আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ এক নিরন্তর পথ চলা।

আল্লাহ আমার রব, সেই রবই আমার সব। দমে-দমে তনু-মনে তাঁরই অনুভব।

মহররমের অনেক শিক্ষা নিয়েই আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বিষাদ সিন্ধুর (আমি এর সাহিত্য মূল্য নিয়া প্রশ্ন করছিনা, তবে এর ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে) মতো বই পত্রের কল্যাণে মহররম মানেই আমাদের কাছে কারাবালা আর মর্সিয়া। আমরা ভুলে যাই, মুহারররম মানেই কারবালা নয়।

মহররম মানে একটা নতুন বছরের শুরু। মহররম মানে আদমের (আ) সাথে শয়তানের সংঘাত। মহররম মানে বোধের নবতর উদ্বোধন। মহররম মানে শয়তানের বিরূদ্ধে মানুষের অনিবার্য বিদ্রোহ, বিপ্লবের ইশতেহার। হিজরী সাল আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা বয়ে আনে, তার মাঝে কয়েকটি হলো।

১। শয়তানের কাজই হলো আদমকে (আ) বি্ভ্রান্ত করা। আদম (আ) ভুল করবে কিন্তু ভুল করেও তার রবের কাছে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে যাবে। ২। মূসার (আ) সাথে ফিরআউনের সংঘর্ষ হবেই, এবং সবশেষে মূসারই (আ) জয় হবে।

৩। মক্কা হোক মদীনা হোক কিংবা ইয়েমেন মুসলমান যেখানেই যাবে তার রবের আনুগত্য করবে। দেশান্তর তার বিশ্বাস ও কর্মের অন্তরায় হবেনা কখনো। ৪। মুসলমান সংকীর্ণ মানসিকতামুক্ত হবে, বিশ্বাসে, কর্মে, মননে সে হবে আন্তর্জাতিক, সার্বজনীন, একই সাথে খাঁটি দেশপ্রেমিক।

সে জন্মভূমিকে যেমন ভালবাসবে তেমনি যে দেশে বসবাস করছে সে দেশকে, সে দেশের সংস্ক্ৃতিকেও আপন করে নেবে। ৫। মুসলমান হবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, মানবাধিকার একনিষ্ঠ কর্মী। মদীনার সনদ পৃথিবীর ইতিহাসে মানবাধিকারের সর্বপ্রথম দলীল। ৬।

মুসলমান হবে মানবতাবাদী, ভাতৃত্ববোধ সম্পন্ন। যেভাবে আনসাররা মুহাজিরদেরকে সাহায্য করেছে তেমনি মুসলমান মানুষের সেবায়, মানবতার কল্যানে সদা থাকবে অগ্রগামী। ৭। মুসলামান সত্য প্রকাশে হবে কুন্ঠাহীন। জালেমের শাসকের সামনে সত্য কথা বলাকে মনে করবে জিহাদ।

৮। মুসলামান হবে শান্তির দূত। মদীনার পথে কুবা শহরে দেয়া মহানবী (স) হিজরাতের প্রথম ভাষণে তিনি বলেছেন, " শান্তি ছড়িয়ে দাও সবখানে, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, আত্মীয়তা ও মানবতার সাথে তোমার যে সম্পর্ক তা অটুট রাখ, মানুষ যখন রাতের আঁধারে ঘুমে বেঘোর তখন নরোম বিছানা, প্রিয়জনের সোহাগের বাঁধন ছেড়ে একাকী নামায পড়ো, স্রস্টার স্মরণে, তবেই তুমি পরম শান্তিতে প্রবেশ করবে জান্নাতে । " (আস-সীরাহ আন-নবূবিয়্যাহ : ইবনে হিশাম, ৩:২০) ৯। মসজিদ হবে মুসলিম সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কেন্দ্র।

মুসলমানের গভীর সম্পর্ক থাকবে মসজিদের সাথে। হিজরাতের সময় তিনি পরপর তিনটি মসজিদ নির্মাণ করেন। প্রথমটি কুবায়, রানুনায়, আর সবশেষে মদীনায়। মসজিদ নির্মাণ করে তিনি বুজালেন আমি চলে যেতে আসিনি, বরং তোমাদের একজন হয়ে তোমাদের সাথে থাকতে এসেছি। আজো তিনি সেখানেই শুয়ে আছেন।

সেই মসজিদে। ১০। সবচাইতে বড় কথা হলো, মুসলমান একজন ভালো মানুষ হবে। সালটা হলো হিজরী সাল। আরবী শব্দ হিজরী মানে কোন কিছুকে ছেড়ে দেয়া।

মুসলমান সবসময় সকল মন্দকে ত্যাগ করবে। ভালোকে গ্রহন করবে। খারাপ অভ্যাস, অনৈতিক কার্যকলাপ আর পশুসুলভ আচরণ সমূহ থেকে সে নিরন্তর হিজরাত করবে মানবিক গুনাবলীর দিকে। হিজরাত করবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, মিথ্যা থেকে সত্যের দিকে, অশিক্ষা থেকে শিক্ষার দিকে। এ এক নিরন্তর পথ চলা।

এটাই হিজরাত, হিজরাতের শিক্ষা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।