আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্জের ভাষণ

যে ব্যক্তি সত্কর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমূখী করে. সে এক মজবুত হাতল ধারন করে. সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। হযরত নবী করীম (সা) এবার লোকদেরকে হজ্জের আহকাম শিক্ষা দেন এবং আরাফাতে একটি ভাষণ দান করেন। হামদ ও ছানার পর তিনি বলেন : জনমন্ডলী! আমার কথা শ্রবণ করো। কেননা, আমি আগামী বছর কিংবা তারপর এই জায়গায় তোমাদের সাথে মিলিত হতে পারবো বলে মনে হয় না। জনমন্ডলী! আজকের এই দিন ও এই মাস যেমনি হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ, তেমনি তোমাদের পরস্পরের জান-মালও তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ।

অর্থাৎ মুসলমানের জান-মালের হেফাযত প্রত্যেক মুসলমানের করা উচিত। আমানতসমূহ তার মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। অন্যের উপর জুলুম করবে না, তাহলে তোমাদের উপরও জুলুম করা হবে না। সুদ হারাম। এই সরযমীনে শয়তানের পূজা করা হবে না।

শয়তান এ ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে। তবে ছোট ছোট বিষয়ে তার আনুগত্য করা হবে। সুতরাং শয়তানের আনুগত্য থেকে তোমরা দূরে থাকবে। হে লোকসকল! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করবে।

আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি আল্লাহর কিতাব, অপরটি তাঁর নবীর সুন্নাত। যে পর্যন্ত তোমরা কিতাব ও সুন্নাতের উপর আমল করবে, পথভ্রষ্ট হবে না। মুসলমান একে অপরের ভাই। একজন মুসলমানের সম্পদ আরেকজন মুসলমানের বিনা অনুমতিতে ভোগ করা বৈধ নয়।

তোমরা একে অন্যের উপর জুলুম করবে না। তারপর তিনি লোকদের জিজ্ঞেস করেন, আমি কি আল্লাহর বিধান তোমাদের কাছে পৌঁছে দিইনি ? সবাই সমবেতভাবে উত্তর দিলো, হাঁ, আপনি অবশ্যই আল্লাহর বিধান আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক! তিনি এই ভাষণে এমনিভাবে কথাগুলো বললেন যেমনিভাবে কেউ কারো থেকে বিদায় গ্রহণ করে কিংবা বিদায় দান করে। এজন্য এই হজ্জের নাম হুজ্জাতুল বিদা‘ বা বিদায় হজ্জ’ নামে পরিচিতি। তিনি এ বছর খুতরার মধ্যে বিশেষভাবে ইসলামী আহকাম প্রচার করেন।

তাই এই হজ্জকে ‘হুজ্জাতুল-বালাগ’ নামেও নামকরণ করা হয়। এই ভাষণ শেষ হওয়ার পরই হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা)-এর মাতা এক পিয়ালা দুধ পাঠিয়ে দেন। তিনি তা পান করেন । এই হজ্জে লক্ষাধিক মুসলমানের সমাবেশ হয়। কারো কারো মতে, এক লাখ চব্বিশ হাজার সাহাবা এইবার তাঁর সাথে হজ্জ করেন।

তিনি ঐদিন এও বলেন যে, ইতিপূর্বে সকল নবী যা কিছু বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম বাণী হচ্ছে- (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁরই।

তিনি সর্বশক্তিমান)। আরাফাতের দিন নবী করীম (সা) মক্কায় থাকতেই আয়াত নাযিল হল- (আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম (সূরা মায়িদা :৩)। এই আয়াত শ্রবণ করে অনেক সাহাবী খুশী হন। দীন-ইসলাম আজ পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। কিন্তু আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর মতো রহস্যবিদ সাহাবা অশ্র“সজল নয়নে বললেন, এ আয়াত থেকে বিচ্ছেদের গন্ধ আসে।

কেননা, দীন পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর নবীর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। হজ্জ সমাপন করে নবী করীম (সা) মদীনা রওয়ানা করেন। (ইসলামের ইতিহাস, ১ম খন্ড,২২১ নং পৃঃ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।