কবি
১.
তারোকাভস্কির ' নস্টালজিয়া'র কথা হঠাৎ করে আজ বড় বেশি মনে পড়ছে। ওই ছবির একটা দৃশ্যই বারবার ঘুরে ফিরে হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে আজ কদিন হলো। একটা লোক এই নষ্ট দুষ্ট পৃখিবীর কথা জনতাকে মনে করিয়ে দিয়ে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিচ্ছে। উপস্থিত সোনার পিত্তল জনতার বোধের কানে তার কথার আধেক প্রবেশ করলো বা করলো কি করলো না। লোকটি বলেই গেলো, ক্লান্তিহীন সে বলেই যাচ্ছে আজও।
আর এদিকে জনতা খোশগল্পে মসগুল, সুন্দরীরা তাদের ঠোঁটে রঙের আভা বুলিয়ে নিলো। তারপর তারা জ্যান্ত মানুষের গায়ে কেরোসিনের আগুন কেমনতর উজ্জ্বল তা দেখার জন্যই যেনো অপেক্ষা করছে। তারা দৃশ্য মঞ্চায়নের অপেক্ষায় অধীর। লোকটা তার গায়ে আগুন জ্বেলে দেয় না কেনো। দিলেই তো যায় সব, সব! সমস্তু সংকট আর ব্যথার কথা বাতাসে ছড়িয়ে সে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বেলে দেয়।
পৃথিবীর অনিয়ম আর মানুষের ব্যক্তি অক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সরূপ লোকটি আত্মহত্যা করেছিলো। এই দৃশ্যে জনতা হেসে ওঠে, তারা চলে যায় যে যার পথে............ বাতাস বইতে থাকে। পাবলিক স্কয়ার সুনসান পড়ে থাকে।
মাত্র একটা শিকলে বাঁধা কুকুর প্রতিবাদ করেছিলো। কুকুরের তীব্র ঘেউ এই সভ্যতার নিষ্ঠুরতার প্রতি প্রতিবাদ করেছিলো।
আমরা ছিলাম নীরব. আত্মমগ্ন।
২.
মানুষের মৃত্যুতে কিছু আসে যায় না মানবের, মানবীর, আমাদের, সমাজের, সভ্যতার, পৃথিবীর। আর একজন কবির মৃত্যু হাস্যকর আরও বেশি হাস্যকর। কবি কি আর তোমাদের মানুষ? এখানে এই ভূগোলে পিশাচের দাঁতের নিচের অন্ধকারে যে কবি বেড়ে ওঠে, যে কবি লিখে, সেতো আরও অন্ধকারময়। তাকে ঠিক দেখা হয়ে ওঠে না আমাদের।
কবির রক্তের ভেতর পরিবর্তনের জীবাণু বেড়ে ওঠা, তার মাথার ভেতরের স্নায়ু পেশীর কোনায় সূর্যের বীজ নিয়ে তাকে পার হয়ে যেতে হয় সময়ের গড়ের মাঠ। তার পাশ দিয়ে ছুটে যায় যুদ্ধের রঙিন ঘোড়া। সমান মাটির ধুলোর পৃষ্ঠায় সে ছড়িয়ে দেয় সূর্যবীজ, সে বসে থাকে অঙ্কুরোদগমের প্রত্যাশায় আর তার গভীর প্রশ্বাসে সে ছড়িয়ে দেয় তার বুকের জীবানু। নব আলোর জন্ম তার আশা, সৃষ্ট জীবন উপলব্ধি ধ্বংস তার প্রত্যাশা। এই জীবানু, মারণান্ত্র আর টগবগে সূর্ষ রেণু নিয়ে সে বেঁচে থাকে আমাদের সময়ে।
সেই রঙীন যুদ্ধ ঘোড়া তার সাজ ঘর মাড়িয়ে চলে গেলে, অনন্ত এক না বুঝার মধ্যে, নিজের ভেতর নিজে মিশে যেতে যেতে তার ঘাড়ের অন্ধকার একদিন কথা কয়,তাকে বলে ''আরও আরও মিশে যাও নিজের ভেতর। '' কবি মিশে যেতে থাকে। সে চলে যেতে থাকে আমাদের থেকে দূরে। মাত্র তার দেহের অস্তিত্ব পড়ে থাকে আমাদের মাঝে। এই বিপুল দুরত্বে বসে কাউকে না কাউকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় স্বেচ্ছামৃত্যুর।
কবি চলে যায়। তাকে চলে যেতে হয় মাথার ভেতর সূর্যের রেণু আর বুকের ভেতর জীবাণু নিয়ে। এই না বুঝার দায় কাকে দেবো হে সুসময়!
৩.
আমাদের কবি বন্ধু সুমন প্রবাহন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথে একরাতে চলে গেছে। ও আর ফিরবে না। এই তার সংকেত আমাদের প্রতি।
সময়ের সাথে এক অদৃশ্য যুদ্ধের ময়দানের পাশে ওর তাঁবু। এখন যুদ্ধ বিরতি। সুমন বর্মের ভেতর থেকে বের হয়ে এসে এসে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর প্রিয় ঘোড়াটির পাঁজর চিরে বের হচ্ছে সাদা ডানা। সমস্তু যুদ্ধাস্ত্র ফেলে, যা কিছু বর্মের সফলতা তা ছাড়িয়ে সুমন উঠে বসেছে ওর প্রিয় ঘোড়ার পিঠে।
সে চলে যাচ্ছে আরো দূরে..........ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে অদেখা ঠিকানায়।
৪.
''দূর থেকে হাত তোলো যদি পারো জানাও সন্মতি, না হলে সংকেত আজো বৃথা যাবে ''
সুমন ওর সংকেত পাঠাচ্ছে আমাদের দিকে '' ভাড়াড়ের শূন্যতার ভেতর বেঁচে থাকো। '' আমরা বেঁচে থাকি অর্থহীন, ভীত, যুদ্ধহীন, ডানাওয়ালা ঘোড়াহীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।