জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
সুমহান স্রষ্টা আমাদের জীবনের বাহ্যিক উপাদানগুলো এবং আমাদের আভ্যন্তরীণ আবেগ-অনুভূতিগুলোকে এমন সুচারুরূপে সৃজন করেছেন যে, সমগ্র মানব জাতি হয়ত তাদের ধ্বংসপূর্ব পর্যন্ত সাধনা করেও এর সম্পূর্ণটুকু উদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। তদুপরি তো রয়েছে সাময়িক ধ্বংস, আবারো উত্থান, আবারো কালের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া, আবারো খুঁজে পাওয়া আর সেসব সাধনায় চলে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সে অনেক কথা, সেদিকে না গিয়ে আজকাল খুবই নাড়া দিচ্ছে চিন্তার ছোট্ট কুঠুরীটিতে-'যদি সকল স্বপ্ন-আশা পূর্ণ হয়ে যায়, তখন কি হবে?'
সৃষ্টির প্রধান দু'টি দিক: হাঁ, শুরুতেই বলেছি যে, দু'টি দিকের সমন্বয়ে আমরা এক একজন স্রষ্টা কর্তৃক একটি পরিপূর্ণ সৃষ্টি। আর সে দু'টি হলো- আমাদের বাহ্যিক উপাদান, যেমন- মস্তিষ্ক, হাত-পাসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আমাদের ধারক দেহ ও সে দেহের প্রয়োজনে যাবতীয় অন্যান্য উপাদান, যেমন- খাদ্য-পানীয়, কর্মাদি সম্পাদনের উপায়-উপকরণ, আরাম-আয়েশের সরঞ্জামাদি ইত্যাদি।
অন্যদিকে রয়েছে এক অদৃশ্য চালিকা শক্তি, যাকে আমরা রূহ্ বা আত্মা বলে থাকি।
তার অধীনে রয়েছে আরো কিছু শক্তি যেমন- চিন্তা শক্তি (মস্তিষ্ক তো শুধু ল্যাবরেটরী সাদৃশ, মূল নিয়ন্ত্রণ তো রূহে), দৃষ্টি শক্তি (চোখ তো শুধু যন্ত্র মাত্র, আত্মার নিয়ন্ত্রণাধীন দৃষ্টিশক্তি বলেই তো আমরা দেখতে পাই), শ্রবণ শক্তি (একই কথা, কান যন্ত্র কেবল, শ্রবণ শক্তিই শোনায়), তেমনি নাক, জিহ্বা, ত্বক ইত্যাদি।
স্বপ্ন ও আশা: আমাদের আভ্যন্তরীণ আত্মার আকাংখা, চিন্তার বিশ্লেষণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের চাহিদামতই জন্ম নেয় স্বপ্ন, সজ্জিত হয় আশারা। কখনো এ স্বপ্ন হয়ে থাকে কল্যাণের, মঙ্গলের, কখনো হয়ে থাকে ধ্বংসের, বিনাশের; ব্যক্তি ভেদেই যার তারতম্যতা লক্ষণীয়। আমাদের অনেকেই ভেবে থাকে- বেঁচে থাকবে অনেকদিন, সত্য সাধনা করবে, মহাসত্যের প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীকে করে তুলবে শান্তিময়, মানুষের মুখ থেকে কান্নাকে মুছে দেবে চিরতরে, জীবন ও জগতের উন্নয়নে নিবেদিত হবে, প্রিয়তম/তমা আসবে জীবন জুড়ে, সন্তান-সন্ততিতে মুখরিত হবে চারধার, ইমারত রচনা করবে, সুস্বাদু খাবারে রসনাকে তৃপ্ত করবে, অগাধ সম্পদের মালিক হবে। আবার অন্যদিকের অনেকেই ভাবে- পৃথিবীতে সে একাই রাজত্ব করবে, তার কথাই হবে জগতের আইন, তার ইশারাতেই মানুষ জীবন পাবে আবার মৃত্যু ঘটবে, সত্য হোক আর মিথ্যা হোক তার স্বার্থ্যই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে, পৃথিবী স্মশান হয়ে যাক তার ফুলের বাগান অক্ষত থাকুক, পৈশাচিক চাহিদা মেটাতে তার চাই অসংখ্য রমনীর নিঃশ্বাস সম্বলিত অকাল মরণ, সন্তানের বদলে তার চাই স্বীয় পৈশাচিকতার উত্তরাধিকার, সে জান্নাত রচনা করতে চায় এ নশ্বর ধরাতেই।
এভাবেই কর্মে আত্মনিয়োগের পূর্বে আমাদের স্বপ্নেরা জন্ম নেয় আর টেনে নিয়ে যায় আমাদেরকে আমাদের কর্মস্থলের প্রতি।
আমাদের সীমাবদ্ধতা: কিন্তু স্বপ্ন এবং আশা যত দীর্ঘই হোক না কেন, আমরা কি আদৌ পারি স্বপ্নের সীমানাকে ছুঁতে? স্রষ্টার চিরন্তন সুসামঞ্জস্য বিধানের আওতায় আমাদের বিশাল বিশাল স্বপ্নেরা মূলত একেবারেই অসহায়। আমাদের অবস্থান থেকে পানীয় পানির মশক কিছুটা দূরে, অথচ আমাদের হাতের দৈর্ঘ্য অতি সামান্য, তাই উঠে গিয়ে তা সংগ্রহ করতে হবে। কোন ক্রমেই পারি না হাতটাকে আরেকটু দীর্ঘ করতে কিংবা অলৌকিক শক্তিবলে মশকটিকে কিনারে নিয়ে আসতে। আমাদের স্বপ্ন অনেক পাবো, অঢেল অর্জন করবো, কিন্তু শত সাধনার পরেও নিয়তির নির্ধারিতটুকুর বাইরে আমাদের জন্য কিছুই বাকী থাকে না।
তদুপরি সাধনা না থাকলে নির্ধারিতটুকুও হারানো অনিবার্য হয়ে যায়। আমাদের কেউই চায় না যে, সে চলে যাবে পৃথবীর এ মায়াময় ভূমি ছেড়ে, কিন্তু অযুত সাধনাতেও নির্ধারিত ক্ষণের একটি সেকেণ্ডও বেশী থাকা যায় না। তদুপরি এও জানি না যে কখন চলে যেতে হবে.....! এভাবেই কতইনা ক্ষুদ্র শক্তিবল, স্বপ্নপূরণ সীমা আর নিরুপায়ত্ব নিয়ে আমাদের জীবন।
=২০০৮ এর প্রথম গদ্য চর্চা।
(আরেকটু বাকী আছে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।