আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন চাকাঃ রিকশাচালকদের মিউজিক্যাল কম্পিটিশন

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

শফিক গাইতে গাইতে রিকশা চালাচ্ছে। পাশে এসে শিশির তার মোটরবাইক থামালো - তার দরকার ছিল একজন রিকশাচালক মডেল। রিকশাচালকদের জন্য আয়োজিত একটা গানের প্রতিযোগিতার পোস্টারের জন্য তার ছবি তুলবে জানাতেই শফিকের চোখ ছলছল করে উঠলো। পোস্টারের ছবিখানা সেই শফিকেরই। এই আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টা সেই শিশিরের সাথে আজকে দেখা করে এলাম।

মিরপুর-১ নম্বর গোলচক্করে কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে যে মার্কেটটা আছে সেটি মুক্তবাংলা নামে পরিচিত। তার পেছনের দিকে রয়েছে ৬ নম্বর সড়ক, আর এর ৩০ নম্বরের দোতালা বাড়িটায় নীচতলায় শিশিরের প্রতিষ্ঠান "শিশির বিন্দু"। তিন চাকার যাবতীয় মার্কেটিং ও জনসংযোগের দায়িত্ব সে পালন করছে। তার বন্ধু তুষারের জ্যাট মিউজিক দেখছে গানের প্রতিযোগিতার বিচারক, অডিশন, মিউজিকসহ অন্যান্য দিকগুলো। উত্তরার শান্তা-মারিয়া মিউজিক স্কুলের শিক্ষকরা থাকবেন অডিশনে বিচারক হিশেবে।

এমনতরো কথাই হয়েছে। এলিট কসমেটিকস নামে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিছু টাকা দেবে - এছাড়া পুরো খরচটা এখনও আয়োজকদের পকেট থেকেই যাচ্ছে। মিরপুর-১ নম্বরের মিরপুর উপশহর সরকারী হাইস্কুলের মাঠে ৯ই মে অনুষ্ঠিত হবে অডিশন। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সাতজনকে নিয়ে শুরু হবে দুইমাসের সংগীত কোর্স। সেখানে তাদের থাকা, খাওয়া সবকিছু বহন করবে আয়োজকরা।

পরবর্তীতে তাদের গানের মিউজিক ভিডিওসহ এ্যালবাম বের হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার রিকশাচালক নাম রেজিস্ট্রেশন করেছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে সেটা রিকশাআলাদের কোন কাজে আসবে না বলে রিকশার পেছনে লাগানো হয়েছে পোস্টার। অনেক রিকশাচালকই নিজের রিকশার পেছনের পোস্টার যে তাকে উদ্দেশ্য করে - সেটি বুঝতে পেরেছে যাত্রীদের কাছ থেকে। শিশির বললো, অনেক যাত্রীই তাকে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে তার রিকশাচালককে সে বুঝিয়ে দিয়েছে অনুষ্ঠানের বৃত্তান্ত।

শিশির জানালো এখন পর্যন্ত কোন মিডিয়ার সাথে তার কথা হয় নি। কোন পত্রিকাতেও সংবাদ দিতে পারে নি। কিন্তু রিকশাচালকদের আগ্রহে সে অভিভূত। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা শহরেও নাকি রিকশাচালকদের মুখেমুখে ছড়িয়ে গেছে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা। পুরো আইডিয়াটা আমার কাছে অভূতপূর্ব মনে হয়েছে।

এটা মধ্যবিত্তের ড্রইংরুম আর নিম্নবিত্তের ঘুপচি ঘরের এন্টারটেনমেন্টের একটা দারুণ প্যাকেজ হতে পারে। ক্লোজআপ ওয়ান জাতিয় প্রতিযোগিতার চেয়ে আরো বৈচিত্রপূর্ণ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। যেকোন মোবাইল সিম, সাবান বিক্রেতা কোম্পানী কেন এখনও প্রতিযোগিতাটা লুফে নেয় নি সেটাই আমার কাছে আশ্চর্যজনক লাগছে। টিভি মিডিয়াগুলো হারাচ্ছে বোধহয় দারুন একটা বিনোদনের খবর!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।