ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
বার্মিংহাম আসার পর প্রথম প্রথম পুরনো পেশা রিলেটেড কোনো কাজ খুজছিলাম। কোনো অফিস জব....। গ্রাফিক্সের কাজও কিছু পারি (আহামরি কিছু না)। কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের জন্য আবেদন করলাম এবং রিফিউজাল লেটার পেয়ে গেলাম। অফিস জবের জন্য অফিস টাইমে অ্যাভেইলেবল থাকা লাগবে।
কিন্তু আমার ক্লাস আছে। অফিস টাইমে কাজ করতে পারবো না। কি আর করা। পুরনো ধ্যান ধারণা সব বাদ দিতে হলো। পাউন্ড দরকার।
হোটেল-রেস্টুরেন্টে যে কোনো একটা কাজ হলেই হয়। পকেটের অবস্থা তো বারটা। আর কয়দিন এভাবে চললে খাওয়া-দাওয়ার টাকাও শেষ হয়ে যাবে।
পরিচয় হলো ঢাকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাবেক বাঙালি একজন অফিসারের সঙ্গে। তিনি এমবিএ ছাত্র।
এখানে একটা খাবারের দোকানে পার্ট টাইম কাজ করছেন। তিনি জানালেন, প্রথম তিন মাস তিনি ভালো চাকরি খুজেছেন। কিন্তু কোনো চাকরি পান নাই। আর এখানে ছাত্র অবস্থাতে এ ধরনের চাকরিই সবাই করে।
তবে আমি ঠিক কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ পাবো, এদের চাহিদা কি ধরনের তা জানা ছিল না।
বার্মিংহামে আসার পর এ ধরনের রেস্টুরেন্টের জন্য নতুন করে সিভি বানাতে হলো। নতুন সিভিতে আমার কম্পিউটার স্কিল, পত্রিকায় কাজের অভিজ্ঞতা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে হলো। তাই এগুলো বাদ দিয়েই সিভিটা বানালাম। এক পৃষ্ঠার সিভি ৫০ কপি প্রিন্ট করে গেলাম বার্মিংহাম সিটি সেন্টারে। সেখানে খাবারের দোকানগুলো আর বড় সব ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সিভি বিতরণ করলাম।
সাধারণত সবাই সিভি রেখে দেয়, বলে পরে জানাবে। আর অনেকে আবার সিভি নেয় না, নতুন এক ফর্ম ধরিয়ে দেয়। বলে ফর্মটা ফিলাপ করে জমা দিতে।
বার্মিংহাম শহরটি ঢাকার মতোই বড় আর ছড়ানো ছিটানো। কিছু দূরে দূরে সাভারের মতো অনেকগুলো উপশহরের মতো আছে।
এগুলোকে টাউন সেন্টার বলে। এ টাউন সেন্টারগুলোতে বেশ বড় বড় সুপার স্টোর আর রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা প্রায় প্রতিদিন একটা করে টাউন সেন্টারে যাই আর বড় দোকানগুলোতে একটা করে সিভি দিয়ে বেড়াই। আশা করছি এদের মধ্যে কেউ যদি ভুল করেও ডাক দেয়।
এ ঘুরাঘুরিতে আমাদের সবচেয়ে কাজে লাগছে বার্মিংহামের সবচেয়ে বড় বাস কম্পানি- ট্রাভেল ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস।
এদের অফিসে গিয়ে একটা ফ্রি ম্যাপ নিয়ে আসলাম। সেই সঙ্গে এক বছরের বাস কার্ডও কিনে নিয়েছি। ২৬০ পাউন্ড দামের এ বাস কার্ড দিয়ে এক বছর যতোবার ইচ্ছা বার্মিংহামে এ কম্পানির যে কোনো বাসে চড়া যাবে। কম্পানির ম্যাপটাতে কোন এলাকায় কোন বাস যায় তার নিখুত বর্ণনা আছে। এছাড়াও এ ম্যাপে সিটি সেন্টারের কোন বাসস্ট্যান্ড থেকে কোন বাসে ওঠা যাবে, কোথায় থামবে এগুলোরও ধারণা পাওয়া যায়।
প্রত্যেক বাসস্ট্যান্ডেই কতো নাম্বারের বাস থামবে, কোথায় কতো মিনিট পরে যাবে, তা পরিষ্কার করে লেখা থাকে। এখানে এক স্ট্যান্ডের বাস অন্য স্ট্যান্ডে কখনোই দাড়ায় না। এছাড়াও ট্রাভেল ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের ওয়েব সাইটে কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য জার্নি প্ল্যানার দেওয়া আছে। আমার বাসা থেকে কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য সেখানে চেক করে নিলে যাওয়ার সোজা রাস্তা, কয়টা বাস চেঞ্জ করতে হবে, কয়টার সময় কোন বাস আসবে, কতো সময় লাগবে ইত্যাদি চেক করা যায়। আপাতত এসব দেখে দেখে আমার চাকরির সন্ধান চলছে।
এতো কিছুর পরও কেন যে বেকার থাকতে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
...................................................................................................
ট্রাভেল ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের ওয়েব: http://www.travelwm.co.uk/
এদের জার্নি প্ল্যানার: Click This Link
(ছবি মোবাইল ক্যামেরায় তোলা বার্মিংহাম সিটি সেন্টারে বুল রিং শপিং সেন্টারের ভেতরে ও বাইরে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।