‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড আ ফরগটেন জেনোসাইড’ শিরোনামের এই বইয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার নানা দিক তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক গ্যারি ব্যাস।
তিনি লিখেছেন, ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়ায় নিক্সন চীনকেও ভারতীয় সীমান্তে সেনা পাঠাতে উৎসাহ দিয়েছিলেন।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা এ বই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জিনিউজ অনলাইন।
এতে বলা হয়েছে, আগে অপ্রকাশিত হোয়াইট হাউজের বিভিন্ন অডিও টেপের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্সন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকার ওপর নতুন করে আলো ফেলেছেন ব্যাস।
মুক্তিকামী বাঙালির পাশে দাঁড়ানোয় ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি ওয়াশিংটনের ‘বিদ্বেষ’ এবং নিজেদের আইন ও জনগণের মতের তোয়াক্কা না করে পাকিস্তানের পক্ষে নিয়ে নিক্সন সরকার কীভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংসতাকে সমর্থন যুগিয়েছিলেন তারও বিস্তারিত এসেছে ব্লাড টেলিগ্রামে।
গ্যারি ব্যাস লিখেছেন, নিক্সন ও কিসিঞ্জার ভারত ও তার নেতা ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অবৈধভাবে অস্ত্র সরবরাহ করেন।
কোনো কর্মকর্তা তাদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলে তাদের বাদ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পাঁচশ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বলা হয়, ইন্দিরা গান্ধীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভারত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে নিরপরাধ বাঙালিকে রক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। এর প্রেক্ষিতে কিসিঞ্জার ভারতের বিরুদ্ধে তিনটি ‘বিপজ্জনক পদক্ষেপের’ প্রস্তাব করেন।
অবৈধভাবে পাকিস্তানে মার্কিন বিমানের কয়েকটি স্কোয়াড্রন পাঠানোর অনুমতি দেয়া, গোপনে চীনকে ভারত সীমান্তে সেনা মোতায়েন করতে বলা এবং ভারতকে ভয় দেখাতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর কথা বলা হয় এসব প্রস্তাবে।
নিক্সনকে উদ্ধৃত করে বইটিতে লেখা হয়েছে, “চীন সহায়তা না করলে আমরা এটা করতে পারব না। আমি মনে করি, চীন সীমান্তে নড়াচড়া দিলে ভারত সামান্য হলেও ভয় পাবে। ”
পরে নিক্সনের গোপন পরিকল্পনা সম্পর্কে চীনকে জানাতে সম্মত হন কিসিঞ্জার। ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটালে বেইজিংয়ের কী লাভ হবে তাও চীনকে বলেন তিনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবে চীন সে সময় ভারত সীমান্তে সেনা মোতায়েনের আগ্রহ দেখায়নি বলেও লিখেছেন
ব্যাস।
পাকিস্তানে গোপনে যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে কিসিঞ্জার নিক্সনকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে তারা দেশের আইনকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জনমত ও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ইতিহাসবিদ ব্যাস বলেছেন, পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য নিক্সন ও কিসিঞ্জার জেনেশুনেই যুক্তরাষ্ট্রের আইন লংঘন করেন। জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, এইচ আর হ্যাল্ডম্যান, আলেক্সান্ডার হেইগসহ অন্যরাও এ বিষয়ে অবগত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মার্চে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের তৃতীয় কোনো দেশ থেকে’ অস্ত্র আসার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো বাধা না দেয়।
এ পরিস্থিতিতে কিসিঞ্জার নিক্সনকে বলেন, যুদ্ধ চলতে থাকলে ইরানের মাধ্যমে সহায়তা পাঠাতে হবে।
“তখন প্রশান্তির শ্বাস ফেলে নিক্সন বলেন, যাক, পাকিস্তান অন্তত পঙ্গু হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে”, লিখেছেন ব্যাস।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ইরানের শাহ সে সময় পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে রাজি হন বলেও বলা হয়েছে তার বইয়ে।
এদিকে ইয়াহিয়ার অনুরোধে সাড়া দিয়ে জর্ডানের রাজা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আট থেকে দশটি জঙ্গি বিমান পাকিস্তানে পাঠানোর উদ্যোগ নিলেও পরে আম্মানে যুক্তরাষ্ট্রর দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে নিরস্ত হন।
এজন্য ওই কর্মকর্তাদের প্রতি নাখোশ হন কিসিঞ্জার।
ব্যাস লিখেছেন, পাকিস্তানকে সমরাস্ত্র যোগানো যুক্তরাষ্ট্রের আইনের লংঘন বলে নিক্সন ও কিসিঞ্জারকে একাধিকবার সতর্ক করেন পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা দুজনই এ ব্যাপারে অনড় ছিলেন।
এ বিষয়ে কিসিঞ্জার বলেন, “আমেরিকার কোনো মিত্র যখন ঘায়েল হচ্ছে, তখন তাদের রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, যেখানে অন্যপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে?”
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।