যারা কিছু হলেও লেখালেখি, প্রকাশনা ইত্যাদির সাথে জড়িত, তারা আইএসবিএন শব্দটির সাথে ভালই পরিচিত। যেটি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বুক নম্বর এর সংক্ষেপ। পৃথিবীর তাবৎ বইএর মাঝখান থেকে আপনার বইটিকে সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করার জন্য এই নম্বরের বিকল্প নেই। লন্ডনের ডাব্লুএইচস্মিথ নামে এক স্টেশনারীর দোকান তাদের নিজেদের ক্যাটালগিং এর জন্য এর ব্যাবহার শুরু করে, পরে তা জনপ্রিয় হতে শুরু করলে বিলেতী বইগুলো এই নম্বর ব্যাবহার করার শুরু করে যেটি প্রথমে এসবিএন নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে যখন এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে তখন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বুক নম্বর সারা পৃথিবীর সব বইকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সাধারণত এটি দশ ঘরের একটি সংখ্যা যা বইয়ের পেছনে আর ভেতরের পাতায় উল্লেখ করা থাকে। এখন পেছনে বারকোড আর আইএসবিএন একই সাথে থাকে যেন চেকআউটের সময় একবারেই স্ক্যান করে বই বিক্রির কাজ সেরে ফেলা যায়।
http://en.wikipedia.org/wiki/Isbn
আইএসবিএন কিভাবে কাজ করে তার জন্য উইকিপিডিয়ার একটি চমৎকার আর্টিকেল আছে, সেটি পড়ে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু মূল ভেজালে চলে আসি। প্রতিটি বইকে চিহ্নিত করার জন্য দশ ঘরের যেই সংখ্যার প্রয়োজন, এক সময় দেখা গেল দশ ঘরে সব ভাষার সব বইকে আঁটানো যাচ্ছে না।
তাই কয় বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আইএসবিএন দশ ঘরের বদলে তের ঘরের করা হবে। আর তাতেই লেগে যায় সব প্যাঁচ।
প্রতিটি দেশেই আইএসবিএন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সংস্থা থাকে। যারা এই বিষয়টি দেখাশোনা করেন। বাংলাদেশের জন্য এই প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার।
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পেছনের বিশাল এক লাল দালানের গুদামঘর। হিসেব মোতাবেক দেশের ছাপা প্রতিটি বইয়ের এক কপি সেখানে থাকার কথা প্লাস আইএসবিএন তো আছেই। সেই কাজটি নিতান্তই দায়সারাভাবে তারা করে আসছেন গত ত্রিশ বছর ধরে। একটি উদাহরণ দেই, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে একুশে বইমেলায় প্রায় হাজার দেড়েক বই আর পুরো দেশ মিলিয়ে দু-আড়াই হাজার বই ছাপা হয়েছে। জাতীয় গ্রন্থাগার কতৃপক্ষ সারা দেশ মিলিয়ে প্রায় ছশো বইয়ের তালিকাভুক্তি করতে পেরেছে।
এতদিন পর্যন্ত লেখক, প্রকাশকদের দশ ঘরের আইএসবিএন নম্বর দিয়ে আসছিলেন, আর সেটি বসিয়ে দিব্যি কাজ চলে যাচ্ছিল। তের ঘরের নম্বরসূচী আসার পরে য়্যুরোপ, ম্যারিকাতে প্রতিটি বইয়েরই দশ ও তের সংখ্যার আইএসবিন একই সাথে দিয়ে আসছে। উদাহরণঃ
Click This Link
কিন্তু আমাদের গ্রন্থাগার শুধুমাত্র তের সংখ্যার আইএসবিএন ইস্যু করছে। হটাৎ করেই আমরা পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে এক কাঠি এডভান্স হয়ে গেলাম। ফলে বিপুল পরিমাণ সিস্টেম যেগুলো এখনো তের সংখ্যার আইএসবিএন ধারণের জন্য উপোযোগী নয় (নন-কম্প্যাটিবল) সেখানে এই এন্ট্রিগুলি প্রথম ধাক্কাতেই ইনভ্যালিড।
তারপরের বড় সমস্যা হল, যেই আইএসবিএন গুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলি ভূল। আমি নতুন পাওয়া বেশকিছু বইয়ের আইএসবিএন আমাজনে আপলোড করার চেষ্টা করলাম, প্রতিবারেই বলছে এলগরিদমে সমস্যা আছে। আইএসবিএন-চেকার বা এই ধরণের বেশকিছু ওয়েবসাইট আছে যারা বলে দিতে পারেন কোন একটি আইএসবিএন এলগরিদমের দিক থেকে সঠিক আছে কিনা। এবছরের পাওয়া সবগুলো আইএসবিএনই ভূল পেয়েছি।
http://www.isbn-check.com/
এখন সবচেয়ে প্যাচালো অংশ।
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? জাতীয় গ্রন্থাগারে আলাপ করে যেটুকু বের করতে পারলাম তা হল, উনাদের 'বড় সারের' রুমে নাকি কোন প্রজেক্টের কাজে ইন্টারনেট আনা হয়েছিল, তাতে কোন কোন সময়ে ইমেইল চেক করার সুযোগ পাওয়া যায়। আর বাকি এই তথ্যের মহা ভান্ডারের সাথে বহির্বিশ্বের কোন সম্পর্ক নেই। সবচেয়ে উৎসাহী আর কর্মচঞ্চল যেই অফিসারকে পেলাম, জামাল সাহেব রাবি থেকে লাইব্রেরী সাইন্সের গ্র্যাজুয়েট, ওনার অফিসে একটা ৯৬-৯৭ সালের প্রায় বাতিল একটা আইবিএম পেলাম। আমি নিজে চালাতে গিয়েই ক্র্যাশ করালাম একবার, আর সেটার ডিভাইস ড্রাইভার বলতে কিস্যু নাই। আমার নিজের কোন আইডিয়া নাই এই জগাখিচুড়ি বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা থেকে এক ইঞ্চি আগানোরও কোন রাস্তা আছে কিনা।
তবে ২০০৭ থেকে তের সংখ্যা শুরু হয়েছে। এখনো খুব বেশী দেরী হয়নি। পেপার পত্রিকায় লেখালেখি করে বিষয়টাকে এখুনি সাইজে না আনা গেলে আমাদের পুরো বাঙ্গালী জাতীর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ভান্ডার বিশ্বের সাথে ইনকম্প্যাটিবল হয়ে যাবে। সাত সমূদ্র তের নদীর ওপার থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু বলার সুযোগ নেই।
সামহোয়ারের সিরিয়াস লেখক আর প্রকাশনায় যুক্ত যারা আছেন তারা একটু সিরিয়াসলি বিষয়টা নিলে পুরো জাতি হিসেবে আমরা বেঁচে যেতে পারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।