সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
দিনের বেলা ঘরে নিজের কাজ করার খুব একটা সময় পাই না। তাই শুক্রবার রাতটাকেই বেছে নেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারার জন্য। এমনকি শুক্রবার দিনটাও নয়। পুরো সপ্তাহের বাজার করে, দিনের প্রায় সবকটা পত্রিকা পড়ে তারপর গোসল ও খাওয়া সারতে সারতে বিকাল হয়ে যায়।
তাই রাতই কাজের জন্য ভালো। নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত টানা লেখার টেবিল, বইয়ের তাক গোছালাম। ইদানিং কাগজে লেখাই হয় না। তারপরও কাগজ-কলম পর্যাপ্ত থাকে টেবিলে। নিউ মার্কেট থেকে নিয়মিত ভাল কাগজের প্যাড আর কলম কিনে এনে সাজিয়ে রাখি।
একদিন লেখা আসবে। সেদিন হয়তো দেখাবো কোনো কারণে কম্পিউটারটা কাজ করছে না। অথবা সেদিন হয়তো কম্পিউটার অন করার ইচ্ছাই হলো না। হতাশ হয়ে যাতে টেবিলে ধপ করে বসে পড়তে না হয়, তাই প্রস্তুতি হিসেবে সব সাজানো থাকে। টেবিলে রবীন্দ্রনাথের ছোট একটা প্রোট্রেইট।
পাশে লাল শেডের ছোট টেবিল ল্যাম্প। লেখার জন্য লাল শেডটা ক্ষতিকর কি না জানি না। তারপরও রেখেছি। বইয়ের তাক গোছাতে গোছাতে হঠাৎ ডায়রিগুলোর দিকে চোখ চলে গেল। ১৯৯৮ সাল থেকে নিয়ম করে প্রতিদিন ডায়রি লিখি।
পর পর সাল অনুসারে সাজানো, নয়টা ডায়রি। ২০০৮-এর ডায়রিটা টেবিলের ওপর রাখা। সন্ধ্যা সন্ধ্যাতেই বাসায় ফিরে আসি। বউয়ের সঙ্গে গল্প করে, খেয়ে প্রতিদিনের অভ্যাস মতো টেবিলে বসি। ডায়রিতে একটা লাইন হলেও নিয়ম করে লেখার অভ্যাসটা হয়েছে।
খুব আহামরি কোনো সাহিত্য নয়। শুধু ডায়রিই লিখি প্রতিরাতে। তারপরও বউয়ের এদিকে খুব খেয়াল। এক গ্লাস পানি ঢেকে রেখে, টিভিতে অল্প সাউন্ড দিয়ে আমার ফেরার অপেক্ষা করে। ফোন এলে, বলে উনি একটু ব্যস্ত।
একটু পরে ফোন করলে হয়? বউয়ের এই সহযোগিতার কথাটা প্রথম থেকেই আমার খুব পছন্দ। লেখকদের ভাগ্যে এরকম বউ খুব মেলে না। আমার মিলেছে। কিন্তু সেই এক ডায়রিই তো লিখি প্রতিদিন। আর কিছু লিখতে পারি না।
বউটা চায় আমি যেন মহৎ কোনো কিছু লিখে ফেলি কোনো এক রাতে। কোনো একটা মিরাকল একদিন ঘটবেই, এটা বিশ্বাস করে মনে প্রাণে। সবচেয়ে বড় কথা, আমিও লেখক হবো বলেই ওকে বিয়ে করেছিলাম। কারণ আমার বই পড়েই ও আমাকে পছন্দ করেছিল। আর আমিও ওকে পছন্দ করেছিলাম, ও লেখক ও লেখা পছন্দ করে বলে।
আমি তাক গোছাতে গোছাতে তৃপ্তিকে ডাক দেই। এ শোনো। আসলে আমার মাথায় নতুন একটা আইডিয়া এসেছে। তৃপ্তির সঙ্গে এক্ষুনি শেয়ার করা দরকার। আমি ভুলে গেলেও তৃপ্তি ভুলবে না।
কাল বা পরশু রাতে খাওয়ার সময় ঠিক বলে উঠবে, কালকের আইডিয়াটা কিন্তু ভালই ছিল। এক কাজ করো, আজকেই লিখতে বসো। শোনো প্রতিদিন এক পৃষ্টা করে লিখলেও ফেব্রুয়ারি আসতে আসতে ২০০ পৃষ্ঠার বই হয়ে যাবে। কোথায় লিখবে? টেবিল খালি করে দেবো?
