জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
স্বীয় সৃষ্টি ও প্রতিপালনে মহামহিম একক স্রষ্টার প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বাসে অধিকাংশ মানুষ ঐকমত্য পোষণ করলেও সেই এক ও অদ্বিতীয়কে ইবাদাতের জন্যও একমাত্র মা'বূদ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষেরা হয়ে পড়েছে দ্বিধা বিভক্ত। সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ কারো না কারো কাছে স্বীয় মস্তক অবনত করে থাকে এবং এটাই মানুষের জন্য উচিত। কেননা, সৃষ্টি বলে মানুষ কখনোই স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়; পরন্তু তার চাহিদা রয়েছে, ভয় রয়েছে, আশা-আকাংখা রয়েছে এবং আরো রয়েছে দায়িত্ববোধ। এসব কিছু সুসম্পন্ন করতে তাকে তার স্রষ্টা সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করেছেন। তবুও জগত সংসারে টিকে থাকতে হলে তার প্রতি পদে পদে সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
তখনি মানুষ আশ্রয় প্রার্থনা করে কোন না কোন শক্তিধরের নিকট। অথচ মানুষের জন্য একমাত্র আশ্রয়দানকারী হলেন তার প্রতিপালক। কিন্তু স্বল্পজ্ঞান, অদূরদর্শিতা, গাফলতী ও স্বার্থান্ধতার কারণে মানব জাতির অধিকাংশই তাদের প্রকৃত আশ্রয়দাতাকে চিনতে ভুল করে বসে।
সাহায্য পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা বিবেকের দাবী, মানুষ সে বিবেক পেয়েছে বলেই আশ্রয়দাতাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে এটাই স্বাভাবিক। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পদ্ধতিকেই আমরা ইবাদাত হিসেবে ধরে নিতে পারি।
অথচ অস্বাভাবিক আচরণটা মানুষ করে থাকে শুরুতেই তার প্রকৃত আশ্রয়দাতাকে চেনার ক্ষেত্রে। বিপদে-মুসিবতে কিংবা আনন্দে-বিজয়ে কার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে, কার প্রশংসা জ্ঞাপন করতে হবে, সে নির্বাচনে যদি ভুল হয়ে যায় তাহলে ইবাদাত প্রদানের ক্ষেত্রেও ভুল হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তাই মানুষের জন্য শোভনীয় হলো, তারা চিনতে চেষ্টা করবে যে, তাদের প্রকৃত স্রষ্টা কে, প্রকৃত প্রতিপালক কে, তাঁর ক্ষমতা কতটা ব্যাপক, তাঁর দয়া কতটা উদার, তাঁর শাস্তি কতটা ভয়াবহ; চেষ্টা করতে হবে কিভাবে, কোন পন্থায় তাঁকে চেনা যায়, বিবেচনা খাটিয়ে ঠিক করতে হবে কোন্ দলীলের উপর ভরসা করা যায়, তাঁর পক্ষ হতে কোন বাণী কি এসেছে, তাঁর পক্ষ হতে কোন প্রেরিত পুরুষ কি এসেছেন, ইত্যাদি যাবতীয় পন্থা অবলম্বন করে একজন মানুষ তার স্রষ্টার সন্ধান লাভই মূলত তাঁর পক্ষ হতে পাওয়া বিবেক-বুদ্ধির সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার।
আরবী ألوهية "উলুহিয়্যাহ্" শব্দটি الإله "আল-ইলাহ্" শব্দ থেকে এসেছে। ইলাহ্ অর্থ হচ্ছে অনুসৃত উপাস্য।
আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'লার সুন্দর নামসমূহের একটি নাম হচ্ছে "আল-ইলাহ্"। উলুহিয়্যাহ্ হলো আল্লাহর সুমহান গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম একটি গুণ।
