আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক পিশাচের কথা থেকে/ ইমরোজ আহমদ

ইমরোজ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হবার পর তৎকালীন পাকিস্তানি জেনারেলরা স্মৃতিচারণমূলক বই বের করেছেন। এই বইগুলো বের করার পেছনে মূল কারণ ছিল, পাকিস্তানের জনগণকে জানানো আসলে ৭১ সালে কী হয়েছিল। আর তখন এই সব জেনারেলদের ভূমিকাই বা কী ছিল। কিন্তু যে ব্যাপারটি দুঃখজনক তাহল সব জেনারেলই চেষ্টা করেছেন নিজেকে সেভ সাইডে রাখতে। একেকজন একেক জনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কাজ সেড়েছেন।

সব থেকে কষ্টকর কথা হচ্ছে এই সমস্ত বইয়ে পাকিস্তানিরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল তাকে হালাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সরাসরি যে সরকারে তখন নাকি একশানে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এটা কী ধরণের সাফাই গাওয়া আমি আজও বুঝলাম না। মানুষকে মেরে ফেলে কোনদিন কোন সমাধান হয়না। আর এটাই যদি শেষ উপায় হিসেবে বিবেচ্য হয় তাহলে মনে করতে হবে ৭১ সালে আসলে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করতে চেয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার।

নিজেদেরকে সেভ সাইডে রাখতে গিয়ে ইতিহাসের বারোটা বাজিয়েছেন জেনারেলরা। এমনই নমুনা আমি এখন আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। জেনারেল রাও ফরমান আলীর বই, "How Pakistan Got Divided". সেখানে তিনি ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরের কথা উল্লেখ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করা সম্পর্কে তিনি কী বলেছেন দেখুন, "When does a student cease to be a student? The answer that a student ceases to be a student when he carries arms should clear the army of the charge; all those who were killed were carrying arms, had refused to stop firing and accept order to surrender." যে রিকসাআলার লাশ আমরা দেখি ছবিতে, যে ছাত্রদের লাশ আমরা দেখি ছবিতে রাও ফরমান আলী তাদের কাছ থেকে ঠিক কতটা অস্ত্র উদ্ধার করেছেন? যদি অস্ত্র তাদের কাছে থেকেই থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে তা প্রকাশ করলেন না কেন? পাকিস্তানের সরকার তখন তো দেশে কোন সমস্যা নাই বলে তোলপাড় করছিলেন। এই বিদেশী সাংবাদিক আনছেন, হোটেলে মদ খাওয়াচ্ছেন।

তারা রিপোর্ট করছে পূর্ব পাকিস্তানে কিছুই হচ্ছে না। তাহলে যে হাজার হাজার লোক ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে মারা গ্যাল তাদের কাছে তো হাজার হাজার হাজার অস্ত্র থাকার কথা জেনারেল রাওয়ের কথা মত। কই? এইখানে কোন প্রমাণ রাও ফরমান আলী দিতে পারলেন না। অন্যদিকে সিভিল সার্ভেন্ট তদানিন্তন হাসান জহির তার বই, দ্যা সেপারেশন অফ ইস্ট পাকিস্তান-এ বলেছেন, Major General Rao Forman Ali was the executor of Dhaka part of operation "Searchlight". He succeeded is ,"Shock action" by concentrated and indiscrimination firing on target areas". অর্থাৎ রাও ফরমান আলী ছিলেন অপারেশন সার্চ লাইটের মূলহোতা। অথচ নিজেকে বাঁচাতে তিনি কী চরম মিথ্যাচার করেছেন।

সেনাবাহিনী কখনও ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়? এটা কেমন বিচার? তথ্য সূত্র: How Pakistan Got Divided এর বাংলা অনুবাদ বাংলাদেশের জন্ম থেকে। যার ভূমিকা লিখেছেন: মুনতাসীর মামুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।