ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
বছর শেষের কথন ও নতুন সনের প্রতীক্ষা/ শেখ জলিল
এক বছরের হিসেব খুব বেশি কিছু নয়, তবু দিন-ঘন্টা-মিনিট-সেকেণ্ড হিসেবে এর সংখ্যা দাঁড়ায় বিশাল। এ বিশাল সময়ে অনেক মহৎ কাজ হতে পারে, আবার হতে পারে নানান দুর্ঘটনা, মৃত্যু, রোগশোক। প্রাপ্তি-হারানোর হিসেব কষা যেমন বুদ্ধিমানের, তেমন বোকামীরও। সত্যিকারের বুদ্ধিমানেরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে। অতীতে হারানোর ব্যথা নিয়ে অনুশোচনায় ভুগলে ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ হতে বাধ্য।
নানান হতাশা, দুঃখ মনকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। তবে আমি হতাশাবাদীদের দলে নই। প্রাপ্তিসুখের ঢেকুর যেমন আমার মধ্যে নেই তেমন অপ্রাপ্তির জ্বালাও আমাকে খুব একটা বেশি পোড়ায় না।
২০০৭ সালের হিসেব নিয়ে যদি বসি প্রথম আসে নতুন চাকরি প্রাপ্তির কথা। বছরের শুরুতে আমার এক সিনিয়র ভাই বলতে গেলে একরকম জোর করে নিয়ে গেলেন নতুন এক সংস্থায়।
ব্যস, চাকরিটা হয়ে গেলো। প্রায় ছয় মাস ধরে বসে ছিলাম চাকরির ধান্দায়। আর না করতে পারলাম না। কোনোরকম জানাশোনা না করেই যোগ দিলাম নতুন চাকরিতে। অমর একুশে বইমেলায় দু-দু'টো বই বের করা ছিলো ২০০৭ সালের বড়ো প্রাপ্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
হারানোর কথা যদি বলি উল্লেথযোগ্য কী হারানো- ঐ চাকরিটাই। এক্ষেত্রে হারানো বলা ঠিক হবে না। বরং বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ে নিজেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে এলাম। এ গেলো ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালের বড়ো প্রাপ্তি বা হারানোর কথা।
দেশ ও দশের কথায় যদি আসি তবে বলবো ২০০৭ সাল গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির বছর, অর্থনৈতিক মন্দার বছর হিসেবে।
দু'দফা বন্যা, চট্টগ্রামে পাহাড়ী ভূমিধস, সিডর আর আর উচ্চ দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের জীবন ছিলো বড়ো কষ্টের। যেভাবে নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে সেভাবে মানুষের আয় ছিলো না। আর চাকরির বাজার ছিলো আরও মন্দা। দেশি-বিদেশি লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা হাত গুটিয়ে বসেছিলো। এখনও সেভাবেই আছে দেশের হালচাল।
নতুন বছরে নির্বাচন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এদেশের মানুষের ভাগ্যে কী বয়ে আনবে তা আল্লাহ্ মালুম!
আমরা হারিয়েছি অনেক রাজনৈতিক, কবি, শিল্পীদের। ভাষাসৈনিক ফজলুল করিম চলে গেলেন। আরেক ভাষাসৈনিক কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী-কে হারানো আমাদের বড়ো ক্ষতি। হারিয়েছি সিলেটের কবি মমিনুল মউজদীন-কে। দলছুট ব্যান্ডের নামকরা প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী, সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীকে হারানো আমাদের ছিলো বড়ো কষ্টের।
মনে পড়ছে বিখ্যাত সুরকার শাহনেওয়াজকে যাঁর সাথে স্বল্প পরিচয় ছিলো। আর আমার কিছু গানের সুরকার প্রণব ঘোষ-কে স্মরণ করছি শ্রদ্ধাভরে। কোরবানীর ঈদের সময় রব্যাংগস ভবনের ভিতর আটকে পড়া মৃত গলিত লাশের গন্ধ আমাদেরকে কষ্ট আর পীড়া দিয়েছে। বিব্রত করেছে ফ্রান্সে পাঠানোর সময় পুরাকীর্তি চুরি হবার ঘটনা।
তবুও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, দুর্নীতিবাজদের বিচারাধীন করা অনেকেরই প্রশংসা কেড়েছে।
আগামীতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসে তা হবে এদেশের জন্য চিরকল্যাণকর। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান যদি মূল লক্ষ্য থাকে আগামী সরকারের তবেই আগামী ২০০৮ সাল হবে সবার পাওয়ার, কাঙ্ক্ষিত সুখের। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
৩০.১২.২০০৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।