আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার যদি একটা মেয়ে থাকত!- একজন 'বাবা' বলছি

ভাবে মন অকারণ সারাক্ষণ...যখন বাস্তবতা>আবেগ

অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছুনো গেল। মধ্যরাত পেরিয়ে গেলে এ জায়গাটাতে আসা এখন প্রতিদিনকার রুটিনের ভেতর পড়ে। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করেছি অনেক আগেই। অন্যদিন সাথে সাথেই নেমে যাই। আজ কেন জানি ইচ্ছে হচ্ছে না।

থাকি না আরও কিছুক্ষণ বসে........যে জন্য আসা সেই উদ্দেশ্য তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। আর একটু এদিক-সেদিক হলেই বা ক্ষতি কি! আজ বারবার মনে হচ্ছে আমার একটা মেয়ে থাকলে কী এমন বড় ক্ষতি হতো?বরাবরই চাইতাম আমার যেন একটা মেয়ে হয়। তাকে কোলে করে নিয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দেব। তার জন্য গাদা গাদা জামা-কাপড় কিনে আনব। সেই সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি,টিপ,ফিতা,লিপস্টিক-আরো কত কি!তার পুচ্চি পুচ্চি হাত আমার হাতটাকে ধরে রাখবে।

অফিস থেকে ফিরলেই 'বাবা 'বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ওষুধ খেতে ভুলে গেলে রেগে গিয়ে গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে থাকবে। তারপর মিথ্যে রাগ চেপে রাখতে না পেরে ফিক করে হেসে ফেলবে। তার সেই খিলখিল হাসি শুনে আমিও হেসে ফেলব। তারপর দুই বাপ-বেটিতে হাসতেই থাকব,হাসতেই থাকব.... কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতেই পারিনি।

আজ জীবনের মধ্যাহ্ন পেরিয়ে এসেও একটা মেয়ে না থাকার অভাবটা বারবার কড়া নেড়ে যায়। দুটো ছেলে আমার। ছোটবেলাতে বাবার সাথে ক্রিকেট খেলার জন্য সে কি আবদার তাদের!ওদের ছোট ছোট হাত দুটো মুঠোয় ভরে মেয়ের দুঃথ ভুলতে চাইতাম। 'বাবা,বাবা' বলে যখন ছুটে আসতো,ভাবতাম এরাই আমার সব,এরাই আমার ছেলে,এরাই মেয়ে। মাঝে মাঝে বউকে বলতাম,শোনো,এবার কিন্তু ওদের চুল কেটে দেব না।

লম্ব লম্বা চুলে তুমি ফিতা দিয়ে ঝুঁটি বেঁধে দেবে,কেমন? বউ আমার অদ্ভুত চোখে তাকাত। আমার পাগলামি দেখে আড়ালে হয়তো হাসাহাসিও করত। তাতে কি?আমি তার থোড়াই কেয়ার করি! শোভনের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমার ছোট ছেলে। বড় ছেলে শাওন তো কবেই চলে গেছে বিদেশ-বিভূঁইয়ে।

যতটা সম্পর্ক না রাখলে নয়,সেটুকুই সে রাখে। ওটা নিয়ে আর আফসোস করি না। কষ্ট পাই শোভনকে নিয়ে। জানি,এক সময় এই কষ্টটাও ফিকে হয়ে যাবে। শোভনের কথা মনে হতেই মনে পড়ল তিথির কথা।

এতো মিষ্টি একটা মেয়ে!শোভনের বন্ধু.....উঁহু!সবচাইতে ভালো বন্ধু। বাসায় যেদিন প্রথম এসেছিল,পুরো বাসাটাকে হইচই করে মাথায় তুলেছিল। অনেকদিন পর বাড়িতে উৎসব উৎসব ভাব চলে এসেছিল। তারপর থেকে আমার সাথে প্রায়ই কথা হতো। কে জানে,ওর মাঝেই হয়তো আমার না পাওয়া মেয়েকে খুঁজতে চেয়েছি।

তিথি,কেন তুই এভাবে চলে গেলি?কেন রে?তোর ক্যান্সার,কথাটা তুই কাউকে বুঝতে দিস নি। তোর এই বাবাকেও না। এমনকি শোভন,যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসত তাকেও না!সেজন্যই তুই শোভনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলি,নারে?কেউ সেটা বোঝে নি,কেউ না। তুই চলে যাবার পরই বুঝেছি তোর ভালোবাসা কতখানি গভীর ছিল........ আজ খুব ইচ্ছে করছে,আকাশের তারাগুলো থেকে তিথিকে খুঁজে বের করি। ওর সাথে গল্প করি যেমনটা করতাম ও বেঁচে থাকতে।

এসব কি বলছি,তিথি কেন মারা যাবে?ও তো আমার মিষ্টি মেয়ে,ও তো সবসময় আমার মাঝেই আছে। তিথি,তুই তো চলে গেলি। আর আমার শোভনকে এভাবে একা ফেলে গেলি?তুই চলে যাবার পর আমি নিজেও অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। বারবার তোর শেষ মুহূর্তের কথা মনে পড়ত। নিজের মাঝেই গুটিয়ে গেছিলাম।

সবসময় কানে বাজতো তোর শেষ কথা, 'শোভন যেন আমাকে ভুল না বোঝে। আর বাবা,তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি!' এখনও বাজে,এখনও....... কিন্তু মাঝখান থেকে শোভনটা যে বদলে যেতে থাকল,একটুর জন্যও বুঝতে পারি নি। শোভনটা যদি মেয়ে হতো,ও কি পারত এভাবে বদলে যেতে?একটু হলেও বাবার কথা ভাবত না?খুব আবেগী মেয়েরা কি করে রে?বড়জোর গলায় ফাঁস লাগিয়ে ধুম করে মরে যায়?তাও তো বুঝি ভালো ছিল! তবু চোখের সামনে এই কষ্ট তো দেখতে হত না! আজ বাবা হিসেবে কি আমি এতোটাই ব্যর্থ হয়ে গেলাম! তিথি,তুই থাকলে আমি জানি,শোভনের জীবনটা অন্যরকম হতো.....আমারটাও। অন্তত প্রতিদিন ডিসকো বার থেকে এই অসহায় বাবাকে তার মাতাল ছেলেকে তুলে নিয়ে যেতে হতো না..............

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।