আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি ও লেখায় যুদ্ধসমাধি

যেতে হবে বহুদূর

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর নিহত সৈনিকদের সমাধি কী সুন্দর, কত যত্নে সাজানো। শ্রদ্ধা জানানোর কী চমৎকার আয়োজন! ওয়ার সিমেট্রির দিকে গেলে দেখেশুনে কখনো কখনো পড়েছে দীর্ঘশ্বাস। রীতিমতো এক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই আছে আমাদের, অথচ কী কাজ তাদের আমারই জানা নেই। ওই মন্ত্রণালয় চাইলে একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিগুলো 'লিবারেশন ওয়ার সিমেট্রি' হিসেবে কি গড়ে উঠতে পারতো না? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈন্য নিহত হন, তাদের বাংলাদেশে সমাহিত করা হয়। এসব সৈন্যের কবরস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ওয়ার সিমেট্রি বা যুদ্ধসমাধি।

ওয়ার সিমেট্রিগুলোর একটি রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদিবাগ বাদশা মিয়া সড়কে এবং অন্যটি কুমিল্লার ময়নামতিতে। চট্টগ্রামের মেহেদিবাগে পুরো সমাধি এলাকাই সবুজ বৃক্ষ আর পাতাবাহারের বেষ্টনীতে ঘেরা। কোলাহলমুক্ত এক সুন্দর পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে প্রশান্ত ভাবগাম্ভীর্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্রতর হয়। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও সুভাষ বোসের অসাধারণ নেতৃত্বে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের সুশৃঙ্খল এক দেশপ্রেমিক সৈন্যদল গড়ে ওঠে।

আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা ১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম বার্মা (এখনকার মিয়ানমার) দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো আত্রক্রমণ করে ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুরসহ আরো নানা জায়গা দখল করে নেয়। ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ওই জায়গাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধবিমান ও কামান নিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কয়েকমাস স্থায়ী এ যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজ পিছু হটে রেঙ্গুনে গিয়ে পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিমধ্যে জাপান আত্মসমর্পণ করায় এবং নেতাজীর রহস্যজনক অন্তর্ধানে আজাদ হিন্দ ফৌজ হয়ে পড়ে দুর্বল।

ইম্ফলের ওই যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের পক্ষে ২৭ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়। মিত্রবাহিনীও কয়েক সহস্রাধিক সৈন্য হারায়। মিত্রবাহিনীর এসব সৈন্যকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়। পরে কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন এসব সৈন্যের সমাধিস্থলকে ঘিরে 'ওয়ার সিমেট্রি' গড়ে তোলে। চট্টগ্রামের মেহেদিবাগে বাদশা মিয়া রোডের মাঝামাঝি ঢালুতে সাড়ে সাত একর জমিতে সমাধিক্ষেত্রটির অবস্থান।

মূল সমাধি পড়েছে তিন একর। ফিনলে পাহাড় লাগোয়া প্রায় আট ফুট উঁচু ইস্পাতের রেলিংঘেরা মসৃণ-পরিচ্ছন্ন সড়ক দিয়ে এগোলেই সমাধি ফটক। সমাধি ফটকের পেছনে মূল বেষ্টনী পর্যন্ত অনেকখানি জায়গাজুড়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। উত্তর দিকটা একটু নিচু। সমাধি ফটকের দুপাশে লাল ইটের গাঁথুনি ও কাঠের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট দুটি দোচালা কুঠির।

দক্ষিণ দিকের কুটিরে পাথরের তৈরি সুদৃশ্য একটি বাক্সের স্বচ্ছ কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা যায় মেমোরিয়াল বুক। ওই বইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাণিজ্যিক নৌবহরের যে ৬ হাজার ৫০০ নাবিক মৃত্যুবরণ করেন, তাদের নাম ও পদবি লেখা আছে। উত্তর পাশের কুটিরে রাখা সিমেট্রি রেজিস্টারে ৭৫৫ জন সৈনিকের নাম ও পদবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুদ্রিত রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। ওয়ার সিমেট্রিতে ৭৫৫ জন সৈনিক সমাহিত রয়েছেন। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী সৈনিককে নিজ নিজ ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় এবং ফলকে ধর্মীয় প্রতীক খোদাই করা আছে।

মুসলমানদের জন্য কলেমাখচিত, খ্রিস্টানদের জন্য ক্রুশ। । আত্মাহুতি দেওয়া সৈনিকদের মধ্যে ১৪৯ জন মুসলিম, পাঁচজন হিন্দু, একজন ইহুদি, ১৯ জন বৌদ্ধ, ৫৭৭ জন খ্রিস্টান এবং চারজন অজ্ঞাত ধর্মাবলম্বী। নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে কবরের সারি সাজানো। দেশভেদে ব্রিটেনের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের দুজন, অবিভক্ত ভারতের ২১৪ জন (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান মিলে), পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, বার্মার দুজন, নেদারল্যান্ডের একজন, জাপানের ১৯ জন ও অন্যান্য চারজনসহ ৭৩৭ জন জানা আর বাকি ১৮ জন অজানা সৈনিক।

পোস্টটি একইসঙ্গে প্রিয় চট্টগ্রামেও প্রকাশ পেল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।