আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চা-বাগানে নিম্নমানের আটা সরবরাহ



পছা আটা কাইয়া ডাইরিয়া অইয়া মরতাম, গন্ধ করে, দাওয়াই দেয়না স্যার’ - চা-বাগান কর্তৃপরে খাদ্যের অনুপযোগী আটা খেয়ে মৌলভীবাজারের ভাড়াউড়া চা-বাগানের উত্তর লাইনের নিয়মিত চা-শ্রমিক নিতাই ভাজপড় (৩০) ক্ষোভের সাথে একথাগুলো বলেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, খাইছড়া ও ভুরভুরুয়িা চা-বাগানের সরবরাহকৃত নিম্নমানের ও খাবার অনুপোযোগী আটা খেয়ে গত তিনদিন ধরে চা-শ্রমিক পরিবারের লোকজন আমাশয়, ডায়রিয়া ও পেটেরে পীড়ায় ভূগছে বলে চা-শ্রমিকরা জানিয়েছেন। শ্রমিকরা জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে বাগানের বসবাসরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটবে। এমনকি ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করছে।

শনিবার বিকেলে সরেজমিন ভাড়াউড়া চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের অধিকাংশ শ্রমিক বাগান কর্তৃপরে সরবরাহকৃত আটা খেয়ে আমাশয়, ডায়রিয়া ও পেটেরে পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বাগানের উত্তর লাইনের নিয়মিত চা-শ্রমিক নিতাই ভাজগড়ের মা সোনিয়া ভাজগড় (৬৫) বলেন, ‘আটা খাইয়া খাইয়া মরতাম’। সোনিয়া জানান, আটা খেয়ে তার নাতি জয় (৩) আমাশয়ে ও সাজু (৭) চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। শ্রমিক গঙ্গা প্রসাদ ((৫০), জানকি কাহার (৪২), হরি কুমার কাহার (২৫), রাম কাহার (২৮) বলেন, ‘বাগানঅর আটায় বালু, তিতা লাগে, গন্ধ করে, খাওয়া যায়না। ’ রাজকুমার কাহার (১৫) বলেন, ‘বাগানের দেওয়া আটা খাইয়া ডাইরিয়া অইছে।

বাগানের সাবরে জানাইলে এই আটা নিয়া পরে আবার ওইটাই ফিরাইয়া দেয়। ’ তুলসি গড় (৩০), রামগতি গড় (৫০) জানান, বাগানের সরবরাহকৃত আটা কেউ খায় কেউ খায় না। আর কেউ যে এই আটা খায় সেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুর্গা প্রসাদ কাহার (৩০) ও দৃপ্তি রাণী কাহার (৪০) বলেন, ‘মাইনসে ঔসুদ দিয়া ভালা করতাছে আর তারা আটা খাওয়াইয়া ডায়রিয়া করতাছে। বাগানের লেবার আটা খাইয়া পাতলা পায়খানা আর বমি করতাছে।

’ সুবোধ বাউরি (৬৮), গবীন বাউরি (৪০) বলেন, ‘আটা নায়, মনে অইচে গরুর বুসি’। কালিঘাট ইউপি চেয়ারম্যান পরাগ বাড়ই বলেন, ‘চা-বাগানগুলোতে রেশনের চাল বন্ধ করে। নিম্নমানের ও খাবার অনুপযোগী আটা সরবরাহ করছে। এই আটা খেয়ে বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ডায়রিয়ায় মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘যেখানে সরকারি আটা বন্ধ।

সেখানে বাগানে এই পঁচা আটার উৎসস্থল সম্পর্কে জানতে হবে। ’ চা-শ্রমিকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার চা-বাগানের রেশন হিসাবে চালের পরিবর্তে এই আটা সরবরাহ করা হয়। আটা খেয়ে চা-শ্রমিকরা খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। জানা গেছে, ভাড়াউড়া চা-বাগানে ৭৭৫ জন, খাইছড়া চা-বাগানে ৫০০ জন ও ভুরভুরিয়া চা-বাগানে ৪৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই নিম্নমানের আটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে শ্র্রমিকরা জানান।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বাগানের হাসপাতালে গেলে দুটি ট্যাবলেট দিয়ে ছেড়ে দেয়। তাছাড়া নিয়মিত শ্রমিকের বাইরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের অন্য কাউকে চিকিৎসা দেননা। উল্লেখ্য সম্প্রতি সরকারী খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ বিবেচনায় বাংলাদেশীয় চা সংসদের সদস্যভুক্ত বা তালিকাভুক্ত চা বাগানসমূহের চা শ্রমিকদের জন্য মাসিক এক হাজার মেঃ টন রেশনের চাল সরবরাহ বন্ধ রাখার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ঠিকঠিক পরপরই তিনটি বাগানে আটা সরবরাহ করা হয়। ভাড়াউড়া চা-বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক এএসএম শামীম নিম্নমানের আটা সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, এই আটা ১০০ বছর ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা· হরিপদ রায় জানান, বিষয়টি খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, চা-বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে নিম্নমানের আটা সরবরাহের কথা নয়। এরকম কিছু হলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।