আমার ডাক শুনে তৃপ্তি প্রায় ছুটে আসে। ডাকো কেন? তুমি আজকে লেখো না?
না লেখি না।
নতুন একটা আইডিয়া আসলো। ভাবলাম তোমার সঙ্গে শেয়ার করি। আমার ডায়রিগুলা দেখছো?
হ্যাঁ। ওই তো। তোমারে পড়েতে দিছিলাম বিয়ের পর, পড়ছিলাম।
পড়বো না। সব একবারে মুখস্ত।
আমি ভাবছি কি জানো, ডায়রিতে লেখা অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলে কেমন হয়?
তৃপ্তি কখনো আমার আইডিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। এখনও তুললো না। একটু চুপ করে থেমে বললো, ভালই।
মনে হলো তৃপ্তি আইডিয়টা ছিক নিতে পারছে না। আমি বললাম সমস্যা কী?
কী আর সমস্যা তো কিছুই না। কিন্তু তুমি তো লিখবা না আসলে। তোমার মতো লেখক এইরকম করে এতদিন বই বের না করে আছে। প্রতিদিনই তো লিখতে চাও।
লেখ কই?
আমি ডায়রিগুলো একে একে সাজিয়ে রাখলাম। কাল থেকে ডায়রিগুলো পড়বো। এখান থেকেই গল্পের সূত্র পাওয়া যাবে। আমি নিশ্চিত। আত্মজৈবনিক উপন্যাস।
লেখকের প্রতিটি লেখাই তো আত্মজৈবনিক। সে অর্থে আলাদা করে কোনো কিছুকে আত্মজৈবনিক বলার কোনো যুক্তি নেই। সমালোচকরা অবশ্য একটু নাক কোচকাবে। তাদের জন্য দাঁতভাঙা জবাবও রেডি আছে অবশ্য।
তৃপ্তির সঙ্গে আমার অনেক মিল।
মিলগুলোর একটা লিস্ট করেছিলাম একদিন। তৃপ্তি লিস্ট দেখে হাসতে হাসতে অজ্ঞান। বলে, আসলটাই তো বাদ দিচো?
কি? কোনটা বাদ গেছে?
তমাল, তুমি না খুব সাধারণ ব্যাপারগুলো খুব মিস করো। তোমরা লেখকরা এত ভারি ভারি বিষয় নিয়ে ভাবো বলেই হয়তো।
বলো না।
বলো,
তোমার আর আমার নামের প্রথম অক্ষর ত।
আমি বোকার মতো বললাম, স্যরি। ভুলে গেছলাম। স্যরি।
ডায়রি থেকে উপন্যাস লেখার আইডিয়া শুনে তৃপ্তি চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর উঠে গিয়ে টিভিতে খবর শোনায় মন দিয়েছিল। আমি রিডিং রুম থেকে বাতি নিবিয়ে লিভিং রুমে যেতেই সে টিভিটাকে মিউট করে দিল।
তমাল, আমাদের কাহিনীগুলো নিয়ে...
আরে না। আমাদের কাহিনী সেটা কেউ বুঝবে? বলো, বুঝবে? আর হুবহু কিছু থাকবে না। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো।
আচ্ছা আগে লেখা শুরু করো তো। তুমি তো খালি বলো। কিছু তো লেখো না ওই ডায়রি ছাড়া। এবার ডায়রি লেখাও বন্ধ হয় কি না ভাবছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।