সামপ্রতিক সমেয়ের দুইটি সাহিত্যিক সমাবেশ বাংলাদেশের সাহিত্য অনুরাগীদের মধ্যে বেশ আলোচিত হতে দেখলাম। দেবশ রায় ও হাসান আজিজুল হককে কেন্দ্র করে একটি সেমিনার এবং একই দিনে রণজিৎ দাশ ও আব্দুল মান্নান সৈয়দ এর উপস্থিতিতে আরেকটি সেমিনার একই স্থানে একই বিষয়ে অনুষ্ঠিত হলো।
বিষয় হিসেবে ছিলো " সমকালিন বাংলা কথাসাহিত্য ও কবিতা। "
সেমিনারের বিষয় এবং আলোচকদের তালিকা দেখে অনেকের মত আমিও আগ্রহ বোধ করায় সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু সেমিনারের শুরুতেই গলদ ধরা পরল যখন সমকালিন কথাসাহিত্য নিয়ে দেবেশ রায়ের মুল প্রবন্ধটি সকলের কাছে দেয়া হলো না।
ফলে কি এবং কোন কথার ভিত্তিতে আলোচকরা বক্তৃতা দিলেন এবং দর্শকরা শুনলেন তা বোঝা দুসাধ্য হয়ে গেলো। আর আরো বিপত্তি দেখা গেলো যখন আয়োজকদের একজন দেবেশ রায়ের হয়ে নিজেই একটা মন্তব্য করে বসলেন যে-" দেবেষ রায় বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের যে বই গুলো পেয়েছেন তার কিছু পড়েছেন, কিছু রেখেদিয়েছেন আর কিছু ফেলে দিয়েছেন। " এ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে দেবেশ নিজেই বললেন যে তিনি কখনই এ ধরনের মন্তব্য করেননি। দেবশ রায় আরো বললেন যে বাংলাদেশের কথাসাহিত্য তিনি পান না, এ জন্য তার সেরকম পড়াও হয়ে ওঠে না। এই যখন অবস্থা তখন স্বভাবতই দেবেশ রায়কে দিয়ে জোর করে এদেশের কথসাহিত্যের মূল্যায়ন কেন এবং কারা জরুরী মনে করলো? দেবেশ রায় নিজে বাংলা সাহিত্যের শুধু একজন গ্রেটই নন এমন অনেকেই আছেন যারা তাঁর সাহিত্যকেই বাংলাকথাসাহিত্যের ষ্টান্ডার্ড মনে করেন।
সেমিনারের গোলোমালের মধ্যেই আরেকটা কথা উঠে আসলো যে দেবেশ রায় এদেশে যতবার উচ্চারিত ঠিক ততবার পঠিত না। এমনকি একজন পাঠক দীর্ঘ দশ বছরেও তিস্তা পুরান ও তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত নিয়ে কথা বলার মত কাউকে পাননি। এ বক্তব্য থেকে আসলে কি বোঝা যায়-
১.দেবেশ রায় এদেশে ততটা পঠিত না
২.তাঁর সাহিত্য এদেশের পাঠক বোঝে না
কিন্তু আমি এ দু-মতের কোনটাই সমর্থন করতে পারছি না।
আসলে সমস্যা মনে হয় দেবেষ রায়ের না সমস্যা ছিলো আয়োজন ও আয়োজকদের মধ্যে। দেবেশ রায় খুব স্পষ্ট ভাবে যে কথাটা বললেন তা হলো-"বাংলাদেশের কথা সাহিত্য ওপার বাংলায় গিয়ে একটা বৈজ্ঞানীক দেয়ালের মুখোমুখি হয়।
"
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কিসের বৈজ্ঞানিকতার কথা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন। আর সেই বৈজ্ঞানিকতাকে তিনি কি বর্তমানে ষ্টান্ডার্ড মনে করেন? আর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে কি তিনি অবৈজ্ঞানীক বলতে চাইছেন? এরকম আরো অনেক অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে এবং পারত। আবার যেখানে তিনি নিজেই বললেন যে- এদেশের বই তিনি বিশেষ একটা পড়ার সুযোগ পান না। তাহলে যে কটা বই তিনি হাতে পান বা তাঁর হাতে পৌছে দেয়া হয় তার ভিত্তিতেই কি তিনি বাংলাদেশের কথা সাহিত্যের সংকট বুঝে ফেললেন আর সেই সাথে ঢালাও ভাবে বললেন এদেশের কথা সাহিত্য মাত্র একটা সুররিয়াল সারফেসে আছে। তাঁর বলা বৈজ্ঞানীকতার প্রেক্ষিতে বলতে চাই প্যারানরমালওতো বিজ্ঞান আর সুররিয়াল সারফেসকে যে বিজ্ঞান দিয়ে রিয়েলিটিতে এক্সিস্ট করব তাওতো তাহলে বিজ্ঞান।
এখন পশ্চিম বাংলার দেয়ালটি কোন বৈজ্ঞানীক চুনসুরকীতে নির্মিত। দেবেশ রায়কে এতটা খন্ডিত ভাবতে চাই না।
পুরো সেমিনারে আয়োজকদের আচরণে ছিলো গোপনিয়তার প্রকাশ। প্রথমেই সেমিনারের মুল প্রবন্ধ নিয়ে তারপর শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের কুন্ঠিত মনোভাব এবং ভয় পেয়ে যাওয়া সকলেরই নজরে পরেছে। অবশ্য তাদের দোষই বা কি যখন শ্রতারা মঞ্চে উঠেই জিজ্ঞাসা করে বসে বাংলাদেশ থেকে যে বইগুলো পশ্চিমবাংলায় দেবেশ রায়ের কাছে গেলো তা কারা কিসের মানদন্ডে গেলো।
তাদের মানদন্ড পেরুনো বইগুলোর নামও জানতে চেয়ে বসল কেউ কেউ। একপর্যায়ে যখন দর্শক শ্রোতার ক্ষোভ নানান এ্যপ্রোচে কথা বলে উঠতে থাকে।
১ম পর্বের সেমিনারটি একরকম তড়িঘরি করেই শেষ করে দেয়া হলো।
এখন যদি কেউ এ পোষ্টটির এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাকে জিগাইতে চাই; ও পাঠক আপনিই কন বাংলা সাহিত্যের কোন উপকারে লাগলো এই আয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।