আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই পড়ো, জরিমানা মাফ হয়ে যাবে



বই পড়ো, জরিমানা মাফ হয়ে যাবে ফকির ইলিয়াস ------------------------------- বই পড়া মানুষের মনন সমৃদ্ধ করে। এই চেতনায় আমেরিকায় প্রতি গ্রীষ্মকালে হাতে নেয়া হয় নানা প্রোগ্রাম। ২১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গ্রীষ্মকাল। গাছে গাছে তখন সবুজের সমারোহ। ফুলে ফুলে ভরে উঠতে শুরু করে রাস্তার কিনার, হাইওয়ে সড়ক কিংবা সাজানো বাগানগুলো।

‘আমেরিকার সামার’ এনজয় করতে লাখো পর্যটক ছুটে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। নাইন ইলেভেনের পর কিছুটা থমকে গেলেও এখন আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে পর্যটন বাণিজ্য। শঙ্কা, সংকট এগুলো তো থাকবেই। ‘ইট ইজ পার্ট অফ দ্য লাইফ, নাউ ইন এ ডেজ’- এমন একটা মানসিকতা ইতিমধ্যে তৈরি হতে শুরু করেছে মার্কিনিদের মাঝে। গ্রীষ্মকালকে ‘নলেজ সিজন’ বলেও বিবেচনা করে মার্কিনিরা।

কারণ এ সময় তারা জ্ঞান আহরণে স্খানে-স্থানে তারা ঘুরে বেড়ায়। স্কুলগুলোতে শুরু হয় স্পেশাল ‘সামার রিডিং প্রোগ্রাম। ’ বিভিন্ন বড়ো বড়ো সংস্খা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এসব রিডিং প্রোগ্রামগুলো স্পন্সর করে থাকে। পাবলিক লাইব্রেরিগুলো চালু করে সামার রিডিং ক্যাম্প। আয়োজিত হয় নানা প্রতিযোগিতা।

পড়াশুনায় কৃতিত্ব দেখাতে পারলে গ্র্যান্ট কিংবা বৃত্তি দেওয়ার প্রথা বড়ো বড়ো শিল্প-বাণিজ্য সংস্খাগুলো চালু রেখেছে প্রায় প্রতি বছরই। কোনো কোম্পানিতে কর্মরত কিংবা তাদের সন্তান-সন্ততিরা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে, মেধানুসারে এসব বৃত্তি পেয়ে থাকে। শিক্ষার আলো বিসতারে এই যে মহান প্রচেষ্টা একটি জাতি গঠনে তা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে কিংবা রেখে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক লাইব্রেরিগুলোর কালেকশন, কাস্টমার সার্ভিস এবং জ্ঞান প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না। বিশ্বের সব ভাষার গ্রন্থাদির বিশাল কালেকশন রয়েছে এসব লাইব্রেরিতে।

প্রয়োজনীয় কোনো বই না পাওয়া গেলে তারা আনিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে যে কোনো ভাষার বই দান করা যায়। এ দান তারা খুবই কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একবার আমি বাংলাদেশ থেকে আসার সময় বেশ কিছু বই নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নিয়ে এসেছিলাম। ফিফথ এভিন্যুর ম্যানহাটার্ন পাবলিক লাইব্রেরির তৎকালীন লাইব্রেরিয়ান মিস জেনি গ্রাহামকে আমি আমার আগ্রহের কথা জানালে তিনি খুব খুশি হয়ে বইগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ধার্য করে দেন।

নির্দিষ্ট দিনে আমি উপস্খিত হয়ে দেখি সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বেশকিছু পদস্খ কর্মকর্তাও উপস্খিত রয়েছেন। অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবেই বইগুলো আমি তুলে দেই। বিনিময়ে আমাকে একগুচ্ছ ড্যাফোডিল ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। সেদিনের অনুষ্ঠানে লাইব্রেরির ডিরেক্টর মি. ম্যাথিও রবার্টস আমার কাজের প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছিলেন, আমরা যেন বই উপহার, বই পড়া এবং বই বিনিময়ের কালচারটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাìতরে ছড়িয়ে দিতে পারি। মি. ম্যাথিও বলেছিলেন যদি প্রতিটি অভিবাসী আমেরিকান তাদের নিজ নিজ শিকড়-সভ্যতার সমৃদ্ধ গ্রন্থগুলো নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি তথা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরিতে দান করেন তবে এই মাল্টি-কালচারাল দেশটি আরো সমৃদ্ধ হবে।

