আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখ দুঃখের ইঞ্জিন......!

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

সময়টা মাস তিনেক আগের! কি বার ছিল এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তবে ডাইরী দেখলে বলা যেতে পারে! আমার ডাইরিতে ঐ দিনকে আমি জার্নি ডে ঘোষনা করেছি। তো সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্যশে রওনা। সময়টা অতিমাত্রায় সংকীর্ণ বলে ট্রেন আমাকে উপযুক্ত সি-ট দেয়নি। কোন কামড়াতে ঠাই হলনা।

বাড়তি টাকা দিয়ে শোভনে উঠে পরলাম। যাত্রীর বাড়তি চাপে ট্রেনে এক কথায় তিল ধারনের ঠাঁই নেই। তবে বসার যায়গাটি বের করে ফেললাম। বিদায় সিলেট ..... ট্রেন চলছে ঝিক, ঝিক, ঝিক ........কুলাউড়া। ট্রেন শ্রীমঙ্গল ক্রস করছে।

চায়ের গন্ধে মনমাতোহারা। কিছুটা ঘুম ঘুম। এমনিতেই ট্রেনে আমার ঘুম হয়না। বোধহচ্ছে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে একজন যাত্রী তথা ১০ বছরের ছেলেসহ একজন মহিলা আমার পাশের সিটে বসল। শোভনের অবস্থাতো সবার জানা আছে ! মুখোমুখি যাত্রীপ্রলাপ ! ব্যাস বকবক ।

আমি না । মহিলাটি আমাকে প্রশ্নর্জিত করছে। কোথা থেকে উঠেছি?কোথায় যাবো? কি করি? নাম কি? ইত্যাদি ইত্যাদি...এক কথায় .... কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও হু, হ্যাঁ করছি। হঠাৎ দেখলাম মহিলাটি'র মুখটি বিষন্ন মনে হচ্ছে।

হতেই পারে। কিন্তু না এতো অশ্রুজ্বল। কিন্তু কেন? প্রতিউত্তরে বললেন - তোমার মত আমার একটি ছেলে ছিল? হতে পারে। মহিলা প্রায় মাঝ বয়সী। আমার টাইপের ছেলে থাকাটা স্বাভাবিক।

তিনি বললেন ছেলেটা আমার মারা গেছে? কিছু দিন আগে ও রোড এক্সিডেন্টে মরা যায়। ভ্যারি সেড.... বেশ আফসোস হল ছেলেটি'র জন্য। মনটা আনমোরা হয় দম নিলাম। মনে মনে ভাবলাম হয়রে নিয়তি। উনার দুঃখটা ট্রেনের চেয়ে আরো দ্রুত।

ট্রেনের তো কোন দুঃখ নেই। কিন্তু....। এ চানাচুর.... এ .... ওদের যন্ত্রনায় কি ঘুমানো যায়! তারপরও যে কখন ঘুম চলে আসলো টেরই পেলাম না। দিলাম ঘুম। হঠাৎ ঘুম থেকে চমকে উঠলাম।

চোখ মেলে দেখি সেই মহিলাটি আমার হাত দরে বসে আছে। বিব্রতকর অবস্থা। কি করা যায়। বললাম -হাতটা ছাড়ুন। কিন্তু না -কে শোনে কার কথা।

সত্যি একটা বিব্রতকর অবস্থ। সবাই তাক করে চেয়ে আছে। মহিলাটি অশ্রজ্বলে শিক্ত। বললাম কাঁদছেন কেন? কাদবেন না প্লিজ? আমাকে বললেন আমার ছেলেটা অবিকল তোমার মত ছিল আমার। আমার মাথাটা বাড়িয়ে দিলাম।

ভাবলাম মাথায় হাত ভূলিয়ে দিবেন হয়তো। কিন্তু না .......। উনি যা বললেন তা হয়তো সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিবে না! না নেওয়টাই স্বভাবিক। সুখ দুঃখের এই ইঞ্জিনবাহী ট্রেণে কষ্টের তীব্রতাকে উর্দ্ধে তুলে রাখলেও কষ্টও লজ্জ্বা পাবে! যাই হোক মহিলাটি আমাকে কি বললেন তা না বললে এর মর্মকথাই বৃথা যাবে। বললেন তুমি আমার কোলে বস? আমি হতবাক।

লজ্জায় আমি ত্রিমুখি হয়ে গেলাম। একদিকে বিব্রত হওয়ার শেষে অধ্যায় হয়তো পাড়ি দিয়েছি। যা হোক বুঝতে পারছি মহিলাটি পুত্রশোকে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পরছেন। ট্রেন আখাউড়ায় এসে পৌছল। কিছু খাবার ও হালকা পানীয় কিনলাম।

ট্রেন আবার কুমিল্রার পথে। পাশের মহিলাটিকে কিছু খাবার দিতেই নিদ্দিদায় নিলেন। আমারও ভালো লাগছে । হঠাৎ দেখি উনার ব্যাগ থেকে কি একটা বের করলেন। সেদিকে তেমন একটা আগ্রহ দেখালাম না।

কিন্তু একি... উনি আমাকে দুটো দরিয়ে দিলেন । আমি বললাম ঠিক আছে আপনি খান। কিন্তু আবার সেই অশ্রুজ্বল। কি যন্ত্রনায় পরলাম। যা খেতে দিচ্ছেন তা হয়তো সবাই এটাকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিবে না।

আচাঁর। বোধহয় বাড়িতে তৈরি আচাঁর। আমি আচার খাব আর সবাই তাকিয়ে থাকবে তা কিহয়! কিন্তু কি আর করা। খেতে হবে। এটাও মেনে নিলাম।

কোনরকম দু'একটা খেলাম। কুমিল্লা, লাকসাম ও ফেনিতে ক্রস করার মধ্যবর্তি সমেয় মহিলাটির কিছু দুঃখগাথাঁ কথা শোনলাম। সুখ দুঃখের এই ইঞ্জিনে কত কষ্ট নিরভে নিভৃতে কাদেঁ কেউ তাঁর খবর রাখে না। পুত্রহারা এক মায়ের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধা ও কতটুকু ভক্তি দেখাতে পেরেছি তা আমি জানিনা। আজ সেই মহিলাটিকে বড্ড বেশি মনে পরছে।

মনে পরছে সেই শোভন চেয়ারের কথা। হয়তোবা সেখানে না বসলে সেই স্মৃতিগুলো আমার জীবনে কখনো আসতো না। সুখ দুঃখের এই ইঞ্জিনে ইঞ্জিনের কত কষ্ট, ইঞ্জিনের মানুষের কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট এই স্টেশনগুলোতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।