সৃষ্টির কাছ থেকে ইবাদাত পাওয়া স্রষ্টার জন্য সাধারণ একটি দাবী। যে ব্যাপারে আমাদের বিবেক বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করবে না। কিন্তু তারপরও মানুষেরা একক স্রষ্টার জন্য তাদের যাবতীয় ইবাদাত নির্দিষ্ট করে না কেন? এর জবাব হলো- আসলে মানুষ তাদের প্রকৃত স্রষ্টাকে যথাযথভাবে চিনতেই ভুল করেছে।
তাঁর জ্ঞান, ক্ষমতা, বিশালতা, পরিবেষ্টন ক্ষমতা, ন্যায় বিচারের মাধ্যমে শান্তি ও শাস্তি দানের ব্যবস্থাপনা; ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক ও যথার্থ জ্ঞান লাভ না করে অজ্ঞতার আঁধারে ডুবে থাকার কারণেই মানুষ প্রভুত্বে একত্ববাদের স্বীকৃতি দানের পরও ইবাদাতে একত্ববাদের স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়।
বান্দার জন্য সর্বোচ্চ সাধনা করে হলেও জানা প্রয়োজন যে, তার প্রকৃত স্রষ্টা কেমন, তার বিস্তৃতি ব্যাপক, প্রকৃত ইলাহ্ হবার গুণাবলী তাঁর মধ্যে বিরাজমান কি না? এসব মৌলিক ত্যথাবলী অজ্ঞাত থেকে গেলে বান্দা তার প্রভু সম্পর্কেই বিভ্রান্ত থেকে গেল, যার পরিণাম ভ্রষ্টতা, আর ফলাফল কোথাও নিজ হাতে বানানো মূর্তির পায়ে মাথা ঠুকা, কোথাও চন্দ্র-সূর্য-অগ্নির মত অতি নগণ্য সৃষ্টির শক্তির কাছে মাথা নুইয়ে দেয়া, কোথাও নিজেদের মতই অন্য কোন মানুষকে মা'বূদের আসনে অলংকৃত করা ইত্যাদি হাজারো ভ্রষ্টতা।
মানুষের জন্য বাঞ্ছনীয় হলো সে তার সকল প্রকার প্রকাশ্য ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার জন্যই নির্দিষ্ট করবে। প্রকাশ্য ইবাদাতসমূহ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
عن أبي عبدالرحمن عبدالله بن عمر بن الخطاب رضي الله عنهما قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ( بني الإسلام على خمس : شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمدا رسول الله ، وإقام الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، وحج البيت ، وصوم رمضان ) رواه البخاري و مسلم .
((ইসলামের ভিত্তি বা স্তম্ভ হলো পাঁচটি; এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ করা ও রমাদান মাসে সওম সাধনা করা। )) [বুখারী: ৭, মুসলিম: ২০, মাকতাবাতুস শামেলাহ]
আর যাবতীয় অপ্রকাশ্য ইবাদাতেও মানুষ তার স্রষ্টা, প্রতিপালক ও মা'বূদ হিসেবে একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাকেই নির্দিষ্ট করবে যার বিবরণ কালেমায়ে ঈমানে মুজমালে রয়েছে, অর্থাৎ, ((আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশ্তাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর, আখেরাতের দিনের উপর ও ভাগ্যের ভাল-মন্দ তাঁর পক্ষ হতে -এ কথার উপর।
))
এভাবেই সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে তার প্রকৃত স্রষ্টা ও প্রতিপালকের সাথে সাথে তার প্রকৃত মা'বূদকেও চেনা। তিনি ছাড়া আর কে আছে এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে, যে ইবাদাত পাওয়ার মত যোগ্যতা রাখে অথবা যার জন্য আমাদের ইবাদাত-ভক্তি-শ্রদ্ধাগুলোকে নিবেদিত করা যায়? কেউ নেই। তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি মানুষের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্যতার চেয়েও সুমহান, সুবিজ্ঞ, সুবিশাল!
১৪.০১.২০০৮, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।