আর্ট ক্যাম্প, কুষ্টিয়া
২৩ - ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭
স্মরণ মৎস-বীজ খামার, রহিমপুর, ঢাকা রোড, কুষ্টিয়া
প্রদর্শনী: ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭, বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা
ব্যাবস্থাপনা: দেলোয়ার হোসেন
সমন্বয়কারী: শাওন আকন্দ
অংশগ্রহনকারী শিল্পীবৃন্দ:
শাওন আকন্দ
রাজীব আশরাফ
পলাশ চৌধূরী
মাহাবুবুর রহমান
সুমন গুহ
অভিজিৎ দাস
তানজিম আহমেদ বিজয়
তানিয়া-তুন-নুর
সারিয়া মাহিম
ফাহিম ফেরদৌস
অনামিকা জলি
এবং
দেলোয়ার হোসেন
সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
কোন সংগঠনের ব্যনারে নয়, কিছু শিল্পীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুধু চিত্রশিল্পী নয়, বরং বিভিন্ন মাধ্যমের পেশাজীবী মানুষেরা এই আর্টক্যাম্পে অংশ নিয়েছে। চার দিন ব্যাপি আয়োজিত এই ক্যাম্পটিতে নানা মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহিত বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে নানান রকম ইনস্টলেশন আর্ট, পারফরমেন্স, পেইন্টিংস, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির মেলবন্ধনে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয়েছিল।
আমি আর্ট ক্যাম্পটি সম্পর্কে শুনলাম এবং কিছু ফটোগ্রাফ দেখলাম বন্ধুদের মাধ্যমে।
শুনে ও দেখে আমার যে বিষয়গুলো মনে হয়েছে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এই পোষ্ট।
শিল্পকর্মের বিষয় হিসেবে নানা আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষঙ্গকে কাজে লাগানো হয়েছে। সবই প্রতিকি উপস্থাপনায়। এই আর্টক্যাম্পটির আয়োজন এবং পরিচালনায় কুষ্টিয়ার নন্ একাডেমিক শিল্পী দেলোয়ার হোসেনের সর্বাত্বক সহযোগিতায় অংশগ্রহনকারীরাই নিজস্ব চিন্তা ভাবনা দ্বারা এগিয়ে নিয়েছিলো।
যে সাবজেক্ট এবং প্রতিকগুলো এখানে উপস্থাপিত হয়েছিল তা আমাদের কাছে নতুন নয়।
যেমন, ছোট মাছের ঝাঁক গিলে ফেলছে বড় মাছ বা কুমির। কিন্তু এটাই যখন একটা হ্যাচারীর চৌবাচ্চার দেয়ালে আকা হয় তখন স্থান মাহাত্ব্যে একটা আলাদা অর্থ ধারন করে। হ্যাচারীতে কিন্তু ছোটবড় সব ধরনের মাছেরই শৈশব অতিবাহিত হয় যখন উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছেদের শৈশব এবং প্রজনন হুমকির মুখে। আর এই লেখাটি লিখতে বসার আগেই আমার এক কলিগ বলল, আমাদের অফিসের সামনের রাস্তায় দেয়াল ধ্বসে দু'জন শিশু আজ সকালেই নিহত হয়েছে। সময় বোধহয় হয়ে গেছে মানুষের শৈশবকেও হ্যাচারীর চৌবাচ্চায় পাঠাবার।
চৌবাচ্চার আশেপাশেই ওৎ পেতে বসে আছে অক্টোপাস আর চারপাশে ছড়ানো মাকড়শার জালে আটকা পড়ে আছে মানবিক স্বপ্ন ও ভালবাসা।
এসব উপস্থাপনার উপর দিয়ে একটু দূরে তাকালেই দেখা যায় জলাশয়ে দাড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ রঙিন কাকতাড়ুয়া। শিল্পী কেনো জলাশয়ের মধ্যে কাকতাড়ুয়া বানালেন তা জানি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে জলাশয়েও কাকতাড়ুয়ার উপযোগীতা তৈরী হয়ে গেছে যখন আমাদের জলাশয়ে প্রবেশ করেছে আফ্রিকান মাগুর আর পিরানহা। তাই তাকে কাকতারুয়া না বলে বলি মাছতারুয়া।
এক পুঁজিবুড়ি গাছের মগডালে বসে বসে সব কিছু কিনে নিতে থাকে। কিন্তু এক আদিবসী সর্দার সেই পুজি গাছের চারপাশে বিক্রি না হওয়ার অহংকারে আর উচ্ছাসে আর ক্ষমতায় উদ্দাম নেচে চলে।
জলাশয়ের দিকে আগাতে থাকলে দেখা যায় অসংখ সাপ উঠে আসছে। তারপরও জলে ভেসে থাকা বিচিত্র রং-এর নৌকা স্বপন আর সম্ভাবনার ভাসান নিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল থেকে যায়।
ক্যাম্পটির সর্বত্র দেখাযায় প্রাপক এবং প্রেরকের ঠিকানাবিহীন সাদা খাম পড়ে আছে যত্রতত্র।
বেড়ায়, দেয়ালে, মাকড়সার জালে, কাকতাড়ুয়ার গয়ে সব জায়গায় লেপ্টে দে সাদা খামের উপাখ্যানে অংশগ্রহন কারীরা কী বোঝাতে চান। হতে পারে শুরুতে এই আর্ট ক্যাম্পের কোনো উদ্যেশ্য ছিলো না। তবুও অংশগ্রহনকারীরা শুধুমাত্র তাদের শৈল্পীক সত্তার চোরাটানে এই সব উপস্থাপনার উদ্যেশ্য নির্মান করেছেন। তাই তাদের চিন্তায় প্রথমে দর্শকের কথাও জানা ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সাদা খামগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যায় ক্যাম্প দেখতে আসা এক অনিশ্চিত দর্শক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।