আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

সংবিধান-ই নাগরিকের শক্তি

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ ১৭ মার্চ। জাতির জনক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৮৯তম জন্মদিন। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২০ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। এর ফলে কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই মহান নেতা রাজনীতিতে দীৰা নেন স্কুল জীবনেই। তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে তিনি প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালেই। শুর্ব হয় বিপৱবের জীবন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতায় ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হন। আর এ সময়ই তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথমসারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্য লাভ করেন।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসাবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই তর্বণ বয়সেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন, ধীশক্তিসম্পন্ন নেতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর একমুহূর্তও থেমে থাকেননি বঙ্গবন্ধু। পশ্চিম পাকিস্তানীদের খড়গ র্বখতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ৰমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বির্বদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তর্বণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নবগঠিত এই আওয়ামী লীগের নামকরণে প্রথমবারের মতো আঁতকে উঠে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এরপর থেকেই চলে অবিরাম আন্দোলন। কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য। এসবের আড়ালে গড়ে উঠে স্বাধীনতার আন্দোলন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২এর মহান ভাষা আন্দোলন, '৬২এর শিৰা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারার্বদ্ধ হন। এভাবে স্বাধীনতার আন্দোলনের জন্য বার বারই কারার্বদ্ধ হন মহান নেতা শেখ মুজিব। ৬০-এর দশকের শুর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য জোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আন্দোলন কর্মসূচীতে অস্থির করে তোলেন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীকে। '৬৯ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা তাকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেয়।

'৭০ এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পৰে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। ফলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। তবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ দেন। সব আয়োজন শেষ।

আর অপেৰা নয়। '৭১ এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ''এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম''। ঐতিহাসিক এ ভাষন সেদিন ঐক্যবদ্ধ করেছিল বাঙালি জাতিকে। সেইদিনই স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধু সংগ্রামের দিক-নির্দেশনা দেন জাতিকে।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমন শুর্ব করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গোপন বিচার শুর্ব হয়। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু। দেশে এসেই মনোনিবেশ করেন দেশকে পুনর্গঠন করতে। কিন্তু সে সুযোগ তিনি বেশি দিন পাননি। ১৯৭৫ সালে তিনি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লৰ্যে জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট নিজ বাসভবনে ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলৰে আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিলৱুর রহমান জাতির উদ্দেশে বানী দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন এবং ওই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দিবসটি উপলৰে দুই দিনের কর্মসূচী পালন করবে। আজ সোমবার সকাল ৬টায় দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতৃবৃন্দের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা, বেলা সাড়ে ১২টায় বঙ্গবন্ধু সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, পবিত্র মিলাদ মাহফিল এবং দোয়া অনুষ্ঠান হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বঙ্গবন্ধুর ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলৰে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পৰ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, এই মহান নেতার জন্ম না হলে বাঙ্গালী জাতিসত্তা আজ হয়ত বিলুপ্তির পথে থাকত এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে আবির্ভূত হত না। জাতীয় পার্টির (জেপি) কর্মসূচি: সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ এবং পুষ্পমাল্য অর্পণ। বাদ জোহর বঙ্গবন্ধুর র্বহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এর আগে সকাল ৯টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। পিডিপির কর্মসূচি : বিকাল সাড়ে ৪টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন নাগরিক কমিটি, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল), বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। সুত্র: ইত্তেফাক ১৭ মার্চ ২০০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।