আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশ্চিমা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ক কিছু ভাবনা

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

শাসক শ্রেণীর মৌনতা আমারে অসহায় করে। শাসক শ্রেণীর প্রগলভতা আমারে ভাবায়। শাসকশ্রেণীর প্রতিশ্রুতিবান হওনের আচরন আমারে সন্দিহান করে। শাসক শ্রেণীর উপর আস্থাশীল হইতে পারি বাস্তবায়নেই...যদিও বাস্তবায়নেও দূরভিসন্ধি থাকে। পুঁজিতন্ত্রের ফ্রিডম কেন্দ্রিক যেই ধারনা তারে নিয়া আমার দোলাচল আছে...পুঁজিতন্ত্রের ফ্রিডম ধারনার উদ্ভব কাল হইতে বিবেচনা করবার গেলেই বুঝন যায় তার অন্তর্নিহিত উৎসের ধারা।

যার আসলে খুব বেশী জটিলতা নাই, অতীব সরল এই কৌশলেই তারা তাগো উদ্দেশ্য হাসিল করবার পারছে। বিশ্ব ব্যবস্থায় যখন প্রতিযোগিতা ছিলো, বিশ্ব ব্যবস্থায় যখন মুক্তির অর্থ নির্ধারনের দার্শনিক বিতর্ক ছিলো তখন থেইকাই পুঁজিতান্ত্রিক ফ্রিডমের ধারনা আসে...এই ফ্রিডম ব্যক্তির, একান্ত ব্যক্তির মুক্তি বিষয়ক ধারণা। মানুষের আল্টিমেট মুক্তির কথা নিয়া আসলে ভাবছিলেন কার্ল মার্ক্স, আর এই মুক্তির ধারনা আসছিলো দ্বান্দ্বিক জগতের স্বাভাবিকতা থেইকা। মানুষ আসলে মানুষের সাথেই দ্বান্দ্বিকতার সম্পর্কের বন্ধনে থাকে বইলা তাগো মধ্যে বৈষম্যমূলক সম্পর্কের ধারণা বিদ্যমান থাকে আর এই বৈষম্য মানুষের-সমাজের সকল আচরনে সকল প্রকাশে বিচ্ছুরিত হয়, প্রতিফলিত হয়। আর এই বৈষম্য থাকে কারন সমাজে ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা থাকে, সমাজে মূল্যবোধ কেন্দ্রীক একরম শ্রেণী কর্তৃক মান নির্ধারনি খেলা থাকে।

শ্রেণী-শাসিত, শ্রেণীবিভাজিত সমাজে শাসক শ্রেণীর মান'ইতো সকলের মান হইবো...এইটাই স্বাভাবিক। অহেতুক বাগাড়ম্বর হয় আমার এতোক্ষণ কওয়া কথাগুলি। কার্ল মার্ক্স এবং এঙ্গেলস সাহেবরা একটা সংগ্রামের ধারণা দিছিলেন এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা থেইকা উত্তরনের। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে আস্থাশীল হইয়া উঠছিলো অনেক বিপ্লবী মানুষ, যার ভিত্তিতে পৃথিবীর একটা বড় অংশ পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বের বাজার ব্যবস্থার লেইগা হুমকীস্বরূপ সামনে আসতে শুরু করলো। আর যেই কারনে মানুষরে এই সংগ্রামকালীন সময়ের যা কিছু নেতিবাচকতা তার বিরুদ্ধে প্রচারনায় গেলো পুঁজিতন্ত্রের ধারকেরা।

মূলতঃ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় আর সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির স্বাধীনতা, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রেণী মানসিকতার বিদ্যমানতা নিয়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিযোগিতামূলক মতাদর্শিক স্বাধীনতা...এইসব বিষয়রে তারা সামনে নিয়া আসলো। পাশ্চাত্যের পুঁজিতান্ত্রিকতায় এই স্বাধীনতার সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ সম্ভব, এই প্রচারনায় নামলো তারা। স্বাধীনতা হইলো তাগো রাষ্ট্রনীতির সবচাইতে চিত্তাকর্ষক বেচাবিক্রির পয়েন্ট। বেচাবিক্রির এই প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রের সকল সমস্যায় তারা ছিলো সর্বদা সচেষ্ট...যেই কারনে প্রতি দশক পরপর তারা অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হইছে। ব্যবসা নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা থাকনে তারা সেই মন্দা সময় কাটাইছে অথবা প্রচারনার মায়া জাল তৈরী করছে।

