আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা দিন দিন খুনী হয়ে যাচ্ছি...

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

একজন মানুষের ভিতরেরও একজন মানুষ থাকে। আমরা শুধু বাইরের খোলসটাকেই দেখি। দুধ ডিম খাইয়ে বড় করি। ক্রীম, রূপটান মেখে ঝলমলে করি।

বাহারী কাপড়ে সাজিয়ে রাখি। সুগন্ধীতে মোহময় করে রাখি। কিন্তু এ তো আসলে কেবলই খোলস। না হলে কি কখনও মৃত মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে ঘরে ফিরে নিজেস্ব জীবনে ফিরতে পারতাম আমরা? আগুনে ঘি ঢেলে প্রিয় মানুষটার শরীর পুড়াতে পারতাম গন্ধ থেকে বাঁচতে? ল্যাবরেটরিতে কেমিকেলে চুবিয়ে কাটা কাটি করতে পারতাম সে খোলস? মৃত্যু কি বুঝার পর থেকেই আমরা জানি বাইরের দেহটা কেবল খোলস। ভিতরের সত্ত্বাটুকুই আসল।

অথচ, সেই সত্ত্বাটাকে চোখে দেখা যায় না সহজে। কারও খুব কাছে গেলে, তখন দেখা যায়। চোখের গভীরে চোখ রেখে দেখা যায়। কাউকে অনুভব করতে পারলে দেখা যায়। কারও জীবনে ঢুকে গেলে একটু একটু বুঝা যায়।

সে সত্ত্বার বড় হতেও পুষ্টি লাগে, আদর লাগে, যত্ন লাগে। অথচ, কি বিভ্রমে, আমরা কেবল বাইরের শরীরটাকে খাইয়ে, পড়িয়ে যাই। ভিতরের সত্ত্বাটুকু অভুক্ত রাখি। আবর্জনা, অখাদ্য খাইয়ে ছাড়ি। ভিতরের আমিত্বের বেড়ে উঠায় আশে পাশের মানুষগুলোর ভূমিকা অনেক।

বাইরের সত্ত্বাটাকে ধরে, বেঁধে, বন্দী করে রাখলে কি তা বাড়তে পারে? চাইনীজ মেয়েদের পা এভাবেই অষ্টে পিষ্টে বেঁধে রাখা হতো। ফলাফল কি হতো? হাড় বাঁকা হয়ে, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেত। ওরা পালকিতে চড়ে বেড়াতো। বাড়তে 'বাঁধা' দিলে এমনই হয়। ভিতরের সত্ত্বাটাকে বাড়তে দিতে হয়।

বাড়ার জন্য জায়গা দিতে হয়। সময় দিতে হয়। সুযোগ দিতে হয়। পুষ্টি আর আদর দিতে হয়। আমাদের সমাজ তা দেয় কই? প্রতিটা মানুষের কত কত বাঁধা।

পয়সা নেই বিধায় বই কেনায় বাঁধা। মধ্যবিত্তের সন্তান তাই নিজে খেঁটে অন্যের মুখে অন্ন তোলার চিন্তা বিলাসিতা। নিজেদের সীমাবদ্ধতার বাঁধা তো আছেই। নিরাশা, হতাশা সব কিছুতে ডুবে থাকতে থাকতে আমরা বড় তিতকুটে হয়ে যাই। আমাদের দিন দিন ক্ষুদ্র হতে থাকা অন্ত:করীনে আমরা শুধুই 'বাঁধা' দিতে শিখি।

নিজেরা বাড়তে পারি না, তাই অন্যকেও বাড়তে দিতে চাই না। "আরোপিত বাঁধা" দিয়ে চলি। চাইনীজ মেয়েদের মত আঁকাবাঁকা হাড্ডির পঙ্গু পা সৃষ্টিতে ব্যস্ত থাকি, সকাল বিকাল। ব্লগ দেখে প্রথমে স্বপ্ন দেখেছিলাম। সত্যি জীবনের অনেক অনেক বাঁধা, সীমাবদ্ধতা।

আমরা যতটুকু বাড়ার স্বপ্ন দেখি, ততটুকু বাড়তে পারি না। ভেবেছিলাম, ব্লগ, হয়তো বড় করে দিবে। কিন্তু হায়, এখানেও আরেক সমাজ হয়ে গিয়েছে, যেখানে অষ্টে পিষ্টে বেঁধে ফেলার, সামান্য বাড়তেই ছেঁটে ফেলার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ মানুষটাকে বুঝার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা নেই। এসবে কি লাভ হয়? আমরা কি বুঝতে পারি না, আমরা বাইরের খোলসকে খুন করছি না ঠিকই, কিন্তু প্রতিনিয়ত একজন মানুষের আসল সত্ত্বাকে রক্তাক্ত করছি, ক্ষত বিক্ষত করছি, সব সময়ের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছি।

নিহত করছি। পাপী যে আমরা খোলস খুনীর চেয়েও বেশি! একটা মানুষকে নিজেস্ব গতিতে বড় হতে দিলে সমাজে আরেকজন পরিপূর্ণ মানুষ বাড়তো হয়তো। একজন মানুষের মনে লোহার শিকল পড়িয়ে দিলে, মনটাকে খুন করলে, "আমাদের সমাজেই" যে আরেকজন পঙ্গু মানুষ বাড়বে! মৃত অন্ত:করনের হেঁটে বেড়ানো মৃত মানুষ বাড়বে! আমরা পড়ালেখা শিখা মানুষেরা এতটা অবুঝ হলে চলবে? ------------------------------ ছবি: অষ্টে পৃষ্টে বাঁধা চাইনীজ মেয়েদের পা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।