আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭ই নভেম্বর ২০০৪

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~

৪ তারিখে সিলেটে গিয়েছিলাম। হজরত শাহজালালের (রহঃ) মাজার জিয়ারত করতে। খুব সকালে ট্রেনে উঠেছিলাম, বিকেলে পৌছে সে দিনই জিয়ারত শেষ করে রাতেই ঢাকার ট্রেন ধরেছি। শেষ রাতে ঢাকায় এসে সোজা চলে যাই হাসপাতালে। তিথীর আব্বা ছিলেন সেইখানে।

স্ট্রোকের রোগী। উনাকে দেখে বাসায় এসে গোসল করে আবার বেরিয়ে যাই আর কিছু কাজকর্মের জন্য। সন্ধায় ফিরে ইফতার করে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে একটু বসি। ছেলে আমার কি বুঝে যেন আমার শার্টের পকেট খামচে ধরে রাখে। মনে মনে বলি, পাপারে - জানিনা কতদিন আর দেখতে পাবোনা তোকে।

৬ তারিখ খুব সকালে সিরাজগঞ্জ যাই, সন্ধায় ফিরে আসি। আবার হাসপাতাল হয়ে শশুর সাহেবের ঔষধপত্র কিনে দিয়ে বাসায় ফিরি অনেক রাতে। বাবু ঘুমিয়ে ছিল। আমার ঘরে ফেরার শব্দে জেগে যায়। ঘন্টা দু'এক আমার সাথে খেলা করে ঘুমিয়ে পড়ে।

তিথীর সাথে প্রয়োজনীয় কিছু কথা সেরে আমিও ঘুমিয়ে যাই। ৭ তারিখ সকালে একটু দেরি করে উঠি ঘুম থেকে। খুব বেশি ক্লান্ত ছিলাম, সে জন্য। বাবুই আমার ঘুম ভাঙ্গায়। ছোট্ট দুই হাতে আকড়ে ধরে থাকে আমাকে।

গত চার মাসে কখনই এমন করেনি সে। বুকের সাথে জাপটে ধরে রাখি আমার সন্তানকে। মা কেঁদে ফেলেন এই দৃশ্ব দেখে, বলেন "বাবা চলে যাবে বুঝতে পেরেছে আদিত্য। তাই এমন করছে"। কেমন করে যেন শেষ হয়ে যায় দিনটা।

হঠাৎ করে দেখি সন্ধে হয়ে গেছে। দুপুরেই সবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে এসেছিলাম। সারাটা দিন বাবু আমার কোল থেকে নামেনি একবারও। আমার কোলেই ঘুমিয়েছে, খেয়েছে। ইফতারের পর সুটকেস তালাবদ্ধ করি, গুছিয়ে নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, টিকেট।

রাত ৯ টার দিকে তৈরী হয়ে যাই। বাবুকে কোলে নিয়ে আর কান্না চেপে রাখতে পারিনা, কি বুঝে যেন কান্না করে ওঠে বাবুও, সে কান্নায় যোগ দেয় তিথী। ১০টার দিকে বেড়িয়ে পরি, আমি, বাবু, তিথী, বাবা - মা, ভাবী আর মামি। এয়ারপোর্টে চেকইন করে বেড়িয়ে পড়ি, সবার কাছ থেকে বিদায় নেই, বাবুকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে যাই। আব্বু আর তিথী আসে সাথে।

একটু পরেই প্লেনে ওঠার এনাউন্সমেন্ট হয়। বাবুকে অনেক গুলো চুমু দিয়ে আব্বুর কোলে দিয়ে দেই বাবুকে, যেতে চায়না সে, কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, ছোট্ট দু'হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে আসবে বলে। বুকের মদ্ধে কেমন যেন করে, প্রকাশ করতে পারিনা। সিঙ্গাপুর পৌছে বাসায় ফোন করি, কথা বলি সবার সাথে। কিছুক্ষন পর উঠে বসি অন্য একটা প্লেনে।

প্রায় ৯ ঘন্টার টানা যাত্রায় ঘুমাতে পারিনা এক মুহুর্ত। সিডনীর সময় রাত ৮ টার দিকে পৌছাই সিডনী এয়ারপোর্টে। সে দিন ছিলো ৭ই নভেম্বর ২০০৪। আমার সিডনী আগমন দিবস।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।