আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লেখাটা তোমার জন্য

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

২৪ শে ডিসেম্বর ২০০৩, তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের শুরু। মাঝখানে কতটা সময় কেটেছে রে? কতটা বড় হয়েছি আমরা দুইজন? হিসেব করতে গিয়ে যুক্তি আর আবেগ মারামারি করে মরে পড়ে থাকে। আর তাদের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে থাকি। কাল তোমার ওপর অনেক অভিমান হয়েছিল। কী ঘটেছিল একবার বলে নিই, নাহলে এই লেখা পড়ে আমাকে মারতে আসবা।

তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম তার আগের দিন, মেসেজও ছেড়েছিলাম গোটা দুই, তুমি লা-পাত্তা। মাঝে অনেক বার ট্রাই করতে গিয়ে মোবাইল বন্ধও পেলাম, কিছু বুঝে উঠছিলাম না। বাজে লাগছিল অনেক। আরেকবন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলাম, এজন্য শেষমেষ তোমার সাথে সি.এন.জি-তেই কথা সারতে হলো। এখন মনে হচ্ছে একটু বেশিই রি-অ্যাক্ট করে ফেলেছিলাম, আমার অর্বাচীন ভাবালুতায় তোমাকে অনেকদিন জ্বালিয়েছি, আজও সেটা বন্ধ করতে পারি নাই।

আমার এই বদভ্যাসটা মনে হয় আর ছাড়ানো গেলনা! আজ একটু আগে তোমার সাথে কথা বলতে বলতে মনে হলো যে একটা লেখা তোমার আমার বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা দরকার। ঢাকায় এসে ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে পড়তে আসাতক শুনছি ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না। একজন না একজনের দূর্বলতা, অতঃপর হয় ভালোবাসা নয়ত বন্ধুত্বের ইতি। প্রথম থেকেই ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই কনফিউজিং, কারণ ক্লাস ফোর এর পর থেকে মেয়ে সংসর্গে পড়াশোনা করা হয়নি, ক্লাস সেভেন থেকে তো ক্যাডেট কলেজ। তাই ওখান থেকে বেরিয়ে বাইরের জগৎটাকে একটু রঙিন লাগলো বই কি! নিজের ক্যাম্পাসের "মোহময়ী হাসি"র উপর থেকে আমার বাউন্ডুলে "ক্র্যাশ"টা কাটাতে না কাটাতেই তোমার সাথে পরিচয়! তাও আবার এই সদা-প্রতারক ইন্টারনেট এর মাধ্যমে! শুধু একটা জিনিস একটু সুবিধার ছিল যে তোমার আমার পরিচয়ের মানুষটা আমাদের দু'জনেরই (তৎকালীন) কাছের মানুষ।

তখনকার তুমি আর এখনকার তুমি কত বদলে গেছ! একদিকে আমি ছিলাম ভদ্রগোছের ছা-পোষা, আর অন্যদিকে তুমি একদম একটা ঝড়ের মত! এত উচ্ছলতা আর তার সাবলীল প্রাণবন্ত প্রকাশ দেখে আমি তখন কতটা অবাক হয়েছিলাম তা আজ ঠিকমতো মনেও পড়ছেনা! কী নিয়েই না আমরা কথা বলতাম! মোবাইলের মিনিট তখনো ৭ টাকা। তাকে তুচ্ছ করে চলতো কথা, আর তার কী তোড়! মাঝে মাঝে তোমার আমার কথা ওভারল্যাপ হয়ে যেত। তুমি তোমার সকল কু-(এবং সু)কর্মের ফিরিস্তি দিতে, আর আমি আমার একঘেঁয়ে যান্ত্রিক আটটা-পাঁচটা ক্লাসের ক্লান্তিকর দিন কাটানোর হাপিত্যেশ করতাম। ঝগড়াও লাগতো কতো। একবার তুমি আমার নামের সবগুলো অক্ষর দিয়ে একগাদা গালি লিখে পাঠালে, আমিও তার জবাবে কী কী জানি লিখেছিলাম।

কতোদিন কতোরাত কতোকথার কথকতা (ফালতু কাব্য করার ভেজাল স্বপ্রণোদিত অভ্যাসটাও আছে এখনো!)। কোন এক জন্মের স্মৃতি বলে মনে হয়! ইদানীং মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ যত দিনদিন বড় হয়,বুড়ো হয় ততই পিছন ফিরে ফেলা দীর্ঘশ্বাসগুলোর মাত্রা লম্বা হতে থাকে। হয়তো আমরা কেউই বর্তমানটাকে ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারি না, যতোদিনে বুঝে উঠি ততোদিনে মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে যায়। মনের পরতে পরতে সময়ের সাথে এক এক পরত ধুলো জমে, আশে পাশের বাস্তবতা পারমানেন্ট মার্কারের মতো কালির পোঁচ বুলিয়ে আমাদের কেমন খোল-নলচে বদলে ফেলছে, তাই না? আজ তোমার একটা কথা আমার খুব কানে বাজে, ক'দিন আগে বলেছো, আমার কাছে "ঐসময়" (তুমি জানো কোন সময়!) ঐ ব্যবহার না পেলে আজ হয়তো তুমি এমন হতে না। কী অবলীলায় বলা কঠিন এক সত্যকথা! লেখার শুরুতে এটা লিখে বোধহয় ভুল করলাম যে ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব হয় না।

হয়, কিন্তু তার মাঝে কিছু একটা ব্যাপার থাকে। কী থাকে এটা বুঝাতে গিয়ে আজ বাঙলা ভাষাটাকে বড়ই অপ্রতুল মনে হচ্ছে। মানুষের সম্পর্কগুলোর এই আটপৌরে নাম দিয়ে তো তোমার আমার সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। তাই সে চেষ্টায় যাবো না আর। শুধু একটা জিনিস আজকাল ভাবছি খুব করে।

তোমার আমার জীবন যেন দূরে-দেখা দিগন্তরেখার মতো মনে হয় আমার। দূর থেকে যাকে দেখে মনে হয় ছোঁয়া যাবে, একছুটে দৌড়ে গেলে ছুঁয়ে ফেলবো সেই অপার্থিব তীর! কিন্তু যতই তোমার আমার জীবন কাছে আসে, ততই যেন আমাদের মাঝে যোজন যোজন চর পড়ে, সময়ের চর। এই পথ কীভাবে পাড়ি দিব বলে দাও, বলে দাও কীভাবে ছেঁড়াতার জোড়া লাগে, কীভাবে ঢিল ছুঁড়ে মারা শান্ত পুকুর আবার নিস্তরঙ্গ হয়! হয় না বোধহয়। আমি তবু নচ্ছাড় আশাবাদী, আজও তোমার মত করে জীবনটাকে বুঝে নিতে পারলাম না, প্র্যাকটিক্যাল হতে পারলাম না। এজন্যই আজ তোমার জন্য এই লেখা--যখন পড়বে, মনে করো সেই বন্ধুটিকে, আজ এত টানাপোড়েনেও যার কাছে তুমি অনেক দামী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।