সঞ্জয় মিঠু
"কিতনি হাসিন হ্যায় রাত... দুলহান বানিহে রাত..."গান বাজছে সিডিপ্লেয়ারে। আজ সত্যিই রাত্রি দুলহানের সাজে সেজেছে। আর হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে কবুল বলা শেষ হবে। অরুণ কয়েক'শ মাইল দূরে জানালায় দাঁড়িয়ে বিরামহীন গানটি শুনছে। রাত্রি অরুণকে চিঠি দিয়েছে; অনেক অনুরোধ করে আসতে বলেছে।
লিখেছে," না হয় তোমার হাত দিয়েই আমার বিয়ের মঞ্চ সাজাবে। তবু তোমাকে আসতেই হবে। " অরুণ জানিয়েছে, তার পক্ষে কিছুতেই যাওয়া সম্ভব নয়। অরুণ জানে রাত্রি ভীষণ জেদি মেয়ে। বিয়ে বাড়িতে সে হাজির হলেই রাত্রি তাকে বাধ্য করবে, রাত্রিকে নিয়ে পালিয়ে আসতে।
এর আগেও রাত্রির এমন জেদের কাছে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়েছে। অরুণ সবে কলেজের আঙ্গিনা পেরিয়েছে, সামনে বিস্তর সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। আর সব থেকে বড় বাধা হল ধর্ম। রাত্রি এবং অরুণের ধর্ম ভিন্ন। দেশ জুড়ে এসময়ে চলছে বাবড়ি মসজিদ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড।
এই শুক্রবার শহরে সব মন্দির গুলো জঙ্গিরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল। অরুণ শহরে বসে গ্রামের খবর পায়, বিভৎস সব ঘটনা। শুনলেই সমস্ত শরীর হিম হয়ে যায়। তাই এ সময় রাত্রি কিছু একটা বসে, তবে সে সামাল দিতে পারবে না। দু' জনের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়বে।
মৃত্যুকে সে ভয় পায় না। কিন্তু রাত্রি? তার কোন ক্ষতি সে মেনে নিতে পারবে না। আজকের পর রাত্রি আর অরুণের থাকবেনা। তবু এই পৃথিবীতে রাত্রি থাকবে। এটাই এক মাত্র শান্তনা।
রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা বড্ড মনে পড়ছে--" আমরা দু'জন একটি গাঁয়ে থাকি/ সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ। "
রাত্রির সঙ্গে প্রথম দেখা সেই '৮৮ সেই মহাবন্যায়। বন্যার জল রাত্রিকে ভাসিয়ে এনেছিল দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে। যেখানে কোনদিন বন্যা হয় না। ওদের পরিবারের প্রায় সবাই এসে উঠল অরুণদের বাড়ি।
মহাপ্লাবন প্লাবিত সারা দেশ। রাত্রি প্লাবিত করল অরুণকে। সেই থেকে রাত্রি অরুণের। যদিও রাত্রি অরুণের দু'ক্লাস উপরে পড়ত। তবে তা দু'জনে ভাবের জগতে কোনো বাধা হয়ে দাড়াঁনি।
বন্যা শেষে রাত্রি ফিরেছে নিজ গৃহে। কিন্তু যোগাযোগের সেতু হয়েছে পোষ্ট অফিস কখনোবা অমলবাবু। দু' পক্ষের কাছেই জমেছে খামের পর খাম। শেষে আব্বা, মা বড়ভাইদের বাকাঁ চোখ। অতঃপর রাত্রিকে ভোর পার করতে না দেবার ব্যবস্থা।
কাজী সাহেব খাতা হাতে রাত্রির সামনে হাজির। শুরু করলেন," আজ ১৪ফেব্রুয়ারি, রোজ মঙ্গলবার...জনাব আক্কাস আলি... সঙ্গে মোছাম্মত...রা-ত্রি বেগমের... আপনি রাজি? রাজি থাকলে বলেন কবুল। ১৪ ফেব্রুয়ারি কথাটা রাত্রির কানে যেতেই কেমন যেন হয়ে যায় ও। শরীর সবটুকু শক্তি এক করে বলে. "না... আমি কিছুতেই রাজি না। এই দিনে আমি কিছু্তেই অন্যের হতে পারব না।
আমি শুধুই অ..রু..ণের। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।