আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ বিতর্কের অবসান: 'আল্লাহ্ দেখতে কেমন'

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

'আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলা দেখতে কেমন' -এ তথ্য তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও জানাননি। অথচ নবী এমন স্থানে গিয়েও তাঁর সাথে কথা বলেছেন, (মি'রাজের রাতে, সপ্তাকাশেরও উপরে) যেখানে যাবার অনুমতি ফিরিশ্তাদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফিরিশ্তা জিবরীল আলাইহিস্ সালামের পর্যন্ত নেই। নবী মূসা আআইহিস্ সালামের জাতি দেখতে চাওয়ায় তিনি আল্লাহকে বলেছিলেন: ((‘হে আমার রব! আমাকে দর্শন দান করুন, আমি আপনাকে দেখব’। তিনি বললেন, ‘আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না । আপনি বরং পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে দেখুন , সেটা যদি নিজের জায়গায় স্থির থাকে তবে আপনি আমাকে দেখতে পাবেন।

’ যখন তাঁর রব পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন । )) [সূরা আল-আ'রাফ: ১৪৩] আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলির মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলিটি রেখে ইঙ্গিত করেছেন যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলার এতটুকু অংশই শুধু প্রকাশ করা হয়েছিল, যাতে পাহাড় পর্যন্ত ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল। অবশ্য এতে গোটা পাহাড়ই যে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে হবে তা অপরিহার্য নয়; বরং পাহাড়ের যে অংশে আল্লাহ্‌র তাজাল্লী বিচ্ছুরিত হয়েছিল, সে অংশটিই হয়ত প্রভাবিত হয়ে থাকবে। [আহমাদঃ ৩/১২৫, তিরমিযীঃ ৩০৭৪, হাকেমঃ ২/৩২০] আয়াতে ও আয়াত সম্পর্কিত হাদীসে পরিস্কার হলো যে, আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলাকে পৃথিবীর জন্য সৃষ্ট মানব চক্ষু কখনোই দেখতে পাবে না, তার আগেই এই চক্ষু ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমনটি নবী মূসা আলাইহিস্ সালাম ও বনী ইসরাঈলের লোকরা উপলব্ধি করেছিলেন।

হাদীসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে পারবে না। ’ [মুসলিমঃ ২৯৩১, আবু দাউদঃ ৪৩২০, ইবনে মাজাহঃ ৪০৭৭] অতএব, আল্লাহ্ নিরাকার নন; বরং তিনি বহুবার বহু জায়গায় বাণী নাযিল করেছেন, যে কথাগুলো তাঁর হাতের সাথে সম্পৃক্ততা রাখে, তাঁর দৃষ্টির সাথে, তাঁর শ্রবণের সাথে সম্পর্ক রাখে। অথচ, সেগুলো দেখতে কেমন, তা তিনি আমাদেরকে জানাননি। কেননা, এসব জানাটা তিনি আমাদের জন্য প্রয়োজন মনে করেননি। তাছাড়া, আল্লাহ্ চেয়েছেন আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবো তাঁকে না দেখেই।

আর কোন দৃশ্যমান বিষয়ে ঈমান আনা বা বিশ্বাস করার ব্যাপার বাকী থাকে না। তাই তিনি তাঁর নিজ সত্তা সহ আরো অনেক ব্যাপারকেই মানব দৃষ্টি ও জ্ঞানের আড়ালে রেখেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য; যার ভাল ও মন্দ ফলাফল-প্রতিদান তিনি মৃত্যুর পর অবশ্যই সকলকে প্রদান করবেন। অনেকেই মনে মনে আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলার চেহারা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কল্পনা করার চেষ্টা করে-বলা বাহুল্য যে, এসব অতিরঞ্জন দুষ্ট কল্পনা থেকেই স্রষ্টার মূর্তি তৈরী কিংবা মূর্তিকে স্রষ্টা বিবেচনা নির্ধারিত হয়-যা তাওহীদে বিশ্বাসীদের জন্য মহাক্ষতির তোরণ হিসেবে বিবেচ্য। মূলতঃ আল্লাহ্ যা জানাননি, তা নিয়ে কোনরূপ বাড়াবাড়ি জানার চেষ্টা করাটাই অনুচিত। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য তিনি তাঁর বাণীতে বলে দিয়েছেন, বলেননি যা অপ্রয়োজনীয়।

তাহলে আল্লাহকে মানুষ দেখবে কখন? মৃত্যুর পর? না কি জান্নাতে? উত্তর হলো- জান্নাতে এবং কেবলমাত্র জান্নাতীরাই এই মহা সৌভাগ্য অর্জন করবেন। (আল্লাহ্ আমাদেরকে আপনাকে দেখার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন) মৃত্যুর পরেও নয়, এমনকি জাহান্নামীরাও দেখতে পাবেনা আর পৃথিবীর পার্থিব দৃষ্টির পক্ষে তো তাঁকে দেখা অসম্ভবই। এ সম্পর্কে সুহাইব রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ((জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন মহান আল্লাহ্ বলবেন: "তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বৃদ্ধি করি?" তারা বলবে: আপনি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেননি? অতঃপর তিনি পর্দা সরিয়ে দিবেন। তাদেরকে যেসব নেয়ামত প্রদান করা হবে, সেসবের মধ্যে তাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় নে'আমত হবে তাদের রব-এর দীদার বা দর্শন লাভ।

)) [মুসলিম: 181] পরিশেষে, আল্লাহ্ দেখতে কেমন, তাঁর লিঙ্গ কি, তিনি স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করেছেন কি না –ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের কনসেপ্ট অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। মুসলিমদের জন্য এসব জানাটা তো অপরিহার্যই, অমুসলিমরাও এসম্পর্কে জানার জন্য সরাসরি কুরআন-হাদীসের আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ রইল। মনে রাখবেন, আল্লাহর বাণী আল-কুরআন এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ্ হাদীস আপনাকে কখনোই নিরাশ করবে না; বরং এ দু'টো থেকে নে'আমত অর্জন করতে সক্ষম হলে পৃথিবীর আর সব নে'আমত আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হবে। -18.12.2007, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।