জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
বই, বই, বই
সারা বছর এত বেশি যান্ত্রিক থাকি যে ছুটিতে চূড়ান্ত রকমের নিয়ম ভঙ্গ করছি। সারাদিন বই পড়ছি। নয়টা বই পড়া হয়েছে এক মাসে। বেশির ভাগই ইংলিশ ক্ল্যাসিক।
আমি শরতের ভক্ত, এখন জেইন অস্টেনের লেখায় আমি বাড়াবাড়ি রকমের শরতের স্পর্শ পাই। জরজিট হেয়ের, নতুন এক লেখকের সন্ধান পেয়েছি। উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে লিখতেন আঠারশ শতাব্দীর ইংল্যান্ড নিয়ে। জেইন অস্টেন কিংবা এমিলি বন্টের লেখায় তৎকালীন সমাজের সব সত্য উঠে আসে না। নারী লেখক ছিলেন তাঁরা।
লেখকেরা কিছু নিয়ম ভঙ্গ করে, কিন্তু তবু, তখনকার সমাজের পুরুষদের মদাসক্তি, জুয়া এবং আরও অসংখ্য ব্যাপার যা আইন ফাঁকি দিয়ে চলতো, সমাজের উঁচু তলার প্রতিটা পুরুষ এগুলোতে জড়িয়ে থাকতেন, সেসব নিয়ে নারী লেখকেরা কখনও কিছু লিখতেন না। ওদের লেখা পড়ে তখনকার সমাজের পূর্ণ চিত্র পাওয়া তাই অসম্ভব। জরজিট হেয়ের অনেক পরে, তখনকার বাস্তবতাকে কলমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, প্রচেষ্টাটা অনেকটা সুনীলের পূর্ব পশ্চিম, রানু ও ভানু, প্রথম আলো ওগুলোর মত ঐতিহাসিক উপন্যাসের স্টাইলে মনে হয়েছে। ভীষণ ভালো লেগেছে। সুনীলের সবগুলো ঐতিহাসিক উপন্যাস আমি পড়েছি ক্লাস নাইনে (কি পাগলাটে সময় যে ছিল!), এখন ভালো লাগাটা নতুন করে ফিরে পাচ্ছি।
আরেকটা বোধ খুব তীব্র করে ফিরে আসছে। পৃথিবীর প্রতিটা দেশে মানুষের চেহারা একদম এক!
ঘুরাঘুরি, উড়াউড়ি
ঘুরে বেড়াচ্ছি। বন্ধুদের সাথে। বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে রাতে রেখে দিচ্ছি। বন্ধুদের বাসায় গিয়ে থাকছি।
প্রচুর দাওয়াতের আদান প্রদান চলছে। ঘুরে বেড়াচ্ছি, বাসার সবার সাথে। সেদিন মাত্র আসলাম কিয়ামার ওদিক থেকে, প্ল্যান করছিলাম মেলবোর্নে যাব। কিন্তু, যে কয়দিনে যেতে চাচ্ছিলাম, সে কয়দিন ওদিকে ৪০ ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা থাকবে! এত তাপমাত্রায় যাওয়া মানে জেনে শুনে জাহান্নামের দরজায় বসে থাকে। কিন্তু না যাওয়া মানে... যাওয়ার আর সময় কই? সিদ্ধান্ত নিতে বাসায় একটা গোপন ব্যালটে ভোট হলো।
দুইটা টিক, দুইটা ক্রস, আর একটা টিক ক্রস আসলো। ড্র হলো ভোট। সবাই জানত কে কি ভোট দিবে, কিন্তু গিয়ে ভোগা অথবা না গিয়ে পস্তানো, কোনটার দায়-ই কেউ নিজ ঘাড়ে নিতে চায় না! তাই যার ভোটে সিদ্ধান্ত হতো, সে টিক ক্রস দুইটাই এঁকে দিয়েছে। ভোট বাতিল করতে হলো! শেষ মেশ তুমুল হাসাহাসি তক্ক বিতক্কের পরে সিদ্ধান্ত হলো, আপাতত মেলবোর্ন যাওয়া হবে না। কিন্তু সিডনীর আশে পাশেই আমরা ঘুরে বেড়াবো।
কারও কাছে সিডনীর খুব সৌন্দর্য কোন কোস্টাল রিজনের সন্ধান থাকলে, জানিয়ে যাবেন প্লীজ! যেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকা যায় সেখানে। চার দিনের জন্য চারটা জায়গার নাম দরকার আমার। আমার রক্তে মনে হয় যাযাবর রক্ত আছে, ঘুরাঘুরির জন্য খুব প্রান ছটফট করে!
মেয়েলী কাজ
সেলাই করছি। দুইটা কামিজ আর আরও কিছু হাবিজাবি বানিয়ে ফেলেছি। আরও কিছু হাবিজাবি বানানোর তালে আছি।
বানাচ্ছি, আর ভাবছি, সেলাই জিনিসটা আমাদের সমাজে বড়ই অবহেলিত। 'মেয়েলী কাজ' তাই নিশ্চয় সহজ হবে! অথচ, এতে এত্ত হিসাব নিকাশ, কমন সেন্স আর ধৈর্যের ব্যাপার, ক্রিয়েটিভিটির ব্যাপার, প্রিসিশনের ব্যাপার... এক এক জন নানী দাদী, চাচী খালারা রীতিমত ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। কেউ বুঝল না!
"নেট=দি গ্রেইট এস্কেইপ"
সেমিস্টারের মাঝখানে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আরও দুইটা ব্রাউজারে সব সময় জিমেইল আর ব্লগ খোলা থাকত। এখন ছুটি অথচ, কম্পিউটারের ধারে কাছে আসছি না, তাই সব মিলিয়ে অনেকগুলো ইলেকট্রিসিটি আর গাছগাছালি বেঁচে যাচ্ছে মনে হয়! নতুন করে বোধ হচ্ছে--ইন্টারনেট না থাকলে মানুষের কাজ করার সময় দশগুণ বেড়ে যেত! কোথাও পালিয়ে যাওয়ার দরকার হলে আগে নেটের জানালায় উঁকি দিতাম। এখন পালানোর প্রয়োজন পড়ছে না!
এবং বই...
এবং অবশ্যই বই পড়ছি! দুপুরে হাতে বই নিয়ে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ লেগে আসে... ওই যে, অক্ষরগুলো আস্তে আস্তে কেমন জড়িয়ে আসে, চোখগুলো ভারি হয়ে আসে।
শুধু মনে হয়, আরেকটু পড়ে তারপরে ঘুমাবো। কিন্তু শরীর জুড়ে এত আলিস্য এসে ভর করে যে এক সময় হাতের বইটা খসে পড়ে... কিছু বুঝার আগেই স্বপ্নরাজ্যে উধাও। স্টাইল নিয়ে ঘুমানোর এই বিলাসিতাটুকু ভুলতে বসেছিলাম। কিংবা সারারাত বই পড়ে একবারে ফজর পড়ে ঘুমানো! ফাঁকিবাজির অপরাধবোধ ছাড়া, এতটা বেহিসেবী বই পড়ি নি কতদিন! ছুটি, ভালোই যাচ্ছে কেটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।