কিন্তু তবুও নব্বই দশক পর্যন্ত তারা বাধ্য ছিলো এই স্বাধীনতাকামী মতাদর্শ(?)'এর প্রচারনায়। নব্বই পরবর্তী সময়ে তাগো মত প্রকাশের এই সংগ্রামে নতুন মাত্রা আসলো। নিজেগো তৈরী করা ধর্মীয় বিদ্রোহী অবস্থান ধীরে ধীরে খোলস অবমুক্ত করলো। ধর্মরে সামনে আনছিলো তারা একটা অপিনিয়ন হিসাবেই। ধর্মরে তারা দাঁড় করাইছিলো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংগ্রামের বিপরীতে...আর সেই ধর্মই তাগো সামনে আরেকটা মত হিসাবে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিয়া দাঁড়াইয়া গেলে, তাগো চৈতন্য ভাঙে।

তারা বুঝে মতপ্রকাশের সকল ফ্রিডম আসলে জুইতের হয় না। তয় ফ্রিডমের যেই ধারণা পশ্চিমে শুরু হইছিলো, সেইটার বিস্তৃতি ঘটছে বাজার সম্প্রসারনের মতোই। সকল অপিনিয়নের প্রকাশ বাঞ্ছনীয় কইয়া তারা আসলে স্টেইটমেন্টের বাজার তৈরী করছে, যেই স্টেইটমেন্টের সারবত্তা নাই, যৌক্তিক কোন প্রেমিজ নাই...কিন্তু যেহেতু তারা একরম আল্ট্রা স্বাধীনতার মতাদর্শরে সামনে আনতে চাইছে...তাই সবকিছুরই একটা বাজারমূল্য সৃষ্টি করতে তারা পারঙ্গম হইছে। তারা জাতীয়তা বিসর্জন দেওনেরও চেষ্টা করছে...কিন্তু সক্ষম হয় নাই...তারা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য সামনে আসতে দিছে...কিন্তু নিজেরা আধিপত্যকামী মানসিকতা থেইকা কখনো সইরা আসে নাই। ধীরে ধীরে তারা ব্যক্তির স্বাধীনতার তত্ত্ব বেইচা পরিবার প্রথারে হুমকীতে ফালাইছে।

এতসব কিছুর প্রচার আসলেই যেই কারনে ঘটছে সেইটা খুব সাধারন...ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে... পশ্চিমের বুনিয়াদি পুঁজিতান্ত্রিকতায় তা'ও এই ফ্রিডমের চর্চা চালাইতে তারা সক্ষম হইছে। ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গ সেইখানে প্রধান হইয়া উঠে নাই। ব্যক্তি সেইখানে ব্যক্তিগত অভিরুচী'র প্রশ্নে তাই এক্কেরে ব্যক্তিগত ধারণারেই লালন করতে পারছে অনেক ক্ষেত্রেই। যদিও প্রত্যেক মহামন্দার কালেই তারা যখন আবার নিয়ন্ত্রন করতে গেছে, তখন আবার ছোট ছোট নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী সামনে চইলা আসছে তাগো শিল্প-সাহিত্য-জীবন যাপনের ধরণের কারনে। এই নৈরাজ্য নেতিবাচক অর্থে না...পরিবর্তনের অর্থেই তারা নৈরাজ্যের চর্চা করছে।

