mahbub-sumon.com
হাফিজ সাহেব, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী ব্যবস্থাপক (তিতাস গ্যাস), প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক (খাসকাউলিয়া হাইস্কুল, চৌহালি, সিরাজগন্জ ), গল্পের নায়ক নাফিজের পিতা এবং একজন অপদার্থ মানুষ। এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে পান কিনছেন।
"স্যার, পানে কি জর্দা দিমু?"
"দাও, হাকিমপুরী আছে ? সেইটা থাকলে দাও। সাবধান খয়ের দিবা না"
পান নিয়ে হাফিজ সাহেব সামনে হাঁটা শুরু করলেন।
"মামা, প্লেনতো ল্যান্ড করছে, চলেন আমি আনসারকে ৮০ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করেছি, চাচী সামনেই আছেন, ট্যাক্সিও ভাড়া করেছি, ৪০০ টাকা।
" গল্পের পার্শ চরিত্র রকিব, মোহাম্মদ রকিব ইসলাম। হাফিজ সাহেবের একমাত্র ভাগ্নে, তিতাসের কন্ট্রাকটর।
"দেশে না এখন দূর্নীতি দমন অভিযান চলছে! কিভাবে এভাবে প্রকাশ্যে ঘুষ চলে ?" হাফিজ সাহেবের প্রশ্নে রকিব হাসে আর ভাবে মামা মানুষটা এখনো বোকাই রয়ে গেলো।
"মামা, ঘুষ বন্ধ হয় নাই, আগে সামনে নিতো এখন পেছন দিয়ে নেয়"।
৬ বছর পর নাফিজের সাথে দেখা হচ্ছে হাফিজ সাহেবের।
একমাত্র সন্তান। অভাবের সংসারে ছেলেটা কি কস্ট করেই না পড়াশোনা করেছে। বুয়েট থেকে ক্যামিকেল ইন্জিনিয়ারিং এ পাশ করে অল্প কিছুদিনের জন্য বি। সি আই সিতে কাজ করলো, তারপর কি এক স্কলারশীপ যোগার করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়। পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই একটা কোম্পানীতে কাজ যোগার করে।
হাফিজ সাহেবের স্বপ্ন ছিলো ছেলেটা পিএইচ ডি করবে, সেটা আর করলো না নাফিজ।
"ও বাবা, রকিব। প্লেনতো ল্যান্ড করেছে। নাফিজ কই ? সবাইতো আসছে কিন্তু আমার নাফিজ কই? " শাহানা বেগম, নাফিজের মার এ কথা শুনে রাকিব সামান্য হেসে বলে " মামিমা, এইতো আইসা পরবো"।
রকিব, ডিগ্রী পাশ করে বেকার বসে ছিলো।
হাফিজ মামা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসলেন। সে অনেক চেষ্টা করেছে চাকরির জন্য, হয়নি। শেষ মেশ তিতাসে কন্ট্রাকটরের কাজ যোগার করে নেয়। চালু ছেলে। অল্প কয়দিনের মাঝেই সব ফাঁক ফোঁকর বের করে ফেলে।
আজ কাল ভালোই কামায় সে। সেই নাফিজের বিয়ের ঘটক। রশিদ ভুইয়ার কারখানায় গ্যাসের পাইপ বসাতে গিয়ে যে পরিচয় হয়। কথায় কথায় বের করে ফেলে যে রশিদ ভুইয়ার একটা মেয়ে আছে যার জন্য রশিদ ভুইয়া বিদেশে থাকা ছেলে খুঁজছেন। রশিদ ভুইয়া বিশাল বড়লোক।
জামাইকে পুরান ঢাকার আলুপট্টির বাড়ী, গুলশানের ফ্লাট দেবেন। একটাই শর্ত ছেলে শিক্ষিত ও বিদেশে থাকতে হবে। রকিব মামা-মামির সাথে কথা না বলে নাফিজের সাথে প্রথম কথা বলে, তারপর মামার সাথে কথা বলে। মামাকে রাজি না করাতে পারলেও মামিকে সহজেই রাজি করাতে পারবে। মামি কেনো রাজি হলেন সেটা সে অবশ্য বুঝতে পেরেছে।
এত বছরের কস্টের পর মামি একটু স্বচ্ছলতার আশা করছেন। সেটা বড়লোক বিয়াইয়ের দ্বারাই হোক আর যে ভাবেই হোক সেটা ব্যাপার না।
শাহানা বেগম, নাফিজের মা। আটপৌড়ে, আর দশটা মায়ের মতোই। ছেলেকে দেখার জন্য অধীর হয়ে আছেন।
কতদিন দেখেন না ছেলেটাকে। যে ছেলে মায়ের সাথে এক দিন না দেখে থাকতে পারতো না সেই ছেলে কিভাবে ছয়টা বছর একলা কাটিয়ে দিলো বিদেশে সেটা বুঝতে পারেন না শাহানা বেগম। ছেলের বিয়ে দেবেন। কত্ত কাজ। 'আচ্ছা, ছেলে বউ নিয়ে বিদেশে চলে গেলে আবার আসবেতো !' শাহানা বেগম ভাবছেন।
এই নাফিজ ছাড়াতো আর কেউ নাই তার।
" মামি, ও মামা, ওই তো দেখা যায় নাফিজ ভাইকে , দেখতে পারছেন "
রকিবের চিৎকারে আশে পাশের দুএকজন পাশ ফিরে তাকায়।
"নাফিজ ভাই দেখই অনেক ফর্সা হয়ে গেছে, একটু মোটাও"
হাফিজ সাহেব পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন নাফিজকে। শাহানা বেগমও অস্থীর ভাবে খুঁজতে থাকেন।
"ঐতো নাফিজ, আমার বাপজান" চিৎকার করে শাহানা বেগম ছুটে যান নাফিজের দিকে।
হাফিজ সাহেব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, বুঝতে পারছেন না কি করবেন।
রকিব এগিয়ে যায় সামনে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।