যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
তিনটা কুত্তার একটা জোট ছিল বংশালে। তাদের নেতা সবসময় অন্য দুই কুত্তাকে খাটিয়ে মারতো আর নিজে লেজ নাড়িয়ে মাছি তাড়াতো। একবার ফরিদ গাজীর উঁচু ওয়াল ঘেরা বাড়ীর ভেতর থেকে মৌমৌ সুবাস বেড়ুতে দেখে তিন কুত্তার জিভ নেমে গেল রাস্তায়। দলপতি একটাকে আদেশ করলো, ঘুরে আয়তো বাবুর্চীর আশাপাশ থেকে, কিছু দেয় টের কিনা!
ওস্তাদের হুকুম শিরোধার্য। যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে কুত্তাটি ওয়ালের একপাশের ভাঙা থেকে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ভেতরে ঢুকে তো তার চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল আয়োজন। অনেক চুলো পাতা হয়েছে, প্রত্যেক চুলার উপরে বিশাল বিশাল ডেক। কোনটাতে বিরিয়ানী, কোনটাতে গরুর গোশত, কোনটাতে মুরগীর রোস্ট, ফিন্নী - সে এক এলাহী কারবার।
ঘনঘন লেজ নেড়ে কুত্তা শিষ্য যখন বাবুর্চীর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পেছনের পা দুটো টানা দিয়েছে অমনি সফেদ দাড়ীর বাবুর্চী সর্দার চুলোর মধ্যে থেকে পুড়ে সেমি অঙ্গার হয়ে থাকা কাষ্ঠঘন্ড বের করে দিল এক বাড়ি।
অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বাইরে বেরুবার আগে সে যথাসম্ভব ব্যাথা ঘুচাবার চেষ্টা করলো। নেতা দোড়ৈ এল, আগ্রহ ভরে জানতে চাইলো, কি কি ব্যাপার! কিছু দিল?
আগুনে ঝলসানো পিঠ ডলতে ডলতে শিষ্য বেশ গদগদভাবে বললো, দেয় মানে, যাবার সাথে সাথেই দিয়ে দেয়! দাড়াতে হয় না।
এবার সর্দার দ্বিতীয় সাগরেদকে পাঠালো। নিজে যাবার এখনও সাহস করছে না। দ্বিতীয় কুত্তা গিয়ে যেই দাড়িয়েছে বাবুর্চীর পাশে, অমনি বাবুর্চি নড়ে চড়ে দাড়ালো।
একটা কুত্তাকে মেরে ভাগিয়েছে, তারপরে আবার একটা আসাতে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ছো্ট্ট একটা চুলাতে ফুটছিল গরমপানি। রেগেমেগে ডেচকি ভর্তি পানি সে কুত্তার গায়ে ঢেলে দিল। অপ্রস্তুত দ্বিতীয় সাগরেদ কিছু বোঝার আগেই গেটের দিকে ঝেড়ে দৌড় দিল। গা ঝাড়তে ঝাড়তে ওস্তাদ কুত্তার কাছে পৌঁছুতে শুনতে হলো, কি হয়েছে রে! তোকে কিছু দিল?
চেহারায় খুশী খুশী ভাব ফুটিয়ে তুলে দ্বিতীয় সাগরেদ উত্তর দিল, হ্যা দেয় তো, একেবারে গরম গরম দিল!
ওস্তাদ এবার পুরো নিশ্চিত।
অনেকদিন পরে খানদানী এক পরিবারে তারা আপ্যায়িত হতে যাচ্ছে। পেট দুলিয়ে নেতা সুলভ গাম্ভীর্যে এবার সে গেট পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো। কিন্তু বাবুর্চী সর্দার আবার একটা কুত্তা দেখে বেজায় রুষ্ট হলো। সে হুমকী দিল, ওরে কে আছিস, সালারে বেঁধে ফেল!
কুত্তার সর্দার বাবুর্চি সর্দারের নির্দয় আচরণে বাকরুদ্ধ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়, তাকে ছাড়ার নামগন্ধ নেই।
চোখের সামনে সবাই পেটপুড়ে খেল, হাড্ডি, মাছের কাঁটাটুকু পর্যন্ত জুটলো না। সন্ধ্যার দিকে বাবুর্চি তাকে ছেড়ে দিয়ে একটা লাথি মেরে খেদিয়ে দিল। কুত্তার সর্দার গেটের বাইরে বেড়ুতে দেখলো অতি ভক্ত দুই শিষ্য তখনও দাড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। দুজনেরই বেজায় কৌতুহল, কি বিষয় ওস্তাদ? এত দেরী কেন? কিছু দিল?
বিষন্ন নেতার সহাস্য উত্তর, দিল তো দিলই, জানিস আমাকে আসতেও দিতে চায়নি!
উৎসঃ শ্রুত ফ্রম বাকীবিল্লাহ ফ্রম বাকীর অজ্ঞাত বন্ধু
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।