আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজী অস্ত্রোপচার



ভাষা এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল একটি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে ভাষা। এই পরিবর্তন কারও কাছে ভালো লেগেছে, আর কেউ কেউ হয়তো এই পরিবর্তন মানতেই পারছেন না। আমি বিশেষ করে ইংরেজী ভাষার কথা বলছি। আমি কিন্তু ভাষা-বিশারদ নই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ইংরেজী বিভাগে পড়তে গিয়ে ছোটখাট কিছু বিষয় জেনেছিলাম। সেই ভাষা-জ্ঞান’ই আমার সম্পত্তি। সেই ভাষা-জ্ঞান’ই আমার একান্ত প্রাপ্তি। আমার নেই কোন ভাষা-বিষয়ক কোন পি.এইচ.ডি ডিগ্রী। একজন সাধারণ সাহিত্যের ছাত্রের যতটুকু জানা উচিত, ততটুকুই আমার সম্বল।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলোর একটি ছিলো এ্যাডভান্সড ইংলিশ। সেই ক্লাসটি নিতেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক, কাওসার হুসাইন। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি। ইংরেজী সাহিত্যে যাঁরা অধ্যয়ন করেন, তাঁদের বাইরে একটি হাস্যকর সম্মাননা যেমন দেওয়া হয়ে থাকে, ঠিক একইভাবে তাদের খুবই আজবট অভিযোগ’ও সইতে হয়। যেমন, কেউ ইংরেজী সাহিত্যে পড়ছে, শুনতে পেরে কেউ হয়তো বলে থাকেন, “বাহ্ খুব ভালো করেছো...তুমি নিজেও জানোনা কত ভালো একটা বিষয় তুমি পড়বার সুযোগ পেয়েছো!”- যিনি এই কথাটা বললেন তাঁর ধারণাটা আসলে এক অদ্ভূত এবং আদি-বনেদী ইংরেজীর প্রতি সম্মাননা থেকে বলা।

সম্মাননাটা আসলে কোন না কোনভাবে ইংরেজ-প্রীতি থেকেই আসা। এর সূত্র খুঁজতে পাড়ি দিতে হবে বহুদূর। সেই আলোচনায় না হয় নাই বা গেলাম। আবার, যাঁরা এই বিষয়ে পড়াশোনাকে অথর্ব মনে করছেন, তাঁরা বলছেন, “এই ভাষা যা তোমরা শিখছো, এ তো সাহিত্যের ভাষা...চাকরী-বাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য এসব ক্ষেত্রে করেস্পন্ডিং’এ কোন কাজেই আসবেনা এই সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। ”এরকম একটা একগুঁয়ে ধারণার ওপর টিকে রয়েছে আমাদের ইংরেজী সাহিত্য চর্চা, অন্তত, বাংলাদেশের ভেতরে।

আসলে সাহিত্য বা ভাষা কারও একার সম্পত্তি নয়। এই ভূমিকাটি দেওয়ার কারণ হলো ইংরেজী ভাষার একটি চিত্রকল্প সবার সামনে তুলে ধরা একজন ছাত্র হিসেবে। আমি এখন বাংলাদেশের খুব বড় মিডিয়া-প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছি। আমার কাজের অনেক বড় একটা জায়গা জুড়েই আসলে ইংরেজী ভাষার চলাচল। হাঁটতে ফিরতে ইংরেজী যাকে বলে।

বর্তমানে ইংরেজী ভাষা কোনদিকে যাচ্ছে তা আসলে বিশ্ব-সাহিত্য বা বিশ্বের বড় ইংরেজী পত্র-পত্রিকাগুলো পড়লেই বোঝা যায়। আর, আমাদের দেশে’ও গর্ব করবার মতো রয়েছে বেশ কয়েকটি ইংরেজী পত্রিকা এবং বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনা। দুঃখটা হলো একদল লোক আছেন যাঁদের ইংরেজীর আধুনিক এবং সা¤প্রতিক সিনট্যাক্স (বাক্য-গঠন রীতি) কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সিম্পল ইংলিশ (সাধারণ ও সহজবোধ্য) এবং ইজি গোয়িং ইংরেজীকেই তাঁরা একমাত্র অবলম্বন মনে করছেন। আমি কোনভাবেই এটা বলতে চাইছিনা যে সাধারণ ও সহজবোধ্য ইংরেজী লেখা যাবেনা।

কিন্তু, তাঁরা বলছেন কোনভাবেই কঠিন শব্দ-চয়ন বা বাক্য-গঠন করা যাবেনা- যা করতে হবে তা হলো একদম সহজে কোন কিছু বলে দেওয়া। অথচ, বর্তমানে সারা বিশ্বের ইংরেজী পত্র-পত্রিকা রয়েছে সেগুলো পড়লেই বোঝা যায় এ্যাডভান্সড ইংলিশ বলতে আসলে কি বোঝায়! তারা কিন্তু কোন কঠিন ইংরেজী লিখছেন না। তাঁরা, আমার ভাষায় যদি বলি, পেশাদারী ইংরেজী লিখছেন। আমাদের দেশের বহু ইংরেজী পত্র-পত্রিকায়’ও সেরকম লেখা হচ্ছে। আমার খুব ভালো লাগে এটা দেখতে পেরে যে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইংরেজী ভাষা এগিয়ে যাচ্ছে তার আপন গতিতে।