কিন্তু ঔপনিবেশিকতা উত্তর কালে উপনিবেশগুলি যখন জাতি রাষ্ট্র হইছে তখন সেইখানে পশ্চিমা এই ফ্রিডম আসছে বাজারী পণ্যের সাথে...পছন্দ আর উপযোগিতাকেন্দ্রীক এই ধারণার প্রচারনা হইছে...আসলে এখনো হইতাছে। আর এই ফ্রিডম চর্চার ধারাবাহিকতায় এই দেশেও জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন জীবনাদর্শের প্রসারও স্বল্পভাবে শুরু হইলো। এই দেশে সমাজতন্ত্রীগো অতীত ভূমিকার লেইগা, সকল সংগ্রামে আপোষহীন ভূমিকার লেইগা দেশের সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে এই বাজারী ফ্রিডমের চর্চা কম হইছে। তয় নব্বইয়ের সোভিয়েত বিপর্যয়ের পর স্নায়ুযুদ্ধমুক্ত, মুক্তবাজারের শ্লোগানময় পরিবেশে এই অঞ্চলেও ফ্রিডমের এই আল্ট্রা ফরম্যাটের প্রসার ঘটে। কিন্তু পশ্চিমের মতোন নিশ্চয়তার জীবনতো নাই এই দেশের তরুন সমাজের...তাগো ভাবনা আর কল্পনায়ও লাগাম পরাইতে হয়...ইতিহাসে যেহেতু বিপ্লবের গন্ধ, তাই ইতিহাস পঠনের দারিদ্ররে মহার্ঘ্য করা হইলো এই এই ফ্রিডমে।

যার পথ ধইরা আবার বিকশিত হওনের সুযোগ পাইলো হিপি মানসিকতা, স্বীকার করতে কুন্ঠা নাই সেই জীবনের চর্চা আমি নিজেও করছি। নব্বইয়ের পর ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন-স্পিচ আর অপিনিয়নের বিষয়গুলি অনেক প্রমিন্যান্ট হইলেও, এই ধারণার যথেচ্ছাচার আর সামাজিক মূল্যবোধের কথিত ঐতিহাসিক মাহাত্ম নিয়া ধর্মও হইলো আরেকটা অবস্থান...যার সাথে পরিবর্তনকামী-শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-চেতনা আর মননের প্রবল বিরোধ থাকলেও এই ফ্রিডমের কেরম জানি যোগসূত্র তৈরী হয়। বাজারী ফ্রিডম তাই সমাজে একরম উন্নাসিকতার সুযোগ তৈরী করে। উন্নাসিকতা'র সাথে সমন্বয় সাধিত হয় ধর্মভিত্তিক চেতনারও...কারন দুইজনেই চায় আমাগো ইতিহাসের স্মরণীয় মুহুর্তগুলিরে ভুলতে...যেই ইতিহাসের সাথে সম্পর্কীত সেই সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের সম্ভাবনা, যেই সম্ভাবনা ছিলো মানবের চূড়ান্ত মুক্তির প্রয়াস। যুদ্ধাপরাধীগো বিচার না চাইয়া ভবিষ্যত উন্নয়নের কথা ভাবতে হইবো এইরম চিন্তার অবকাশ তৈরী হয় রাষ্ট্রে...কিন্তু যুদ্ধাপরাধীরা যেই ধর্মের দোহাই দিয়া একটা রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরোধীতা করছিলো তার চর্চা এই সমাজে আবার তারা শুরু করছে...বিভিন্নজনের কান্ধে চাইপা নিজেগো অস্তিত্ব প্রমান করনের চেষ্টাও নিয়মিত করে তারা।

সেই ধর্মকেন্দ্রীকতার বিভাজনে আমাগো আল্ট্রা স্বাধীনতাকামীগো কোন আগ্রহ না থাকলেও মৌন সম্মতি আছে। মৌন সম্মতি শব্দটা হয়তো খুব জুইতের হইলো না, কিন্তু মৌনতায় সম্মতির সম্ভাবনা থাকে...কিন্তু সমাজের স্বাভাবিক নিয়মেই আসলে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে/পাটাতনে পূর্বের নেতিবাচক অধ্যায়গুলি বিস্মরণের প্রয়োজন পড়ে। যেই বিস্মরণ মানে অস্বীকার না, যেই বিস্মরণ মানে শিক্ষাহীনতা না। এখন সময় হইছে ভাববার...আল্ট্রা ফ্রিডমের নামে আমাগো মুক্তির চেতনাবিরোধী সকল পরিত্যক্ত আদর্শরে অবমুক্ত করুম!? যুদ্ধাপরাধীগো বিচারে দাবীরে অহেতুক মনে করুম!? যুদ্ধাপরাধীগো চেতনার লগে সহাবস্থানের লগে আপোষ করুম!? ...আসলেই এই অবস্থানসমূহ কি অগ্রগমনের নির্দেশিকা!?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।