জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
আগের অংশ পড়ুন।
আপ্রাণ প্রচেষ্টা: তবু কি বসে থাকি কেউ? থাকি না। কেন থাকি না? হাঁ, এখানেই স্বপ্নেরা আর আশা-আকাংখারা দেখায় তাদের চমৎকারীত্ব। যে মানুষটি মৃত্যুসজ্জায় সেও নিদারুন আশায় বুক বাঁধে যে, সে সেরে উঠবে, আবারো নব উদ্দামে দু'পায়ের পাতাগুলোতে আঁকতে পারবে নানা ছবি; এ পৃথিবীর মাটিময় ক্যানভাসে। দু'হাতে আগলে রাখে সে তার যাবতীয় সম্পত্তিকে।
কেন এমন হয়? কোন সে শক্তি এমনটি ঘটায়? এরই নাম- স্বপ্ন ও আশা। যারা যুবা, তাদের তো মনে মনে প্রায় নিশ্চিত স্বপ্নেরা যৌবনবতী হয়ে আছে এই ভেবে যে, অন্তত ষাট-সত্তর কিংবা আশি তো পেরুবোই; অতএব অনেক সময় বাকী আছে। অথচ কেউ জানি না প্রকৃত সত্য। শিশুরা-বালক/বালিকারা তো জীবনটাকেই শিখছে, ধারণ করছে, বেড়ে উঠছে পৃথিবীর জন্য। স্বপ্ন আর আশাগুলো তো সেখানে শিশুই, তাই বড় বড় কথা, গভীর তত্ত্বকথা সেখানে অবুঝই নয় শুধু বেমানানও।
তাই জীবনের নাম যদি আমরা দিয়ে থাকি গাড়ী তো স্বপ্ন আর আশারা সে গাড়ীর ইঞ্জিন; যা টেনে নিয়ে যায় প্রতিটি জীবন গাড়ীকে তার গন্তব্য পানে।
যদি সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়: এখন ভাবুন তো এমন কোন প্রাণের কথা, যার একটু পর ক্ষুধা নিবারণে খাদ্য গ্রহণের কোন আশা নেই, ক্লান্তিতে নিদ্রায় ঢলে পড়ার কোন আকাংখা নেই, অনেক সাধের ময়না প্রতীম প্রিয়তমার কোন বাসনা নেই, সন্তানের প্রিয়মুখ দর্শনের কোন স্বপ্ন নেই, পৃথিবীতে আপন করে গড়ে তোলার মত কোন সম্পদ অর্জনের স্বপ্ন নেই, তার চারদিক জুড়ে কেবলি নেই, নেই আর নেই....! তবে হাঁ, এমন ধারাতেও দু'টি দিক থাকতে পারে- এক) ব্যক্তির সকল স্বপ্ন পূর্ণ হয়ে গেছে, প্রিয়তমা, সন্তান, বাড়ী, গাড়ী, আয়েশানন্দ, সম্পদ ইত্যাদিতে যত আশা ছিল সবই পূর্ণ হয়ে গেছে। দুই) ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ কোন বিপর্যয়ের কারণে এসব অনুভূতিগুলো তার মধ্যে কাজই করে না, যাদেরকে আমরা পাগল কিংবা মানসিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বলে আখ্যা দিয়ে থাকি।
লক্ষ্যণীয়, প্রথম পর্যায়টিতে যদি কোন মানুষ উপনীত হয় (যদিও হওয়া অসম্ভব), তবে তার অবস্থাটা একটু ভাবনায় তুলে এনে দেখুন তো- কি না আছে তার, আর কি চাই, কি চাওয়া উচিত, কোন্ স্বপ্নের পেছনে ছুটবে এবার সে, কোন না পাওয়াকে অর্জনের জন্য এবার নিবেদিত হবে সে; এই যে এক স্বপ্ন শূণ্যতা, এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু তখন সে ব্যক্তির জন্য আর কিছু থাকবে না। পর্যায়ক্রমে তাকে পেয়ে বসবে নানা অসামঞ্জস্যতায়, তারপর মানসিকভাবে পক্ষাঘাত গ্রস্ততায়, তারপর হয়ত আরো ভয়াবহ কিছুতে এবং পরিশেষে সে হয়ত দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যেতে পারেন যাকে আমরা আখ্যা দেই পাগল।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় পর্যায়টি অর্থাৎ পাগল কিংবা মানসিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরা যে সমাজ দেহের জন্য থাকা না থাকা সমান; বরং বিপর্যয়, তা বলে ব্যক্ত করা অপ্রয়োজনীয়।
পরিশেষে, স্বপ্ন ও আশা-আকাংখা বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয়- "আমাদের স্বপ্ন ও আশার সীমানা অযুত-নিযুত মাইল অতিক্রান্ত, অথচ এ পথের কিছু দূর গিয়েই আমাদেরকে ঝরে পড়তে হয়, আমরা ঝরে পড়ি, আমাদেরকে হারিয়ে যেতে হয়, আমরা হারিয়ে যাই"। তবুও স্বপ্ন এবং আশারাই জীবনের অনেকাংশের ধারক, তারা আঁকড়ে রাখে আত্মাকে, দেহকে, এ দু'য়ের সমন্বয়ে পৃথিবীর মাটিতে ঘুরাফেরা করা এই আমাকে/আমাদেরকে। তাই স্বপ্ন এবং আশাগুলো হওয়া উচিত ভাল, কল্যাণের; যাতে জগদ্বাসীর কাছে আমি/আমরা মরেও বেঁচে থাকতে পারি- আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়নে, অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলোর হাজার জনের স্বপ্নের মাঝে বিতরণে বিতরণে.....!
(শেষ)
02.01.2008, মদীনা মুনাওয়ারা। (নববর্ষের প্রথম গদ্য লেখা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।