প্রায়ই আমার অফিসে আমাকে একটা ধকল সইতে হয়। তখন মনে হয় পাঁচ বছর ইংরেজী পড়াটাই যেন কাল হয়েছে। আমার প্রায় প্রতিটি ইংরেজী লেখা কে এমনভাবে অস্ত্রোপচার করা হয় আমার বিজ্ঞ ইংরেজী পন্ডিত কর্তৃক, তখন খুব কষ্ট পাই। সেই সাধারণ এবং সহজবোধ্য গোষ্ঠীর কথা বলছি। তাঁদের কাজের গতিও কিন্তু খুব শ্লথ।

তাঁরা সারাদিন শুধু ভেবেই কাটান কোন সহজ শব্দটা খুঁজে ব্যবহার করা যায়। আর এদিকে কাজ এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিন পর যখন কাজটি আমার হাতে আসে অনেক কাটাকুটির পর, তখন দেখি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন! অবাক হওয়ার মতোই একটা কথা, তাই না? অস্ত্রোপচারিত (সম্পাদিত না বলাটাই ভালো) লেখাটিতে দেখা যায় প্রোগ্রাম (শেষে ডাবল এম তারপর ই-সহ) বানানটা সঠিক করে লেখা হয়েছে প্রোগ্রাম (একটা এম এবং একটা ই কাটা পড়েছে)। সাধারণ এবং সহজবোধ্য ইংরেজীর এক অনন্য সমর্থন হলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। সেখানে ব্রিটিশ বা মূল ইংলিশ’এর বানান লিখলে সাথে সাথে নিচে একটা গদগদ লাল রং’এর আন্ডারলাইন দেখা যায়।

যার মানে দাঁড়ায় বানানটা ভুল হয়েছে। ধরা যাক একটি শব্দ ঢাকায় যেভাবে উচ্চারিত হয় নিশ্চয়ই খুলনা বা কুষ্টিয়াতে ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়- আর তা তো হতেই পারে। কিন্তু মূল যে বাংলা বানানটা রয়েছে তা যদি আপনি লিখতে যান, তাহলে তো আপনাকে বিদ্যাজাগতিক প্রয়োগের মাধ্যমেই আসতে হবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, তথা আমেরিকান ওয়ার্ড এরকম সহজ একটা কাজ করে দিয়েছে। আমাদের সকলের অজান্তে আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে ওদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা।

আর আমাদের অফিস গুরুজনেরা চশমা চোখে নিবিড় মনোযগের সাথে প্রোগ্রাম শব্দটার শেষ দুটি অক্ষর ফেলে দিচ্ছেন নিশ্চিন্তে। এবং এরকমভাবে আরও অনেক আমেরিকান ইংরেজী শব্দের প্রয়োগের ব্যাপারে তারা অনেক তৎপর যতটা না তারা আগ্রহী ইংরেজী ভাষার মূল প্রয়োগের ব্যাপারে। সবার শেষে আমাদের একটা কথা মনে রাখা উচিত। আমরা যখন ইংরেজী ভাষায় কোন কিছু লিখি, তখন তা তো যাঁরা ইংরেজী বুঝতে পারেন তাদের জন্যই। আর যদি সে তা না বুঝতে পারে এটা তো তার ব্যর্থতা।

শব্দের অর্থ জানাই তো আর ভাষা জানা নয়। বাক্যের প্রকাশভঙ্গি হলো ভাষা। আপনার অভিব্যাক্তির সমষ্টি হলো ভাষা। শব্দ নিয়ে মাস্তানি করা ভাষা নয়। শব্দ নিয়ে খেলা করাকে ভাষা বলে।

যেমন একটি নাউন কে আমি কিভাবে এ্যাডভার্ব বানাবো বা কিভাবে সেই নাউনটাকে আমি এ্যাডজেকটিভ’এ রুপান্তরিত করবো, সেটাই আসলে ভাষার মূল বিষয়। এরকমভাবে অনেক নতুন নতুন বিষয় ইতোমধ্যেই প্রত্যেকটি ভাষার ক্ষেত্রে এসে পড়েছে। অন্য ভাষার মতো, ইংরেজী ভাষার’ও তাই রয়েছে একটি অগ্রসর জায়গা। এমনকি কমা, সেমিকোলন, কোলন এবং এরকম এ্যাপোসিটিভগুলো দিয়েও পুরো সিনট্যাক্স সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা যায়। এই কথাগুলো কি আমাদের দেশের অফিসের গুরুজনেরা জানেন কি না সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

আমার অনুরোধ কারও লেখা হুট করে অস্ত্রোপচার করবার আগে নিজে একটু ভেবে দেখুন আপনি আপনার পদটির অপব্যবহার করছেন কি না। তাহলেই হয়তো আপনার কলম কিছুক্ষণের জন্য হলেও একটু আটকাবে। এবং সেইদিন খুব বেশী দূরে নয় যে আমাদের দেশে ইংরেজী ভাষা নিয়ে স্বাধীন চর্চা শুরু হবে এবং গোঁড়াবাদীরা সাধারণ এবং সহজবোধ্য ভাষার নামে ভাষাকে কর্তন করবেনা। নিশ্চয়ই প্রগতিশীলভাবে ভাবতে শিখবে আমাদের দেশের মানুষ, অন্তত যারা ইংরেজী ভাষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের দেশে। আমার মতো এরকম ক্ষুদ্র একজন মানুষের একান্ত আশা বা ইচ্ছাই তাই।

বন্ধ হোক ইংরেজী ভাষা অস্ত্রোপচার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।