কয়েকজন। এর ভেতরে একজন মহিলা, সঙ্গে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা একটি মেয়ে। মেয়েটিকে বসে থাকা এক মহিলা কোলে তুলে নিলেন। মহিলা দাঁড়িয়ে থাকলেন।

কিছুদূর গিয়ে দুই মহিলা নেমে গেলে তিনি বসলেন। পাশে বসলেন আরেক 'ভদ্রলোক'। মধ্য বাড্ডা 'নতুন রাস্তা' এসে অনেকে নেমে গেলেন। দুই মহিলা নেমে গিয়ে আরো তিন মহিলা উঠলেন। কিছুক্ষণের জন্য কয়েকটা সীট খালি হলো বাসের।

হুজুরের পাশে বসা পুরুষটি উঠে এসে একটি সীটে বসে পড়লেন। জাগতিক ভাবনার ঊর্ধ্বে কোন এক অতি-জাগতিক চিন্তায় নিমগ্নই রইলেন হুজুর ভাবলেশহীন মুখে বসে। সীটগুলোও আবার ভরাট হয়ে গেল উঠে পড়া অন্য যাত্রীদের দ্বারা। আবার মহিলা সীট চারটি তিন মহিলা ও এক 'হুজুর'। উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত আসার পর বাসে ভীড় বেড়ে গেল।

অনেকে উঠলো বাসে। বাসে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের সংখ্যা বেড়ে গেল। এ অবস্থায় এক মহিলা উঠতে গেলে হেলপার তাকে উঠতে দিল না, 'মহিলা সীট নাই, সীট নাই' বলে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে রইল। মহিলা দাঁড়িয়েই যাবেন বলে উঠতে চাইলেন। কিন্তু হেলপার তাকে উঠতে দিলো না।

বাস টেনে চলল ড্রাইভার। এক যাত্রী খেপে গেলেন, ' আরে মিয়া অফিস টাইমে এই ভাবে উঠতে না কর কেন? উনি তো দাঁড়াইয়াই যাইতে চাইছেন। অফিস টাইম বুঝ না'। হেলপারের সাথে দু-এক কথার বচসাও হলো। একজন পিছন থেকে অনুচ্চ স্বরে বললেন, 'কে বলছে মহিলা সীট খালি নাই? এত লোক দাঁড়ায়ে আছে, 'উনি' দাঁড়াইতে পারে না? 'উনি' দাঁড়ালেই তো মহিলাটা বসতে পারতো।

তবে , ঐ যাত্রীর কন্ঠে এতটা জোর ছিল না, যা বাসের সামনের অংশে বসা আলোচ্য 'উনি'র কানে পৌঁছায়। তবে পূর্বেকার মতোই জাগতিক চিন্তা-ভাবনার উর্ধ্বে। বাড্ডা নতুনবাজারে গেটের ভীড় ঠেলে আমি নেমে পড়লাম। 'উনি' কতদূর যাবেন কে জানে? ...................................................................... এটি একটি ঘটনা মাত্র। আজ বাস দিয়ে আসার পথে দেখা ঘটনা।

এর নৈর্ব্যক্তিক একটা বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। বর্ণনারীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে , ঘটনা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।