তিনি আমাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তুমি তোমার বন্ধুদেরকে বলো, তারা যেন একবার স্বদেশ থেকে আসার সময় অìতত একটি বই লাইব্রেরির জন্য নিয়ে আসেন। তার বক্তব্যে আমি খুবই আপ­ুত হয়েছিলাম সেদিন। মূলধারার বাংলা বই প্রদানের সংস্কৃতিটি বেশ কিছু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালি ইতিমধ্যে চালু করেছেন। বস্টনে আমাদের বন্ধু কবি বদিউজ্জামান নাসিমসহ আরো ক’জন বেশ কিছু বাংলা বই সংগ্রহ করে বস্টন পাবলিক লাইব্রেরিতে দিয়েছেন। তারা ‘ভিন গোলার্ধ’ নামে একটি সৃজনশীল সংগঠনও গড়ে তুলেছেন নিজেদের মাঝে।

বই পারে হাজার বছর পরও একজন মানুষের চিন্তাচেতনা, কীর্তিকলাপকে বাঁচিয়ে রাখতে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশও বলেছেন, অবসর নিয়ে তিনি একটি বই লিখবেন। সেই বইটিতে অনেক কথাই বলবেন তিনি। বুশ কি তার লিখিতব্য গ্রন্থে তার শাসনের আট বছরের অনেক নেপথ্য কথা বিশ্ববাসীকে জানাবেন? তা জানার আগ্রহ বিশ্ববাসীর থেকে যাচ্ছে। কিংবা ধরা যাক বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের কথা।

সম্প্রতি তিনিও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন অবসরে গিয়ে তিনিও ‘শান্তির পথে’ নামের একটি বই লিখবেন। একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে সবিনয়ে অনুরোধ করি, মাননীয় সেনাপ্রধান কি তার ওই ঐতিহাসিক গ্রন্থে ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী অবস্খা সরকারকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতার প্রেক্ষাপটসহ যুগসন্ধিক্ষণের মুহূর্তের জবানবন্দি তুলে ধরবেন? বাংলাদেশের অগ্রসরমান ইতিহাসের জন্য তার গ্রন্থনা খুবই দরকারি। কারণ দুর্নীতি দমনে, গডফাদার তন্ত্রের স্তম্ভ উৎপাটনে এই ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সরকার ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আবার রিডিং প্রোগ্রাম বিষয়ে ফিরে আসি। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি একটি নতুন শ্লোগান সংযোজন করেছে।

‘বই পড়ো, জরিমানা মাফ হয়ে যাবে। ’ যারা লাইব্রেরি থেকে বই ধার নেন, তারা সময়মতো ফেরত দিতে না পারলে নির্দিষ্ট পরিমাণে জরিমানা দিতে হয়। প্রতিদিন দেরির জন্য জরিমানা হিসাব করা হয়। এ বছর পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে সাইন ঝুলছে প্রতি আধা ঘন্টা বই পড়ার জন্য পঞ্চাশ সেন্ট (অর্ধেক ডলার) করে রেয়ায়েত দেওয়া হবে। বুক সাইন করে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তে হবে।

এভাবে পড়ে পড়ে যে কেউ তার সব অতীত জরিমানা মোচন করে নিতে পারেন। আর বই ই দিতে পারে আলোর পথদিশা। পাঠক তৈরিতে কী চমৎকার ব্যবস্খা, বইপাঠ করেই একটি জেনারেশন জানতে পারে তার মৌলিক বিবর্তনের কথা। মানুষ তো সৃজনশীল বিবর্তনেরই পূজারী। সামগ্রিকভাবে যা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।