আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকান-সুইডিশ চলচ্চিত্রকার রিক ওয়াসারম্যান



রিক ওয়াসারম্যানের সঙ্গে পরিচয় ১০ম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ ঢাকা ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে। আমেরিকান-সুইডিশ এই চলচ্চিত্র নির্মাতা সেখানে তিনি তার ডকুমেন্টারি ব্যাক টু দ্য ভিলেজ (২০০৬) নিয়ে কথা বলেন। মাত্র ২৬ মিনিটের এই ডকুমেন্টারিতে তিনি তুলে ধরেছেন বিশ্বায়নের কিছু খারাপ দিক। পরবর্তী সময়ে এই ডকুমেন্টারিটি নিয়েই তার একটি সাক্ষাৎকার নেই। একদিন সকালে হাজির হই তার গুলশানের বাসায়।

চা খেতে খেতে শুরু হয় আলোচনা। প্রথমেই জানতে চাইলাম ব্যাক টু দ্য ভিলেজ নির্মাণের পেছনের কথা। রিক বলা শুরু করলেন। অক্সফোর্ডের ড. টি স্কারলেট এপ্সটেইন একজন নৃবিজ্ঞানী। ৪০ বছর ধরে তিনি দক্ষিণ ভারতে গবেষণা করছেন।

সেখানকার অঞ্চলগুলোতে বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে তার কাছ থেকে শুনি এবং ডকুমেন্টারি বানানোর পরিকল্পনা করি। এই ডকুমেন্টারি নিয়ে প্রাথমিক কাজ করার সময় সেখানকার কোন জিনিসটা আপনাকে বিশেষভাবে আগ্রহী করেছে? রিক বললেন, দক্ষিণ ভারতের তিনটি গ্রামÑমঙ্গলা, নাগাথিহালি ও কর্নথিহালি নিয়ে আমি এটি বানিয়েছি। গ্রামগুলোতে পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে সেখানে শস্যাদি জন্মায় না বললেই চলে। তাদের জীবনে পানির গুরুত্ব এতটাই যে তারা ছেলেমেয়র বিয়ে দেয় পানির কথা চিন্তা করে, মানে দূরের এমন সব গ্রামে যেখানে পানির অভাব নেই।

এই ডকুমেন্টারিতে বিশ্বায়নের খারাপ দিকগুলো কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে? ওই গ্রামের লোকজনের প্রধান পেশা হল গুড় তৈরি। ছোট ছোট গুড়ের মিলগুলোতে তারা কাজ করে। কিন্তু পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। তাছাড়া আমেরিকা থেকে কম দামে গুড় আমদানির ফলে দেশীয় গুড়শিল্প হুমকির মুখে। শ্রমিকরা ক্রমেই বেকার হয়ে পড়ছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে সরকার কেন তাহলে এই আমদানি বন্ধ করছে না। কারণ তারা তা চায় না। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থায় তাদের ব্যাপক ঋণ। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হল শ্রম। গ্রামে যারা বেকার হয়ে পড়ছে তারা শহরে এসে গার্মেন্টস, টেক্সটাইলগুলোতে অত্যন্ত কম মজুরিতে কাজ নিতে বাধ্য হয়।

আর এভাবেই গার্মেন্টস, টেক্সটাইলগুলো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এবং সরকারও রাজস্ব আয় করে। এই ডকুমেন্টারি তো আপনি ভারতে প্রদর্শণ করতে পারেননি। হ্যাঁ। ভারত সরকার এর অনুমতি দেয়নি। ব্যাপারটা খুবই দুঃখের।

কিন্তু কী আর করা। যাহোক, এটা অবশ্য এখন বিশ্বের ২৫টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রাচ্য এবং পশ্চিমের মধ্যে কোন জিনিসটা আপনাকে কষ্ট দেয়? পশ্চিম প্রাচ্য থেকে মুনাফা লুটছে। এবং এতে করে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে কি আপনি কোনো ডকুমেন্টারি বানাচ্ছেন? ইচ্ছা আছে।

কিছু কিছু পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, আগামী বিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকাংশ ডুবে যাবে। এই বিষয়টা নিয়েই আমি একটা ডকুমেন্টারি বানানোর চিন্তা করছি। পড়াশুনাও শুরু করেছি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নিয়ে আপনার ধারণা কেমন? বিশেষজ্ঞরা তো বলেন এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রান্তিক দরিদ্র শ্রেণী উপকৃত হচ্ছে না। আমার ব্যাক টু দ্য ভিলেজ-এ দেখানো হয়েছে মাত্র আট হাজার রুপি ব্যাংক থেকে ধার নিতে গিয়ে লোকদের তিন হাজার রুপি ঘুষ দিতে হয়।

এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে লোকজন উপকৃত হচ্ছে। তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এনজিওর পরিধি ছোট থাকলেই ভাল। বড় হলে সেটা ব্যবসায় পরিণত হয়। ভবিষ্যতে আপনার কি ফিকশন ছবি নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আছে? অবশ্যই না। আমি ডকুমেন্টারি নির্মাণেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

আপনাকে শেষ প্রশ্ন করি। জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন? আমি মনে করি জীবন মানে সত্যের সন্ধান। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই। মহাত্মা গান্ধীর একটি উক্তি আমি সবসময় স্মরণ করি, ‘পৃথিবী তার প্রাচুর্য নিয়ে আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথিবীর সম্পদ থেকে প্রয়োজন মেটাবে, তবে এ সম্পদ কারো লোভ লালসা বা বিলাসের জন্য নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।